ওসি বলেন, একটানা চার ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
Published : 10 Jul 2024, 05:57 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে শিক্ষার্থীরা চার ঘণ্টা অবরোধ করার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজটে পরিবহন যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
কর্মসূচি বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শেষ করে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে চলে যান বলে ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার জানান।
দীর্ঘক্ষণ মহাসড়ক অবরোধের কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন চালক ও যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী এবং শিশুদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
বিকাল সাড়ে ৩টায় অবরোধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মহাসড়কের উভয়মুখী লেনে অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ায় যানচলাচল শুরু হলেও যানবাহনের গতি ধীর।
অবরোধ চলাকালে কয়েকবার বৃষ্টি নামলেও শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজেই আন্দোলন চালিয়ে যান। এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, কোটা প্রথার ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, 'লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, লড়াই করো একসাথে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগানে মহাসড়ক কম্পিত করে তোলে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ করে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে দেখা যায়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, “একই দেশ, একই জাতি, একই ভাষা তবুও কেন এত বৈষম্য থাকবে। আমরা যত ঝড়-বৃষ্টি-তুফান হোক এই আন্দোলন চালিয়ে যাব যতদিন না পর্যন্ত এই বৈষম্য দূর হবে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রেজাউল রহমান আয়াত বলেন, “কোটা সম্পূর্ণ বাতিল না করলেও কোটা সংস্কার করা হোক। আমরা এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবি আদায় না করে রাজপথ ছাড়বো না।”
অবরোধ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলন সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, “আজকে আমাদের অবরোধ ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু আবহাওয়াজনিত কারণে আমরা আমাদের আন্দোলন এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা আমরা অনলাইনে জানিয়ে দেব।”
যানজটে আটকাপড়া চট্টগ্রাম অভিমুখী ট্রাকের চালক কামাল মিয়া বলেন, “মালামাল নেওয়ার জন্য প্রতিদিনই এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। গতকালও দীর্ঘক্ষণ জ্যামে আটকা ছিলাম। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলে আমরা ড্রাইভার আর সাধারণ জনগণ সবার জন্যই উপকার হইতো।”
ঢাকাগামী একটি বাসের যাত্রী হিমেল মাহমুদ বলেন, “এভাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের কারণে আমরা সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। সবার জন্যই সমস্যা হচ্ছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।”
ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, “একটানা ৪ ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানচলাচল শুরু হলও দীর্ঘ গাড়ির জট লাগায় কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। আমরা যানজট পুরোপুরি নিরসনে কাজ করছি।”