সুনামগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই গ্রামের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চারজনকে।
Published : 14 Dec 2024, 11:56 PM
ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাটের শিকার সুনামগঞ্জের মংলারগাঁওয়ের কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায় ‘এক ধরনের স্বস্তির মধ্যে’ বেশির ভাগ বাসিন্দা বাড়িঘরে ফিরলেও তাদের ‘ভয়-আতঙ্ক’ এখনো কাটেনি।
কিছু কিছু বাড়িঘরে এখনো তালা দেওয়া। তারা আশপাশের গ্রাম ও জেলায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে তারাও ভিটেমাটিতে ফিরতে চাওয়ার কথা বলেছেন।
হামলার ১০ দিন পর দোয়ারাবাজার উপজেলার মংলারগাঁওয়ে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। তবে হামলার ঘটনায় মামলা ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। মংলারগাঁওয়ের বাসিন্দারা গ্রামে ফিরেছেন। আর আকাশ দাসের পরিবারের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তারাও দ্রুতই বাড়িতে ফিরবেন বলে জানিয়েছে। গ্রামটির নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কথা বলেছেন দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার তনুও। বলেন, “আমার পক্ষ থেকে যা যা করার আছে তা করছি।”
নিয়মিত ওই গ্রামে আসা-যাওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “এখন গ্রামবাসীর মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই।”
এমনটি দাবি করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। বলেন, “গ্রামবাসী স্বাভাবিক রয়েছে। আমি নিজেও ওইখানে গিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে খুনসুটি করেছি, বাচ্চারা স্বাভাবিক রয়েছে।”
গত ৩ ডিসেম্বর উপজেলার মংলারগাঁও গ্রামের প্রফুল্ল দাসের ছেলে আকাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে আরেকজনের পোস্টে গিয়ে মন্তব্য করেন। এরপরই স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে বিক্ষোভ করে।
এর মধ্যেই রাতে কয়েকশ উত্তেজিত জনতা মংলারগাঁও ও উপজেলা সদরের বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাসিন্দারা রাতেই গ্রাম ছাড়েন । পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার শুরুর দিকেই পুলিশ আকাশ দাসকে আটক করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আকাশের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এদিকে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মংলারগাঁওয়ে হিন্দুদের বসতবাড়ি, দোকানপাট, স্থানীয় লোকনাথ মন্দির ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধনের ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ১৭০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চারজনকে। তারা হলেন- আলীম হোসেন, সুলতান আহম্মেদ রাজু, ইমরান হোসেন ও শাজাহান হোসেন।
বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন
শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মংলারগাঁওয়ে মানুষের চলাচল বেশ বেড়েছে। অনেক বাড়ির উঠানে ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে। অপরদিকে গ্রামে না ফেরা বাসিন্দাদের বাড়িঘরে তালা ঝুলছে।
এর মধ্যে কেউ কেউ ঘর ঠিক করতে কাজ করছেন। ভাঙচুর করা বেশ কয়েকটি পারিবারিক মন্দির ঠিক করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন গ্রামটির নিরাপত্তার দায়িত্বে।
গ্রামটির কয়েকটি পাড়ার অন্তত ৩৫ থেকে ৩৮টি বাড়িঘরে এখনো হামলা ও ভাঙচুরের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। গ্রামের চারটি দোকান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেইটে থাকা আরো তিনটি দোকানে হামলা-ভাঙচুরের ক্ষত দেখা গেছে। উপজেলা সদরের বাজারের ব্যবসায়ীদের দোকনপাট ঠিক করে নিতে দেখা গেছে।
মংলারগাঁওয়ের বাসিন্দা মিলন রানী দাস (৬০) বলেন, “ঘটনা শুরু হওয়ার পর আমরা আমাদের মেয়ে ও বউদের নিয়ে জঙ্গলে চলে যাই। কোনো রকম জান বাঁচিয়েছি। পরে রাতেই গাড়ি করে চলে যাই অন্যখানে।
“পরের শুক্রবার দিন আমরা বাড়িতে এসে দেখি, ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছে। এখন আমাদের গ্রামে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আছে, তাই আমরা থাকছি। আমরা ভয়ে-আতঙ্কে আছি, এরা আছেন দেখি সাহস পাচ্ছি। সামনে যে কী হবে সেই ভয়েই আছি।”
একই ভাষ্য ভাঙচুরের শিকার হওয়া মিন্টু দাসের। তিনি বলেন, “রাতে আমরা পুরুষ মানুষ ঘুমাই না, ডিউটি করি।”
প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন ইমাম
হামলার ঘটনা নিয়ে মংলারগাঁওয়ের তরুণদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা প্রতিরোধে সেদিন রাতে দোয়ারাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম একরামুল হকের নেতৃত্বে বেশকিছু উলামায়ে-কেরাম, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ, রাজনৈতিক নেতা চেষ্টা করেছিলেন। তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই হামলাকারীদের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন।
যদিও তারা সংখ্যায় কম ছিলেন। তারপরও তারা তাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করেছেন বলে মংলারগাঁওয়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন।
শুক্রবার ইমাম একরামুল হক বলেন, “ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের পর বিশেষ করে উলামায়ে-কেরাম দায়িত্বে ছিলেন, বিশেষ করে ভাঙচুর যাতে না হয়। কিন্তু আমজনতা ঈমানি আবেগে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করছে, আক্রমণ করছে। এগুলো ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তারপরও অনেকে ভাঙচুর করেছে।
“মংলারগাঁওয়ের পাশে যেহেতু আমার বাড়ি, তাদের সঙ্গে আমার ওঠা-বসা। আমরা দীর্ঘদিন থেকে এক জায়গায় বসবাস করতেছি। হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই বসবাস করতেছি। ওই তাগিদে আমি তাড়াতাড়ি মংলারগাঁওয়ে গিয়েছি। গিয়ে দেখি, কিছু ভাঙচুর চলছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, তাদেরকে রক্ষা করতে।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, একজন দোষ করছেন, তার শাস্তি হবে। যে অপরাধী তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। কিন্তু তার এই অপরাধকে পুঁজি করে যাতে অন্য কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।
“ইসলাম তো ভাঙচুর, রাহাজানি, খুন-খারাপি পছন্দ করে না; ইসলামে এগুলো নিষেধ। আমরা যাতে অনৈসলামিক কার্যক্রমে যুক্ত না হই।”
মংলারগাঁওয়ের ভাঙচুর করা দোকানের সামনে রাস্তায় কিছু মালামাল নিয়ে বসেছেন কানু দাস। শারিরীকভাবে অসুস্থ তিনি, অন্য কাজকর্ম করতে পারেন না। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুরা মিলে দোকান করে দিয়েছিল, এটিও লুটপাট-ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত যে কিছু জিনিস বেঁচে গেছে তা এক মওলানার কারণে।
কানু দাস বলছিলেন, “ভাঙচুরের শেষ দিকে আমাদের পাশের একজন মওলানা আসেন। উনি যদি আরো একটু আগে আসতেন, তাহলে আমাদের কম ক্ষতি হত। উনি এসে ভাঙচুরকারীদের ফিরিয়ে দেন, বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেন।”
‘ওসি আমার ভাই আকাশকে বাঁচাতে মারধর খেয়েছেন’
হামলার আগেই বাড়ি ছাড়েন যাকে কেন্দ্র করে ঘটনা সেই আকাশের বাবা প্রফুল্ল দাসের পরিবারের সদস্যরা। এর আগে পুলিশের কাছে তারা আকাশকে তুলে দেন। পরে তাদের বাড়িতেও হামলা হয়। প্রফুল্ল দাশ প্রবাসে রয়েছেন। তার পরিবার এখনো বাড়ি ফেরেনি। আকাশ দাস (২১) দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
প্রতিবেশীরা বলেন, আকাশ দাসের মা আর বড় ভাই ছাতকে রয়েছেন।
৩ ডিসেম্বরের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আকাশ দাসের বৌদি (ভাবী) পিংকি রানী দাস বলছিলেন, “পুলিশ ও মেম্বারসহ কয়েকজন বাড়িতে আসেন আকাশের খোঁজে। তখন মানুষ জড়ো হতে থাকেন বাড়িতে। ঘটনাটি শুনে গ্রামের মানুষজন ও তার ভাই-মা মিলে আকাশকে খুঁজে এনে দেন।
“আমরা তখন ঘরের ভেতরে কাজ করি। আমরা তো ভাবছি, কোনো কিছু হবে না। হঠাৎ শুনি মিছিল আসতেছে, এটা শুনেই ওসি স্যার তাকে নিয়ে চলে যান। এর ১০ মিনিট পরই আমাদের বাড়িঘরে আক্রমণ শুরু হয়।”
ঘটনার আট দিন পর বাড়িতে ফিরলেও আতঙ্ক কাজ করছে বলে জানান তিনি। বলেন, “আমার স্বামী রাতে বাইরে বসে থাকেন। তিনি ঘুমে গেলে আমার ছোট ভাই জেগে থাকে। পুলিশও আছেন, তারপরও আমরা একজন না একজন সজাগ থাকি।”
শনিবার বিকালে আকাশ দাসের বড় ভাই প্রকাশ দাস মোবাইল ফোনে বলেন, “প্রশাসনের (পুলিশ) লোকজন এসে ঘটনাটি বলার পর আমি ঘরে ঢুকে দেখি আকাশের মোবাইলটি চার্জে রয়েছে। সে মোবাইল চার্জে রেখে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল। আমরা নিজেরা তাকে খোঁজে এনে পুলিশের কাছে দেই। সে তখন জানত না কেন প্রশাসনের লোকজন এসেছেন।”
কবে বাড়িতে ফিরবেন জানতে চাইলে প্রকাশ বলেন, “আরো কয়েকটা দিন যাক, পরিবেশটা ঠান্ডা হোক। আমাদের কারণে গ্রামবাসীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গ্রামবাসী বর্তমানে সেইভ আছেন। তবে সে (আকাশ) আসল দোষী কি-না সেটাও পরিষ্কার হয়নি। পাড়া-প্রতিবেশীদের ক্ষোভ থাকতে পারে আমাদের ওপর।
“আর পুলিশ সেদিন আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। ওসি স্যার না থাকলে বড় কিছু হয়ে যেত। উনি আমার ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে মারধর খেয়েছেন।”
’এখন একেবারে নিঃস্ব’
দোয়ারাবাজার উপজেলায় যাতায়াতের প্রধান সড়কের পাশেই মংলারগাঁওয়ের বাসিন্দা যুবক রনি দাসের বাড়ি। হামলার পর পরিবার নিয়ে বাড়ি ছাড়েন তিনি। ছিলেন পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। রনি একটি ছোটখাট দোকান করেন।
তার ভাষ্য, “রাস্তার পাশে থাকা আমার দোকানে আগুন দিয়ে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়েছে। দোকানে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মাল ছিল। আমার মোবাইল ও বেচাকেনার টাকা ছিল, কিছুই পাইনি। ঘরে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আমাদের পরিবার দোকানের ইনকামের ওপর নির্ভর ছিল, এটা সবাই জানে। এখন একেবারে নিঃস্ব। আমার গরুর ঘরটিও ভাঙছে, দুটি গরু বাইরে রাখছি। আমরা তো একটা আতঙ্কেই আছি।”
রনি দাসের বাড়ির সামনের রাস্তা পেরিয়ে সঞ্জিত শীলের বাড়ি। সঞ্জিতের ঘরের সামনের দরজায় দিনের বেলায়ও তালা দেওয়া। পেছনের দিকে গিয়ে তাদের দেখা মেলে।
সঞ্জিতের স্ত্রী রূপন রানী বলেন, “কিস্তি দিয়ে ঘর তুলেছি, দেখেন ঘর ভেঙে কী করছে? হামলার পর থেকে ভয়ে সামনের দরজা বন্ধ রাখি।”
প্রণতি বালা দাস (৬০) ও তার পরিবার হামলার পরদিন ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বাংলাবাজার চলে যান। পাঁচ দিন পর তিনি বাড়িতে আসেন। সেদিন বাড়িতে চারজন ছিলেন, সবাই নারী। এখনো পুরুষরা বাড়ি ফেরেননি।
তিনি বলছিলেন, “আমি আমার মেয়ে ও দুই নাতিন নিয়ে বাড়িতে থাকি। রাতে এখনো ঘুমাই না, ভেতরে ভয় থাকে। আর কান্না করি। ঘরটি রাস্তার পাশে হওয়াতে এখন সবসময় দরজা-জানালা লাগিয়ে রাখি। দরজা খুলি না।”
প্রণতি বালা দাসের পেছনের বাড়ির বাসিন্দা অবনি দাস (৭৫)। সে রাতে তিনি সাড়ে ৭টার দিকে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ মানুষের চিৎকার শুনে তিনি জেগে ওঠেন। তার ১০ মিনিট পরই তার ঘরে হামলা হয়।
অবনি দাস দাবি করেন, “কোদাল দিয়ে ঘরে আঘাত করে। কারেন্টের মিটার ভেঙে ফেলছে। আমি বললাম, আর কোদাল দিয়ে বাড়ি দিও না, তোদের আল্লাহর দোয়াই। তখন আমি ঘরের ভেতরে।”
এ সময় পাশে থাকা তার স্ত্রী মালতি রানী দাস বলেন, “এই ঘটনাটি মনে হলে শরীর কাঁপে, রাতে ঘুমাতে পারি না। বাড়ির বাইরে দুদিন ছিলাম, পরে চলে আসছি।”
এ হামলার কারণে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ায় যথাসময়ে পরীক্ষা দিতে পারেনি দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে অবস্থিত মুহিবুর রহমান মানিক বালিকা উচ্চা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রচিতা দাস।
তিনি বলেন, “পরীক্ষা চলছে, তাই তখন পড়তে ছিলাম। হঠাৎ আমার মামা এসে বলেন, রুম থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাও। আমরা পাশের ঘরে চলে যাই। আর ভোরে উঠে আমরা অন্য জায়গাতে চলে যাই সবাই। পরে রোববার ছাতক থেকে এসে পরীক্ষা দিয়েছি।”
‘মাটি ছেড়ে যেতে পারব না’
দিনমজুরি করে সংসার চলে রানা দাসের। ওই রাতে তার বাড়িতেও হামলা হয়। হামলাকারীরা ঘরে থাকা সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে তিনি ভয়ে পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যান।
তিনি বলেন, “আমাদের এমন অবস্থা যে, রান্না করে খাওয়ার জায়গা নাই। প্রশাসন নিরাপত্তা দিয়েছে তাই এখন বাড়িতে এসেছি। আমি তো ভাই আর দেশ-মাটি ছেড়ে যেতে পারব না। আমি আর কোথাও যেতে পারব না। সেই সামর্থ্য নাই আমার। আমি গরিব মানুষ। রোজ আনি রোজ খাই।
মংলারগাঁওয়ের বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দা শোক্লা রানী দাস, স্মৃতি দাস, মতি সূত্রধর, বীরেন্দ্র দাস, কল্পনা রানী দাস, সাগর দাস, সুবোধ দাস, নিয়তি দাস, সুনিতি বালা দাস- এদের সবাই এখনো আতঙ্কে আছেন। তাদের পরিবারের অনেকেই হামলায় আহত হয়ে সুনামগঞ্জ বা সিলেটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা এখনো বাড়ি ফেরননি।
আরও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪
'ধর্ম অবমাননা': সুনামগঞ্জের সেই আকাশ দাস রিমান্ডে
সুনামগঞ্জে হিন্দু বাড়িতে হামলা: ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে নাগরিক কমিটি
হিন্দু বাড়িতে হামলা: সুনামগঞ্জের সেই গ্রামে কড়া নিরাপত্তা, বসেছে
হিন্দু বাড়িতে হামলা: সুনামগঞ্জে দুপুরে সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন