“গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয় যেন তাকে কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
Published : 08 Sep 2024, 12:33 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার অভিযোগে রাজশাহীতে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে থানায় সোপর্দ করার পর হাসপাতালে মারা গেছেন।
শনিবার রাতে বিনোদপুর বাজারে তার ওপর হামলা হয় বলে জানিয়েছেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ।
নিহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।
নগরীর মতিহার থানার বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ গত ৩ সেপ্টেম্বর মেয়ে সন্তানের বাবা হয়েছিলেন।
ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, “৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে শনিবার রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়।
“পরে একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ অগাস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয় যেন তাকে কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
ওসি বলেন, “গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মাসুদ। তার শারীরিক অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।”
এর আগে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্যদের হামলার শিকার হয়েছিলেন।
হামলায় মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাম পা-ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল হাতের রগ।
পা হারানো মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। শনিবার রাতের হামলায় তার অপর পাটিও ভেঙে দেওয়া হয়।
গুরুতর আহত হয়ে বোয়ালিয়া থানার হাজতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদ পুলিশকে বলেন, “আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম, ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা, ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি, ভাই।”
মাসুদকে যখন আনা হয়, তখন বোয়ালিয়া থানায় ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।
৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলাসহ এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দুই যুবককে ধরে থানায় এনেছিলেন তিনি। থানায় তিনিও মাসুদকে দেখেন।
মাসুদের মৃত্যুর খবর শুনে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, “আমরা যে দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যেই আহত অবস্থায় একজনকে আনতে দেখলাম। কিন্তু কারা তাকে এনেছিল তা চিনতে পারিনি। পুলিশের এটা ভালোভাবে দেখা উচিত ছিল।”
জানা গেছে, মাসুদ দীর্ঘ দিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন । চিঠিতে একটি চাকরির ব্যবস্থা করারও অনুরোধ করেন।
এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর মাসুদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন।
বোয়ালিয়া থানার ওসি পারভেজ বলেন, “মাসুদের পরিবার অভিযোগ জানালে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”