একজন শিক্ষার্থী বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনির কিসের অবদান? তারা কেন এত সুযোগ পাবে? নাতি-নাতনি আর আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমান।”
Published : 06 Jun 2024, 03:07 PM
সরকারি চাকরির নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বাহাদুর শাহ পার্ক ঘুরে বাংলাবাজার মোড় হয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা হাই কোর্টের রায় প্রত্যাখ্যান করে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘বাতিল করো, বাতিল করো, কোটা পদ্ধতি বাতিল করো’ এসব স্লোগান দেন।
দাবি না মানা হলে আগামীতে আন্দোলনের বড় কর্মসূচি দেওয়া বলেও জানান তারা।
সমাবেশে চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী মুন্না বলেন, “আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এই বৈষম্য দূর করার জন্য যদি আরও এক মাস রাজপথে থাকতে হয়, আমরা থাকব। তবে এই বৈষম্য দূর করেই ছাড়ব।”
চাকরিতে কোটাকে বৈষম্যমূলক দাবি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জসিম বলেন, “চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা এক ধরনের বৈষম্য। আমরা চাকরি প্রত্যাশীরা কখনো এটা মেনে নেব না। আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সরকার কোটা পদ্ধতি বাতিল করে, কিন্তু হাই কোর্ট সেই কোটা পুনর্বহাল করেছেন। আমরা এ রায়কে প্রত্যাখ্যান করছি।
“মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনির কিসের অবদান? তারা কেন এত সুযোগ পাবে? নাতি-নাতনি আর আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমান।”
স্বাধীনতার পরপরই সংবিধান হওয়ার আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ৩০ শতাংশ কোটা প্রবর্তন করা হয়। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পূর্ববর্তী সব কার্যক্রমের বৈধতা দেওয়া হয়।
সরকার পরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরও কোটা সুবিধার আওতায় আনে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়।
রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার রুল অ্যাবসলিউট বা যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এর ফলে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ হয়ে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ: হাই কোর্টের রায়