বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের ভাই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি দলের সদস্য।
Published : 07 Dec 2024, 07:14 PM
ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার একটি গ্রাম ও বাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকানে হামলা-লুটপাটের পর মংলারগাঁও পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি দল।
শনিবার সকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ওই গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আইনজীবী মানজুর আল মতিন, প্রতম দাশ, তাজনুভা জাবিন ও স্থানীয় বাসিন্দারা ছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মানজুর আল মতিন বলেন, “যারা হিন্দু ভাইদের বাড়িঘরে হামলায় জড়িত, তাদের বিচার হওয়ার দরকার, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। যারা হামলা করেছেন, তারা গোটা দেশের ঐক্য ও সম্প্রতি রক্ষার যে চেষ্টা, সেটাকে বাধাগ্রস্ত করছেন। তাদের চিহ্নিত করতে হবে।”
তিনি বলেন, “যিনি কোরআন অবমাননা করেছেন, তারও বিচার নিশ্চিত হওয়া জরুরি। না হলে এ ধরনের আবেগকে কেন্দ্র করে মানুষকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এটা কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবে না।”
মঙ্গলবার রাতে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দোয়ারাবাজারের সদর ইউনিয়নের মংলারগাঁও গ্রাম ও উপজেলা সদরের বাজারে হামলা-লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পুলিশ মংলারগাঁও গ্রামের প্রফুল্ল দাসের ছেলে আকাশ দাসকে (১৭) আটক করেছে; যার বিরুদ্ধে আরেকজনের ফেইসবুক পোস্টে গিয়ে ধর্মকে অবমাননা করে কমেন্ট করার অভিযোগ তুলেছেন এলাকার কিছু লোক।
এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল বলেন, “আকাশ দাসের আইডি থেকেই ফেইসবুকে কমেন্টটি করা হয়েছে; পুলিশ এটির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। আর এ ঘটনায় সাইবার আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আকাশকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
এ অবস্থার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ওই প্রতিনিধি দল।
কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন বলেন, “স্থানীয় হিন্দু ভাইয়েরা আমাদের বলেছেন, যখন ক্ষুব্ধ জনতা হামলা করতে আসে, তখন এলাকার ইমামসহ আরও লোকজন তাদের বাড়িঘর রক্ষায় এগিয়ে আসেন। এই উদাহরণগুলো সারাদেশে সৃষ্টি করতে হবে। ভাই হয়ে ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে।”
বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের ভাই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “মোরা এক বৃন্তে দুটো কুসুম হিন্দু-মুসলমান। ফলে সবার পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। যে ইমাম সাহেব হামলা থেকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন, এ রকম আরও অনেক মানুষ আছেন। মনে রাখতে হবে, একজন ব্যক্তি ঘটনার জন্য দায়ী। তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা মনে করি, তার বিচার হবে। একজনের জন্য সব হিন্দু দায়ী নন।
“বাংলাদেশ এখন হিন্দু-মুসলমান সবার। এই গ্রামের ঘটনা নিয়ে ভারতীয় অনেক গণমাধ্যম মিথ্যা ও গুজব চড়াচ্ছে। এই মিথ্যা প্রতিরোধে সত্যই হোক হাতিয়ার। আমরা সত্য দিয়ে মিথ্যাকে রুখে দাঁড়াব।”
আরও পড়ুন:
আতঙ্কের মংলারগাঁও ঘিরে নিরাপত্তা জাল
হিন্দু বাড়িতে হামলা: সুনামগঞ্জের সেই গ্রামে কড়া নিরাপত্তা, বসেছে