আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার পাশাপাশি একটি কারখানায় আগুন দেয় বলে জানায় পুলিশ।
Published : 22 Jan 2025, 10:34 PM
গাজীপুর সদরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। এতে সড়কে যানচলাচল বন্ধ হলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পাশাপাশি কারখানায় আগুন দেয় বলে দাবি পুলিশের।
বুধবার বেলা ৩টা থেকে শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের কাশিমপুর (মৌজার মিল) এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন বলে জানান কাশিমপুর থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুনের খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সদর উপজেলার সারাবো ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মো. তাশাররফ হোসেন।
হামলায় আহত সাংবাদিকরা হলেন- দীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, এটিএন নিউজের ক্যামেরা পারসন শাহ জালাল, বাংলাভিশনের ক্যামেরা পারসন আমির হোসেন রিয়েল এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কালিয়াকৈর উপজেলা প্রতিবেদক আবু সাঈদ। তারা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার কাশিমপুরের শ্রীপুরে সানসিটি মাঠে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ কারখানা খুলে দিতে গণসমাবেশ করেন শ্রমিকরা। সমাবেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ সব কারখানা খুলে না দিলে অবরোধসহ আমরণ অনশনের হুমকি দেন গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু।
তিনি বলেছিলেন, “সরকারের কাছে তিনটি দাবি তুলে ধরছি। দাবিগুলো হল- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ সব কারখানা খুলে দিতে হবে। এসব কারখানার কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা চলবে না এবং মাসের ৭ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে হবে।”
বুধবার বিকাল ৩টার মধ্যে বন্ধ সব কারখানা খুলে না দিলে অবরোধ, আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মিশু।
গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, আগের দিনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর থেকে সানসিটি মাঠে শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ৩টার দিকে মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে হাজার হাজার শ্রমিক সমবেত হয়।
“সেখানে শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশুর বক্তৃতার এক পর্যায়ে ঢাকা থেকে শ্রম সচিব শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এ সময় তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে মোবাইল ফোনে শ্রম সচিবের বক্তব্য শোনাতে গেলে কে বা কারা মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
“এ সময় তিনি মাইক ছাড়াই সচিবের কথাগুলো নিয়ে বক্তব্য দিতে গেলে কিছু বহিরাগত হামলা চালায়। পরে শ্রমিকরা সেখান থেকে আমাদের নিরাপদে সরে যেতে সহায়তা করেন। পরে বহিরাগতরা নবীনগর-চন্দ্রা সড়কে গিয়ে অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।”
শ্রমিকদের দাবি, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনে শ্রম সচিব বৃহস্পতিবার কারখানার চার কর্মকর্তা, ছয়জন সমন্বয়কারীসহ শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন।
কাশিমপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার দিকে সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে গ্রামীন ফেব্রিক নামের পোশাক কারখানায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে এর আগেও চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করলে দুপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৪২ হাজার শ্রমিক এক হয়ে গণসমাবেশ করেন।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টা থেকে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকেন শ্রমিকরা। এ সময় মহাসড়কে বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন তারা। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে গণপরিবহন ভাঙচুর ও সংবাদ কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু তালেব বলেন, “বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করের শ্রমিকরা। সন্ধ্যার দিকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ি-কাশিমপুর জোনের সহকারী কমিশনার মো. আবু নাসের আল আমিন বলেন, কারখানায় আগুনের খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অগ্নি নির্বাপণসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাশাররফ হোসেন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে সাভারের ইপিজেড স্টেশনের কর্মীরাও যোগ দিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে কারখানায় ড্যাম্পিংয়ের কাজ চলছে।
বেক্সিমকোর ১৬ কারখানা চালুর দাবিতে গাজীপুরে গণসমাবেশ
বেক্সিমকোর কারখানা খোলার দাবিতে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন