রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এবার পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার রাতে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের এসআই আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জি জানান।
তিনি বলেন, মামলায় অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বক্স ও মোটরসাইকেলে আগুন এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেন।
রোববার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে সে বিষয়ে উপাচার্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে স্থানীয় মতিহার থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছে।
মামলায় তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান।
বাস যাত্রী এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ভাড়া ও সিটে বসা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। পুলিশের একটিসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সংঘর্ষের সময় ইট-পাটকেল, কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাতে প্রায় দুশ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে ভোর পর্যন্ত দেড়শজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে ৯২ জনকে ভর্তি করা হয়। একজন আইসিইউতে আছেন।
এর ঘটনার জেরে রোববার দিনভর বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। সোমবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশেপাশের এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মহাসড়ক দিয়ে বাস-ট্রাকসহ বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
উপ-পুলিশ কমিশনার বিভূতি ভূষণ বলেন, “ছাত্রদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। তারা যদি আন্দোলনে না নামে তা হলে রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। তবে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে আছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনা তদন্তে উপ উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- সাবেক প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান এবং সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান।
প্রক্টর বলেন, “আহত ছাত্রদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তারা যে সব দাবি দিয়েছে তা পালনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আর আন্দোলনে হওয়ার কথা নয়।”
পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: