জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধে সড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
Published : 02 Jul 2024, 07:10 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ চার দাবিতে আজও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে সড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। আধা ঘণ্টা অবরোধ শেষে সড়ক ছেড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অবরোধ চলাকালে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাহিদুল ইমন বলেন, “কোটা রাখা হয় শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য। সেখানে প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী কোটা যথাযথ কিন্তু যারা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে কোটা বিবেচনা করা সম্পূর্ণ যুক্তিহীন।
“সংবিধানের ১৯তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সুযোগের সমতা’ কিন্তু এই সাম্য বিনষ্ট হচ্ছে হাই কোর্টের কোটা পুনর্বহাল সিদ্ধান্তের কারণে। সুতরাং সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, মেধার উপর গুরুত্ব আরোপ এবং শুধুমাত্র সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কথা বিবেচনা করেই কোটা সংস্কার করা উচিত।”
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘ।
তিনি বলেন, “সরকারি চাকরিতে এই বৈষম্যের জন্য কী আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম? মুক্তিযোদ্ধোরা কী এই বৈষম্যের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন? আমরা আবারও যুদ্ধে নেমেছি এই বৈষম্য দূর করার জন্য।”
আগামী ৪ জুলাই যদি সরকার দাবি মেনে না নেয় তাহলে সারাদেশ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন এই শিক্ষার্থী।
সমাবেশে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, “দিনে দিনে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর যে পরিমাণে উচ্চশিক্ষিত মানুষ বের হচ্ছে সেই পরিমাণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না।
“সরকারের কোনো চিন্তা নেই কীভাবে এই বেকারত্বের সংখ্যা কমানো যায়, উল্টো এই বৈষম্যমূলক কোটা প্রথার মাধ্যমে বেকারত্বের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার পাঁয়তারা চলছে।”
সমাবেশ থেকে আগামীকালও মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয় নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
ওই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। তবে রায় স্থগিতে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন:
কোটা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঢাকা-আরিচা সড়ক অবরোধ
মুক্তিযোদ্ধা কোটা জুনের মধ্যে বাতিলের দাবি, ঢাবিতে বিক্ষোভ