Published : 02 Aug 2024, 10:29 AM
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার সময় রায়হানুল ইসলাম রায়হান স্ত্রী আর সন্তানকে কথা দিয়েছিলেন, পরেরবার তাদেরও ঢাকায় নিয়ে যাবেন।
কিন্তু গুলিতে প্রাণ হারিয়ে সে কথা তো আর রাখতেই পারেননি রায়হান; বরং তিনিই চিরদিনের মত বাড়ি ফিরেছেন। গ্রামের কবরস্থানে হয়েছে তার শেষ ঠিকানা।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পৌর শহরের মুন্সিপাড়ার আব্দুর রশিদের একমাত্র সন্তান ছিলেন রায়হান। ঢাকায় ‘স্ট্রোক অ্যান্ড সিকিউরিটি’ নামের একটি কোম্পানিতে সহকারী ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
রায়হানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পেশায় ক্ষদ্র ব্যবসায়ী তার বাবা বাকরুদ্ধ প্রায়। পাশে শোকে পাথর হয়ে বসে আছেন মা। আর চার মাসের মেয়ে সন্তানকে কোলে নিয়ে অনবরত চোখের পানি ফেলছেন স্ত্রী রিতু আক্তার।
ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ার জন্য আকাশের পানে হাত তোলেন আব্দুর রশিদ। দোয়া শেষ করে ধীরে ধীরে বলেন, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়িতে এসে স্ত্রী-সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গেছিল রায়হান। কিন্তু সেটা আর হলো না।
তিনি বলেন, “আমি বাকরুদ্ধ। রায়হানের চার মাস বয়সী একটা মেয়ে আছে। একদিক দিয়ে তার স্ত্রী স্বামী হারা হলো, সন্তান বাবা হারা আর আমি ছেলে হারা হলাম। এখন সরকারের কাছে আমার ছেলের হত্যাকারীর কঠোর বিচার দাবি করি।”
রশিদ যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন রিতুর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে আশেপাশের পরিবেশ। মেয়েকে কোলে আগলে রেখেই স্বামীর হত্যার বিচার চান তিনি। তার সঙ্গে সঙ্গে বিচারের দাবি করেন প্রতিবেশী আর স্বজনরাও।
আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রিতু বলছিলেন, ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় জুম্মার নামাজ পড়তে বেরিয়েছিলেন তার স্বামী। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে বাসায় ফিরছিল তিনি। পথে যানজটে বসে থাকা অবস্থায় সংঘর্ষের মাঝে পড়েন।
তিনি বলেন, “ওই সময় একটি গুলি রায়হানের ডান চোখের কাছে লেগে পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়; ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তখনও জায়নামাজটা তার ঘাড়ে ছিল।”
ঘটনার দিনই রাত ১০টায় রায়হানের লাশ গ্রামের বাড়ি উলিপুরে পাঠানো হয়।
মরদেহ পৌঁছায় পরদিন ২০ জুলাই সকালে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় স্থানীয় এমএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে উলিপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রায়হানের চাচা আপন আলমগীর বলছিলেন, তার ভাতিজা উলিপুর থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ঢাকায় চাকরি জীবন শুরু করেন।
তিনি বলেন, “আমার ভাতিজা একটা প্রাইভেট চাকরি করত। কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সে যুক্ত ছিল না। আমাদের এলাকার সবার নয়নের মণি ছিল সে। সে তো আর ফিরবে না। তার হত্যার বিচারটা যেন অন্তত হয়, এটাই সরকারের কাছে এখন দাবি।”