জিম্মিদশা থেকে মুক্তির একমাস পর স্বজনদের কাছে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক; তাদের মধ্যে নোয়াখালীর এক যুবক আছেন।
Published : 14 May 2024, 08:14 PM
ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এক নাবিকের বাড়ি ফেরার অপেক্ষা আছেন তার মা। ছেলে আসার খবরে বাড়িতে রান্না করা হয়েছে তার পছন্দের খাবার।
মঙ্গলবার বিকালে জাহাজের এবি (অ্যাবল সি ম্যান) মোহাম্মদ আনারুল হক রাজুর (২৯) মা দৌলত আরা বলেন, “বাপজানের সঙ্গে দেখা হবে এতে আমরা সবাই আনন্দিত। আমি গরু ও মুরগির গোশত, মাছ, খাইসসারা (সিমের বীচি) ও ডাল রান্না করেছি। রাতে পোলাও রান্না করব। ছেলে আমার বুকে আসবে এটাই আমাদের আনন্দ।”
মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের আজিজুল হক মাস্টার ও দৌলত আরা বেগমের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজু সবার ছোট।
আনারুল হক স্থানীয় বামনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করার পর বামনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি।
জিম্মিদশা থেকে মুক্তির একমাস পর স্বজনদের কাছে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে পৌঁছেছে এমভি জাহান মনি-৩।
সোমবার সন্ধ্যায় এমভি আবদুল্লাহ বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় নোঙ্গর করে। তবে দেশে ফিরলেও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে আরও এক দিন অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
আনারুল হকের বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, “রাজুর বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। কিন্তু সে না থাকায় আমরা ঈদ করতে পারিনি। আজ আমাদের ঈদ। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি।
“ছেলেকে ছাড়া আমরা খুব কষ্টে দিন অতিবাহিত করেছি। ছেলে নতুন পাকা ঘর করছে। এবার ছেলেকে বিয়ে করাব। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে সহিসালামতে বাড়িতে আনেন।”
আনারুল হকের বড় ভাই জিয়াউল হক রনি বলেন, “আব্বা-আম্মার বয়স হয়েছে। বাড়ি থেকে কেউ চট্টগ্রামে যায়নি। সেখানে থাকা আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে গেছেন। ভাই আসবে বাড়িতে এটাই আমাদের আনন্দ।”
ঘটনার পর থেকে আনারুল হকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জানিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, “তাদের ঘরে আজ আনন্দ বইছে।”
অতীতের মতো সবসময় যেকোনো প্রয়োজনে এ নাবিকের পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন থাকবে বলে জানান তিনি।
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করে দস্যুরা।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ৩৩ দিন পার করার পর গত ১৩ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়। এরপর দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জাহাজটি।
এমভি আবদুল্লাহ শুরুতে যায় সংযুক্ত আর আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে। সেখানে জাহাজে থাকা কয়লা খালাস করা হয়। এরপর ওই বন্দরেই পণ্য লোডের পর মিনা সাকার বন্দরে যায় আবদুল্লাহ। সেখান থেকে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে থেমেছিল জ্বালানি নিতে। এরপর দুবাই থেকে ৩০ এপ্রিল রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে জাহাজ প্রবেশের খবর আসে বৃহস্পতিবার।
জিম্মি দশার দুই মাস পর দেশে ফিরে এমভি আবদুল্লাহ এখন কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করা আছে। সোমবার রাতেই সেখানে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। জাহাজে ৫৬ হাজার টন পাথর আছে। দুই দিন পণ্য খালাসের পর আবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আসার কথা রয়েছে। সেখানে বাকি পণ্য খালাস করা হবে।
আরও পড়ুন:
অপেক্ষার অবসান, পরিবারের কাছে ফিরলেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা