সৌদিতে দুর্ঘটনায় নিহত: শোকে মুহ্যমান কুমিল্লার মামুনের পরিবার

এ ঘটনায় কুমিল্লার আরও দুজন নিহত হয়েছেন।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2023, 04:17 PM
Updated : 29 March 2023, 04:17 PM

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ বাংলাদেশির একজন কুমিল্লার মামুন মিয়া। তাকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান স্বজনরা।

২২ বছর বয়সী মামুন মিয়া জেলার মুরাদনগর উপজেলার মোস্তাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আউয়াল মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় মামুন ছাড়াও কুমিল্লার আরও দুজন নিহত হয়েছেন।

তাদের একজন দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার এলাকার গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৭)। অপরজন মুরাদনগরের রাসেল মোল্লার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

গত সোমবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী আসির প্রদেশে ওমরাহ যাত্রী বহনকারী একটি বাস উল্টে আগুন ধরে গেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ২৪ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে ১৮ জনই বাংলাদেশি। এ ছাড়া আহত ১৬ বাংলাদেশির মধ্যে কয়েকজন এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

নিহত মামুন মিয়ার স্বজনরা জানান, মাত্র ছয় মাস আগে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন মামুন। সেখানে তিনি রেস্তোরাঁ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।

মালিকের কাছ থেকে ১২ দিনের ছুটি নিয়ে মক্কায় ওমরাহ পালনে যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে তার মামা আর ভাগ্নে ছিল।

নিহতের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আবদুল আওয়ালের তিন মেয়ে আর দুই ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চতুর্থ। ৬ মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। মামুনের এমন মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

একদিকে, মামুনের বাবা আবদুল আউয়াল শোকে কাতর। অপরদিকে মা মমতাজ বেগম মোবাইল ফোনে ছেলের ছবি দেখে বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছেন।

বাড়িতে আসা প্রতিবেশিরা এ দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারছেন না।

নিহতের বাবা আবদুল আওয়াল বলেন, সংসারের অভাব দূর করতে ৫ লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে সৌদিতে পাঠান ছয় মাস আগে। পুরো টাকাই আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করা। এখন ছেলের লাশের অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই।

তিনি আরও বলেন, “ওমরা করতে যাওনের আগে পোলা আমারে মোবাইলে কল দিয়া দোয়া চায়। যদি জানতাম, আমার পোলা লাশ হইব। আমি কি তারে যাইতে দিতাম?

এখন সরকারের কাছে তাদের চাওয়া, দ্রুত ছেলের লাশ যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।

মামুনের মামি তাছলিমা বেগম বলেন, তার ভাসুর ইয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে আছেন। তিনিই মামুনকে সে দেশে নেন। পরে নেন মামুনের আরেক ভাই হারিছ মিয়াকে। মামুন সেখানে যাওয়ার পর তার ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম যান।

ইয়ার হোসেন, জাহিদুল ও মামুন একসঙ্গেই কাজ করতেন। তিনজনই মালিকের কাছ থেকে ১২ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন ওমরাহ করার জন্য।

তাছলিমা বেগম আরও বলেন, তারা তিনজন একই রুমে থাকতেন। একই বাসে তারা ওমরাহ করার জন্য মক্কায় যাচ্ছিলেন। বাসে যেতে যেতে ইয়ার হোসেন তার স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন। এরই মাঝে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পুরো বাসে আগুন ধরে যায়।

মামুন ঘটনাস্থলে মারা যান; ইয়ার হোসেন ও জাহিদুল গুরুতর আহত হন। তারা মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান স্বজনরা।

বুধবার দুপুরে মুরাদনগরের ইউএনও আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, “আমি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনিকভাবে তাদের জন্য যা যা করার দরকার আমরা তা-ই করবো। এ ছাড়া রাসেল মোল্লা নামের একজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। তবে তার বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু পাইনি। আমরা সে বিষয়েও খোঁজ রাখছি।“

কুমিল্লার জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দপ্তরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, “মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা করার দরকার তার সবই করবো। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।”

আরও পড়ুন:

Also Read: দুর্ঘটনায় নিহত যশোরের নাজমুল সৌদি গিয়েছিলেন ১ বছর আগে