Published : 29 Apr 2025, 08:25 AM
পদ্মা নদীতে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর; যা দেখে মনে হবে ছোট ছোট খাল। একই অবস্থা পদ্মার শাখা গড়াই নদীর। একপাশে পানি আর এক পাশে জেগেছে চর।
সম্প্রতি পদ্মা ও গড়াই নদীতে পানি কমে যাওয়ায় রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সিরাজপুর, চত্রা, চন্দনা, হড়াই, মরাকুমার ও হাজরাখালী নদীসহ ৫৪টি খাল পানিশূন্য হয়েছে পড়েছে; আর এতে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ।
কৃষকরা বলছেন, এসব নদী ও খালে বছরের আট মাসই পানি থাকে না। এতে কৃষি জমিতে সেচ সংকটের পাশাপাশি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার নলকূপে পানি উঠছে না।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম রাসুল বলেন, শুষ্ক মৌসুমে যখন পদ্মায় পানি থাকে না তখন ছোট নদী ও খালগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন পাংশা, বালিয়াকান্দি, সদর উপজেলার কৃষকেরা।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা ও গড়াই নদী ছাড়া বাকি ছোট নদী ও খালগুলোতে পানি নেই। পানি না থাকায় এসব নদী ও খালে কেউ কেউ গবাদিপশু চরাচ্ছেন। ছোট নদীগুলোর কোথাও কোথাও হাঁটু পানি রয়েছে। সেখানে স্থানীয়রা মাছ ধরার চেষ্টা করছেন।
নদী ও খালে পানি না থাকায় চাষিরা খেতে সেচ দেওয়ার জন্য শ্যালো মেশিনের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছেন। তবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিনেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে চাষির।
কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের দোয়ারিয়া গ্রামের চাষি নিরঞ্জন কুমার দাস বলেন, “নদীতি পানি থাকলে পাট, ধান, পেঁয়াজ খেতে সেচ দেওয়া যাবি। নদীতি ধরেন আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পানি থাকে। আর এ কয় মাস থাকে না। নদীটা কাটতে হবে গহিন করে। যদি কাটে তালি পানি থাকবি, তাছাড়া থাকবি না।
“নদীতি পানি থাকলি সব দিক থেকে সুবিধা। মাছ, সেচ, গরু ছাগলের গোসল করানো যাবি। যাদের বাড়ির কলে (টিউবওয়েল) পানি নাই, তারা নদীর পানি নিয়ে কাজ করতি পারবি। এহন তো শ্যালো মেশিনেও পানি ওঠেই না। যাও বা ওঠে অল্প ইটু করে। যেনে এক বিঘে সেচ দিতে ৫০০ টাকা লাগবি, সেনে লাগতেছে ৮০০ থেকে ৯০০।”
নিরঞ্জন কুমারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন একই এলাকার মো. কোকিল। তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। লেয়ার ফেল হওয়ায় বোর্ডিংয়ে (শ্যালো মেশিনে) পানি ওঠে না। নদীতেও পানি নাই।
“নদীতে পানি থাকলি আমরা চাষিরা নিয়ে সেচ দিতে পারতাম। এহন তো সব দিকেই সম্মেস্যা। সরকারের কাছে চাওয়া নদীগুলো খনন করলে আমরা পানি পাতাম।”
সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের চন্দনী গ্রামের কৃষক মো. আকবর মোল্লা বলেন, “মেশিনে পানি ওঠেই না। শুমানে তেল ফুরো যায় কিন্তু ভূঁই ভিজেবার পারি নে। নদীতি পানি না থাহায় বোর্ডিংয়ে পানি ওঠতেছে না। মেশিন দিয়ে ২৬ শতাংশ ভূঁই ভিজেতি ৮ লিটার তেল লাগতেছে, তার দাম এক হাজার টাকা। এতে আমাদের পোষাচ্ছে না।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে যখন পানি না থাকে তখন ছোট নদী ও খালগুলো পানিশূন্য হয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় কৃষিতে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়।
শুষ্ক মৌসুমে এভাবে পানির সংকট থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, অন্য বছরগুলোর মত এবারও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি সেচের জন্য ভূগর্ভস্থের পানির ব্যবহারকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, “নদীতে নব্য একদমই নেই। বর্ষাকালে আমরা যে পানি পেতাম সেই পানি তো ধরে রাখা যাচ্ছে না। যার ফলে যে পানি ভূগর্ভস্থে যাওয়ার কথা সেটা যাচ্ছে না। এজন্য আমরা প্রতিবছর ভূগর্ভস্থ থেকে যে পানি তুলছি, সে পরিমাণ পানি রিচার্জ হচ্ছে না।
“যদি নদীগুলো খনন করে নব্য ফিরিয়ে আনতে পারি, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি রাখতে পারি তাহলে অনেকাংশে এই সংকট সমাধান হয়ে যাবে।”
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, “এ জেলায় পদ্মা, যমুনা ও গড়াই ছাড়াও আরও ছয়টি নদী রয়েছে। বড় তিনটি নদী ছাড়া বাকি যে ছোট ছয়টি নদী রয়েছে, তার পানির একমাত্র উৎস পদ্মা আর গড়াই।
“যেহেতু পদ্মা ও গড়াই নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কম থাকে। এই স্তরটা ছোট নদীগুলোর স্তর থেকে অনেক নিচে থাকে। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে ছোট নদীগুলোতে পানির প্রবাহ পাওয়া যায় না।”
নদী খননের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শামীম বলেন, আপাতত ছোট নদী ও খালগুলো খননের কোনো পরিকল্পনা নেই।