“একটি পক্ষ সরাসরি না এসে রিসোর্টে চাঁদা দাবি করেছিল। আমরা চাঁদা না দেওয়াতে এটি করানো হয়েছে।”
Published : 20 Jan 2025, 10:01 PM
সিলেটের মোগলাবাজারে একটি রিসোর্টে বেড়াতে যাওয়া আট তরুণ-তরুণীকে ধরে কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার আগে একটি গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষের কাছে চাঁদা দাবি করেছিলে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের একজন কর্মকর্তা ঘটনার পরদিন সোমবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি পক্ষ সরাসরি না এসে রিসোর্টে চাঁদা দাবি করেছিল। আমরা চাঁদা না দেওয়াতে এটি করানো হয়েছে। রোববার ঘটনাস্থলে তারাও উপস্থিত ছিলেল, যারা চাঁদা দাবি করেছিলেন।”
রোববার দুপুরের দিকে মোগলাবাজার থানা এলাকার রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে কিছু লোক হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা পার্কটির একটি অংশে অগ্নিসংযোগ করলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে তা নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় হামলাকারীরা ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করে। এর মধ্যে আট তরুণ-তরুণীকে কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়। বাকি আটজনকে তাদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিয়ের সময় স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর পরই কর্তৃপক্ষ রিসোর্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন।
সোমবার সন্ধ্যায় রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেলাল আহমদ বলেন, “আসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে প্রথমে রিসোর্টে ঢুকে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এতে আমাদের রিসোর্টের ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
“এ ঘটনায় মামলা করতে বর্তমানে আমি থানায় রয়েছি। তবে এলাকাবাসী ঘটনার সমাধান করতে চাচ্ছেন; দেখা যাক কী হয়। রিসোর্টটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।”
এর আগে তিনি সাংবাদিকের বলেন, “আমাদের রিসোর্টে পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়। রোববারও ছেলে-মেয়েরা আলাদাভাবে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ভোটার আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। হঠাৎ করে একদল যুবক রিসোর্টে ঢুকে ভাঙচুর-লুটপাট চালায়। তারা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগও করে।
“ম্যানেজারের রুম থেকে ছেলে-মেয়েদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ছিঁড়ে ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর তাদের আটক করে রিসোর্টের চাবি নিয়ে নেয়। পরে আটককৃতদের তারা বিয়ে দিয়েছেন বলে শুনেছি।”
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সাইফুল ইসলাম বলেন, “কেউ অপরাধ করলে পুলিশ তাকে ধরবে; আদালত বিচার করবে। কিন্তু আটক করে বিয়ে পড়ানোর কোনো আইন নেই। বর্তমানে রিসোর্টটি বন্ধ রয়েছে।”
চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল সিলেট জেলার সদস্যসচিব তাজরুল ইসলাম তাজুল বলেন, “আমি এলাকার একজন হিসেবে গিয়েছিলাম। মালিকপক্ষ আমাকে ফোন করে রিসোর্টে নিয়ে গিয়েছিলেন।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “রাজনৈতিক একটি শক্তি পুলিশ উপস্থিত থাকার পরও এই নোংরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যারা এই কাজে জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি। কারণ এই রিসোর্টে অনেকে বিনিয়োগ করেছেন। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে ভবিষ্যতে কেউ বিনিয়োগ করতে সাহস পাবেন না।”
সিলেটে রিসোর্টে ৮ ছেলেমেয়েকে আটকে কাজী ডেকে বিয়ে, অগ্নিসংযোগ