“এ ঘটনার শুরু বাইরে থেকে না, এখানে চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও প্রশাসন জড়িত,” বলেন অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান।
Published : 17 Apr 2025, 03:58 PM
নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ তৈরি করা মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি ও চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের তিন দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান।
তিনি বলেছেন, “মানবেন্দ্র ঘোষ দিয়ে শুরু হয়েছে মাত্র, আমরা যদি এখনো ফ্যাসিস্টদের আইডেন্টিফাই না করি, এরকম ঘটনা একটার পর একটা চলতেই থাকবে।
“আমরা সবাই আজকে আল্টিমেটাম দিচ্ছি, তিন দিনের মধ্যে জড়িতকে চিহ্নিত করে যদি আটক না করা হয়, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবো।"
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন এলাকায় ‘অপরাজেয় বাংলার’ পাদদেশে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান এসব কথা বলেন।
তিনি দাবি করেন, “এ ঘটনার শুরু বাইরে থেকে না, এখানে চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও প্রশাসন জড়িত। একটা গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়।
“নীল দলের একটা অংশকে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য। এখানে প্রশাসনের কিছু লোক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রও জড়িত।”
মোর্শেদ হাসান তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার গড়পাড়া বাজার এলাকায়। তিনি বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ বানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে তার বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে পুড়ে গেছে মানবেন্দ্রর বাড়ির টিনশেডের পাকা ঘর, আসবাবপত্র, কয়েকটি প্রতিমা এবং একটি মোটরসাইকেল। আগুনে পুড়ে যাওয়া ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন মানবেন্দ্র।
মানবেন্দ্র ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, পহেলা বৈশাখের আগের দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল'।
“পহেলা বৈশাখের বাঘের মোটিফ তৈরি করেছি আমি। তারপরও হুমকি পাচ্ছিলাম। তবে শেখ হাসিনার মুখাবয়ব তৈরি করিনি। ফেইসবুকে আসা হুমকির বিষয়ে মঙ্গলবার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।”
তিনি বলেন, “আমিসহ আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই মুহূর্তে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সাদা দলের আহ্বায়ক অভিযোগ করেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো আওয়ামী লীগকে প্রমোট করছে। তারা এখনো আওয়ামী লীগের ওসিদের সরায়নি।
“আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলছি, আগামী তিন দিনের মধ্যে চারুকলায় ও মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে যারা আগুন দিয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করুন। না হলে আমরা আসবো স্মারকলিপি নিয়ে।”
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোঃ আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, “আমরা যখন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কাজ শুরু করেছি, তখন থেকে জ্বালা ধরেছে কুচক্রী মহলের।
“গত ১২ তারিখ তারা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির মোটিফ পুড়িয়ে দিয়েছে। তারপর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার মত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। তার সংগ্রহে থাকা সব শিল্পকর্ম পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদ জানাই।”
দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা আসামির শাস্তির ব্যবস্থা করুন। শিল্পীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে নিরাপদে রাখুন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, “আমার দেখা মতে এরকম আনন্দঘন, দৃষ্টি আকর্ষণীয় কোন শোভাযাত্রা ও বর্ষবরণ হয়েছে আমার ঠিক জানা নেই।
“কিন্তু একটা চক্র যারা এ কাজ (আগুন দেওয়ার ঘটনা) করেছে, তাদের আপনারা জানেন। তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার সেই রাগ-ক্ষোভ থেকে গেছে। এ দেশের ক্ষতিপয় দুষ্কৃতকারী এ কাজটি করেছে।”
তিনি বলেন, “কোনো অপকর্ম সফল হবে না। তিনি শিক্ষক হোন, কর্মকর্তা হোন যেই হোক না কেন, আপনাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনবো।”