আগের রাতের হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের পর সব ধর্মের ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে সভা করে অভয় দেওয়া হয়েছে।
Published : 05 Dec 2024, 01:24 AM
ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের মংলারগাঁও গ্রাম হামলায় লণ্ডভণ্ড হওয়ার পর আতঙ্কে গ্রামটির অনেক বাসিন্দাই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্য জায়গায় পাড়ি জমিয়েছেন; যারা বাড়িঘরে রয়েছেন তাদের কঠোর নিরাপত্তার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত অভয় দিয়ে যাচ্ছেন।
আগের রাতের ঘটনার পর বুধবার মংলারগাঁও গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। এসময় তারা গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছেন।
বিকালেও উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ সব ধর্মের ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সেখানেও সবাইকে শান্ত থাকা এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।
সেনা ও পুলিশ সদস্যদের এমন তৎপরতার মধ্যেও মংলারগাঁও গ্রামটিতে গিয়ে মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। তাদের বেশির ভাগই ঘটনার বিষয়ে কথা বলা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। দু’চারজন যারা কথা বলেছেন তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছিল।
হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও বাসিন্দাদের অনেকেই ফিরে আসেননি; অনেক বাড়িই তালাবদ্ধ দেখা গেছে। চার-পাঁচ বাড়ি পরপর একজন পুরুষের দেখা পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে বাড়ি ফিরে মেরামত, হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র খোঁজ পাওয়া, কার কোথায় কী কী ক্ষতি হয়েছে সেসব জানার চেষ্টা করছেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার কথা তুলে ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মঙ্গলবার রাত ২টা পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। বুধবার রাতেও সেখানকার ইউএনওর সঙ্গে কথা হল। তিনি বলেছেন, এখন সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এসপি সাহেবও জানালেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।”
যেভাবে শুরু ঘটনার
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের একাধিক বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আকাশ দাস (১৭) নামে এক কিশোর ফেইসবুকে অন্যের একটি পোস্টে গিয়ে একটি কমেন্ট করেন। দুপুরের পর থেকে সেটিকে ধর্ম অবমাননা হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ধীরে ধীরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সদরে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এরমধ্যে সন্ধ্যার পর উত্তজিত জনতা দোয়ারাবাজার এলাকায় আকাশ দাসের গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল করে। মিছিলটি উপজেলা সদর থেকে মংলারগাঁওয়ের দিকে যেতে শুরু করে। তখনই শুরু হয় হামলা ও ভাঙচুর।
এ পরিস্থিতি চলে বেশ কিছুক্ষণ। পরে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
হিন্দু বাড়িতে হামলা: সুনামগঞ্জের সেই গ্রামে কড়া নিরাপত্তা, বসেছে
দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্র আকাশ দাসের আইডি থেকেই ফেইসবুকে কমেন্টটি করা হয়েছে; পুলিশ এটির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। আর এ ঘটনায় সাইবার আইনে পুলিশ মামলার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।”
ফাঁকা মংলারগাঁওয়ে হামলার ক্ষত
দুপুরে মংলারগাঁও গিয়ে দেখা যায়, সেনাবাহিনী সদস্যরা নিরাপত্তার কাজে রয়েছেন। সঙ্গে পুলিশদেরও বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ কেউ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে পুরো গ্রামজুড়ে।
পরে যাকে ঘিরে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সেই আকাশ দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘরটি তালাবদ্ধ, বাড়িতে কেউ নেই। বাড়িতে থাকা স্টিলের দরজা ভাঙচুর করা হয়েছে। বাড়ির উঠানে পড়ে আছে ভাঙচুর করা টিভিসহ নানা জিনিসপত্র।
স্বজনরা জানিয়েছেন, আকাশের বাবা ওমানপ্রবাসী। গ্রামের বাড়িতে তিনজন থাকেন। আকাশ, তার মা ও বড় ভাই। বড় ভাই স্নাতক প্রথম বর্ষে এবং আকাশ উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজে।
পাশে থাকা আকাশ দাসের চাচাত দুই ভাইয়ের ঘরবাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। বাড়িতে সুনশান নিরবতা। আর চারপাশে পড়ে আছে ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্রের অংশ। বাড়ির সমানে থাকা ঘরও ভাঙচুর করা। দেখলেই বোঝা যায়, সেখানে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়েছে।
এসময় দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার তনু আসেন গ্রেপ্তার হওয়া আকাশ দাসের পরিবারের জন্য চাল নিয়ে। তবে বাড়িতে কেউ না থাকায় সে চাল মানিক লাল দাসের কাছে দিয়ে যান।
এসময় মানিক লাল বলেন, তার কাকা প্রফুল্ল দাস পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছাতকে চলে গেছেন।
ঘুরতে ঘুরতে গ্রামের অন্য পাড়ায় বীরেন্দ্র দাস ও বীজন দাসসহ আরও কয়েকটি বাড়িতে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়েছে। গ্রামের পারিবারিক মন্দিরও ভাঙচুর করা অবস্থায় দেখা গেছে।
গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়, পাশে থাকা দোকানগুলোতেও ভাঙচুর দেখা গেছে। বাজারে গিয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানপাটের শার্টার ভাঙা থাকতে দেখা গেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয় লোকনাথ মন্দিরের রাস্তায় থাকা বাসাবাড়ির জানালা ভাঙচুর ও মন্দিরের ভেতরে সবকিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘ঘরবাড়ি ছেড়ে হাওরে-জঙ্গলে’
আকাশ দাসের কাকাত ভাই মানিক লাল দাস বলেন, “আমি বাজারে ছিলাম, সন্ধ্যার পর বাড়িতে এসে দেখি, ওসি ও মেম্বারসহ আরো লোকজন বসে রয়েছেন। আমরা কিছু জানি না, তখন তারা বলেন, এই ঘটনা আকাশকে নিয়ে, তাকে নিয়ে আসেন। পরে আকাশকে ওসির সামনে নিয়ে আসা হয়। ওসি স্যার, তার মোবাইল চেক করতে থাকেন।
“এ সময় রাস্তায় চিৎকার শোনা যায় মানুষদের; তা শুনে ওসি সাহেব আকাশকে নিয়ে চলে যান। ওসি সাহেব তাকে বাঁচাতে অনেক কষ্ট করেছেন। তা না হলে তাকে বাঁচানো যেত না। এর কিছু সময় পরই ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ এসে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। চারদিকে মানুষজন ছিল। আমাদের পাশের বাড়িতেও মানুষ হামলা চালিয়েছে। আমরা তখন ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে রয়েছি। মানুষ দেখে ঘরে তালা দিয়ে চলে গিয়েছিলাম।“
মানিক লালের অভিযোগ, “পরে অনেক রাতে এসে দেখি তালা ভেঙে ঘরের জিনিসপত্র, সোনা ও টাকা-পয়সা সবকিছু নিয়ে গেছে। আমাদের কাপড়ও নিয়ে গেছে। ড্রয়ার ভেঙে ফেলে সবকিছু নিয়ে গেছে। সকালে আমাদের খাওয়ার মত কিছু ছিল না ঘরে।”
হিন্দু বাড়িতে হামলা: সুনামগঞ্জে দুপুরে সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন
এসময় পাশে থাকা কৃষ্ণ দাশও অভিযোগ করে বলেন, “আমার ঘর খালি; যা ছিল সব নিয়ে গেছে। আমরা বাড়িতে না থাকায় আমাদের উপর আক্রমণ হয়নি। আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্য স্থানে রয়েছে। এই বাড়িতে কীভাবে থাকবে? আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই ভাঙচুর করা হয়েছে।”
আকাশ দাসের বাড়ির কয়েকটা বাড়ি সামনে গিয়ে পাওয়া যায় বীরেন্দ্র দাসের বাড়ি, সেখানেও ভাঙচুর-লুটপাটের দৃশ্য।
বীরেন্দ্র দাসের ভাষ্য, “রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ করে অনেক মানুষ এসে ঘেরাও করে বাড়ির চারদিকে। বাড়িতে ভাঙচুরের শব্দ শুনে পিছনের দিকে বের হয়ে হাওরে চলে যাই। ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। আর আমাদের মন্দির ভাঙচুর করেছে। আমরা রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে আসি।“
“এর আগে সেনাবাহিনী এসে আমাদের বলেছে, আর কিছু হবে না। আপনারা চলে আসুন, আমরা আছি, নিরাপত্তার জন্য। আমার ভাই একজন অসুস্থ, সেনাবাহিনী তাকে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনি আাগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন, আর উত্তজিত জনতা তাকে ধাক্কা দিয়েছিল। আমাদের মন্দিরের রাখা জমানো টাকা নিয়ে গেছে। ঘরে দেড় মণ চাল ভাঙিয়ে রেখেছিলাম, সেগুলো নিয়ে গেছে। ঘরে তিনটি চেয়ারও পাইনি,” অভিযোগ তার।
বীরেন্দ্র দাস বলেন, “রাতেই আমাদের বাড়ির সব মানুষ চলে গেছে অন্য জায়গাতে। আমরা কয়েকজন রয়েছি বাড়িতে। মেয়েছেলেসহ সবাই চলে গেছে। কারণ গ্রামে নিরাপত্তা ছিল না। আমাদের গ্রামের ১০০ ঘর রয়েছে, ৬০ থেকে ৭০ ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
তার বাড়ির কয়েকটি ঘর পরেই বিজন দাসের বাড়ি। তার ভাষ্য, “হঠাৎ করে অনেক মানুষ এসে আমাদের আক্রমণ করেছে। আক্রমণ করে ঘর-দরজা ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করছে। আমার ঘরে আগুন দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনেই লুটপাট করেছে। ঘর থেকে সোনা-দানা, টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। আমরা কিছু বলতে পারিনি। বোবার মত দাঁড়িয়ে ছিলাম। চারপাশে তারা গায়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল, তবে শরীরে কোনো আঘাত করেনি। আমার পারিবারিক মন্দির ভাঙা হয়েছে।”
তার আরও অভিযোগ, তার খামারের প্রায় এক হাজার মুরগি লুটপাট করা হয়েছে। মুরগির খাবার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে থাকা শিশু স্কুলের ঘরটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। গ্রামের ৭০ ঘরে এ রকম করা হয়েছে।
নিজের ও ভাইয়ের পরিবার মিলিয়ে তারা প্রায় ৩০ সদস্য। বিজন বলছিলেন, “রাতেই মেয়েছেলেসহ অন্যরা চলে গেছে বিভিন্ন স্থানে। এখন বাড়িতে আমরা দুজন আছি, ঘরের চাল, ডালসহ যা ছিল সব নিয়ে গেছে।”
রাতভর মুসলিম পরিবারে আশ্রয়
মংলারগাঁও গ্রামটি শতাধিক পরিবারের বসবাস। এই গ্রামে দুটি মুসলিম পরিবার ছাড়া বাকিগুলো হিন্দুদের। পাশের গ্রাম ননিগাঁও। সেখানেও হিন্দুরা বেশি হলেও কয়েক ঘর মুসলিম পরিবার রয়েছে। দুটি গ্রামেই দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু-মুসলমানরা শান্তি বজায় রেখে সহবস্থান করছেন।
ননিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. রুহেল মিয়া বলছিলেন, “রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়িতে গিয়ে দেখি, প্রতিবেশী আট থেকে ১০টি পরিবার আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সারা রাত আমাদের বাড়িতে ছিলেন। কোনো সমস্যা হয়নি।
'ধর্ম অবমাননা': সুনামগঞ্জের হিন্দু বাড়িতে হামলা, যুবক আটক
“আমরা অনেক বছর ধরে মুসলমান-হিন্দু মিলে এখানে বসবাস করছি। হঠাৎ করে বাইরের লোক এসে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। দোষ করল একজনে আর শাস্তি পেয়েছে অনেকে।’’
উপজেলা সদরের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী রুহেল মিয়া বলেন, “বাড়িতে আসার আগে আগে আমি বাজারে ছিলাম। আমার দোকানের মালিক হিন্দু হওয়াতে দোকান ভাঙচুরের সম্ভাবনা ছিল। দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাওয়ার পর শুনি, দোকানের শার্টার ভাঙচুর করা হয়েছে।
“যে ছেলেটি (আকাশ) এটি করেছে, তাকে সবাই ভাল জানত। সেও নীরবে চলাফেরা করত। আমাদের সামনে দিয়ে গেলে ভদ্রের মত চলত।”
দোয়ারাবাজার আখড়া মাকের্টের ব্যবসায়ী গোপিকা রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “রাত ১০টার দিকে দোকানের ছয়টি শার্টার ভাঙচুর করা হয়েছ। অনেক মানুষ ছিল। বাজারের সব দোকানেই আক্রান্ত হয়েছে।”
দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় লোকনাথ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক খোকন রায়ের অভিযোগ, “মন্দিরে ভাঙচুর করে মালামাল লুট করা হয়েছে। মন্দিরের অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাজারে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে।
“উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গুরু দে’র বাড়ি ও পরিবারিক মন্দিরসহ আশপাশের আরও ১০টি বাড়িঘরে লুটপাট করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার মংলাগাঁও এবং ননিগাঁও পূর্ব হাঁটিতেও লুটপাট হওয়ার খবর পেয়েছি।”
শান্ত থাকার আহ্বান হিন্দু নেতাদের
বুধবার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাতে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মংলারগাঁও ও দোয়ারাবাজার সদরে প্রায় শতাধিক বাড়িঘর আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দির আছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিমান কান্তি দাস পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করেছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে।”
যা বলছে প্রশাসন
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগীদের অনেকেই ‘বেশি সংখ্যক’ বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের কথা বললেও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া সংখ্যায় তা গুটিকয়েক বলে তুলে ধরেন।
রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “আকাশের বাড়ি আর তার প্রতিবেশীর একটি বাড়িতে হামলা হয়েছে, দুটো দোকানে হামলা হয়েছে। আর সেখানকার একটা লোকনাথ মন্দির; সেখানে কিছু ফার্নিচার তছনছ করা হয়েছে। তাছাড়া আর তেমন কিছু হয়নি।“
৭০টির মত বাড়িতে হামলার অভিযোগ রয়েছে- জানালে জেলা প্রশাসক বলেন, এরকম তথ্যের কোনো সত্যতা নেই।
তিনি বলেন, “না, না, না। আমি আর এসপি সাহেব শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা হাঁটছি। আমরা হেঁটে হেঁটে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। ম্যাক্সিমাম পরিবারগুলোকে আমরা বাড়িতেই পেয়েছি।
“এখন কেউ যদি বলে এত বেশি হামলা হয়েছে…। আর এতগুলো পরিবারের ওপর হামলা হলে তো ক্যাজুয়ালটি (হতাহত) হত। কিন্তু এই ঘটনায় কেউ হাসপাতালে ভর্তি হননি, কারো প্রাথমিক চিকিৎসাও লাগেনি।”
কী সংখ্যক ঘরবাড়ি-দোকানপাটে ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার তনু বলেন, “সেটি হিসাব করা হয়নি। তবে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙচুর হয়েছে।”
দুপুর ২টার দিকে মংলারগাঁও গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেজর মো. আল জাবির আসিফ তাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা নিরাপদ ফিল করেন; আমরা এখানে ক্যাম্প করেছি। কোনো ধরনের উসকানিতে কান দেবেন না। সবাইকে সচেতন থাকবেন, আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না।”