পুরস্কারের আশায় মোট তিনজন জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে নিয়ে এসেছেন বলে জানান ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।
Published : 23 Jun 2024, 07:46 PM
ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ নেতার পুরস্কারের ঘোষণা শুনে মানুষ জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে নিয়ে আসায় ‘বিপদে’ পড়েছে বনবিভাগ।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ ঘোষণা দেওয়ার পর গত দুদিনে ফরিদপুর বনবিভাগের কাছে তিন ব্যক্তি পদ্মার চর থেকে তিনটি জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে নিয়ে আসেন। তারা পুরস্কার পাওয়ার আশায় বনবিভাগের ‘প্রাপ্তিস্বীকারপত্র’ চান।
আর এ নিয়ে বিপত্তিতে পড়েছে বনবিভাগ।
অপরদিকে পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ‘নিরব’ রয়েছেন। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, রাসেলস ভাইপার ধরলে কাউকে কোনো পুরস্কার দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের রাসেল স্কয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভায় সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ ‘মানুষের জীবন রক্ষার্থে’ এই রাসেলস ভাইপার মারলে অর্ধলক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন।
এ সময় তার পাশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকও ছিলেন। দুজন তাদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ‘সাপ মারা ব্যক্তিদের’ এই পুরস্কারের ঘোষণা দেন।
কিন্তু পরদিন শুক্রবারই তারা তাদের ঘোষণা পাল্টে বলেন, মৃত নয়, জীবিত সাপ ধরতে পারলেই পুরস্কার মিলবে।
শনিবার সদর উপজেলার আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা মনোরুদ্দিন খানের ছেলে কৃষক রেজাউল খান একটি জীবিত সাপ ধরেন। পরে রাত ৮টার দিকে সাপটি নিয়ে তিনি ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে আসেন।
কৃষক রেজাউল খান বলেন, আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার ফসলি জমিতে চাষ করার সময় তিনি রাসেলস ভাইপারটি দেখতে পান। পরে সেটিকে অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে ভরে প্লাস্টিকের নেটের আবরণ দিয়ে পাতিলের মুখ বন্ধ করে সাপটিকে আটকে রাখেন।
তিনি বলেন, পরে বিষয়টি ফরিদপুর পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওলাদ হোসেনকে জানান। তিনি সাপটি বনবিভাগের কাছে জমা দিয়ে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তখন তিনি বনবিভাগের কাছে যান।
কিন্তু বনবিভাগ সাপ রাখেনি জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কৃষক রেজাউল বলেন, “সাপ নিয়ে বনবিভাগের কাছে গেলে তারা সেটি নেয়নি এবং প্রাপ্তিস্বীকারপত্রও দেয়নি।”
রোববার দুপুর পর্যন্ত পুরস্কারের আশায় মোট তিনজন জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে নিয়ে এসেছেন বলে জানান ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, “এ জাতীয় প্রাণী ধরার কোনো বিধান নেই। ধরাটাই অপরাধ। কয়েকজন রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আমাদের কাছে আসে এবং প্রাপ্তিস্বীকারপত্র চান। আমি তো তা দিতে পারি না।
“তিনজন পুরস্কারের আশায় বনবিভাগে রাসেলস ভাইপার জমা দেওয়া চেষ্টা করেন। এ নিয়ে আমরা বিপদে পড়েছি”, বলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।
এ দিকে পুরস্কারের বিষয়ে জানতে রোববার একাধিকবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফকে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে দুপুরে সাপ ধরা বা মারার জন্য কাউকে পুরস্কার দেওয়া হবে না- এই মর্মে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হক।
এতে তিনি লিখেছেন, “বর্তমানে রাসেলস ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য এটি হুমকিস্বরূপ।
“এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বিধায়, যেকোনো পুরস্কার বা কৌতুহলবশত এই সাপ নিয়ে অতি উৎসাহিত হবেন না।”
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “জীবিত বা মৃত রাসেলস ভাইপাপের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।”
স্ট্যাটাসে সবাইকে সচেতন ও সুস্থ থাকার আহ্বান জানিয়ে শামীম হক বলেন, “সাপ দেখলে কেউ মারার বা ধরার চেষ্টা করবেন না।”
শেষে তিনি সাপ বিষয়ক সচেতনতামূলক পাঁচটি উপদেশ শেয়ার করেন।
আরও পড়ুন:
ঘোষণা পাল্টালেন সেই আওয়ামী লীগ নেতা: মৃত নয়, জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরলে পুরস্কার
রাসেলস ভাইপার মারলে অর্ধলক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা আওয়ামী লীগ নেতার
রাজবাড়ীতে কামড় দেওয়া রাসেলস ভাইপার নিয়ে হাসপাতালে কৃষক
রাসেলস ভাইপার এবার সাতক্ষীরার কলারোয়ায়
রাসেলস ভাইপার মারলে অর্ধলক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা আওয়ামী লীগ নেতার