অ্যাডিনোভাইরাস: সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেই হিলি স্থলবন্দরে

ভাইরাস ঠেকাতে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, বাইরে থেকে ঘরে ঢুকতে কাপড় ছেড়ে শিশুদের সামনে যাওয়া জরুরি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জিয়া শাহীনবগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 06:31 AM
Updated : 15 March 2023, 06:31 AM

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ। কিন্তু চিকিৎসা, ভ্রমণ, ব্যবসাসহ নানাকারণে বাংলাদেশের মানুষের সেখানে নিত্য যাতায়াত থাকলেও ভাইরাসটি নিয়ে সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থাই দেখা যাচ্ছে না হিলি স্থলবন্দরে। ফলে দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এবং সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সেখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেউ না কেউ অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত। কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অন্তত ১০ দিন পর্যন্ত ভুগতে হচ্ছে।  যথাযথ কোনো ঔষধ না থাকায় প্যারাসিটামলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে আক্রান্তদের।

করোনাভাইরাসের মতো অ্যাডিনোভাইরাসও আক্রান্ত একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াতে পারে। 

আক্রান্ত রোগীর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে হাঁচি, কাশি লেগেই থাকে। রোগীরা খাবারের প্রতি অনীহা এবং খাবার বিস্বাদ লাগা, খেতে বিরক্তিবোধ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। 

পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটের বাসিন্দা সুভেন্দু দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই অ্যাডিনোভাইরাস এখন প্রায় ঘরে ঘরে। আমার চার বছরের বাচ্চা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ছোটদের এন্টিবায়োটিকও দেওয়া যায় না।“

বাংলাদেশ থেকে ভারতের সিকিমে ঘুরতে যাওয়া বগুড়ার মোহসীন আলম জানান, সিকিমে যাওয়ার পরই নিজের এবং তার সাথে যাওয়া আরও দুই জন ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর সর্দি, কাশি। কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না এবং খাবারের কোনো স্বাদও পাওয়া যায় না। তাই ভ্রমণ অসম্পূর্ণ রেখেই এখন দেশে ফিরে আসছেন।

ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় বালুরঘাটের ভেক্টর বন্ড ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কর্মী মিঠু সাহা ঘোষের সঙ্গে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাইরাসটি ঠেকাতে সরকার সচেতনামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৮ মার্চ আমাদের ব্লকে সেমিনার হয়েছে। সেখানে ডেঙ্গু ছাড়াও অ্যাডিনোভাইরাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে। 

“সেমিনারে সতর্ক করে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মত না হলেও করোনার মতই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, বাইরে থেকে ঘরে ঢুকতে কাপড় ছেড়ে বাচ্চাদের সামনে যাওয়া এমনটি বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।”

এদিকে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করতে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা ওই ভাইরাস বহন করে আনার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও তা পরীক্ষার জন্য কোনো দেশের স্থলবন্দরেই নেই স্বাস্থ্যকর্মী বা কেনো ধরনের সতর্কতা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই শত শত মানুষ যাতায়াত করলেও তাদের অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করছে না।

হিলি (বাংলাদেশ) ইমিগ্রেশন ওসি আশরাফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনলাইনে অ্যাডিনোভাইরাসের ব্যাপকতা ভারতে বেড়েছে জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক দৃষ্টিও রেখেছি।

“এ বিষয়ে হিলি হাকিমপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে কথাও বলেছি। ইমিগ্রেশনে অন্তত  স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করাটা জরুরি। তারা দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নিবে বলে জানিয়েছে।   

তিনি বলেন, প্রথম দিকেই সতর্ক হতে হবে। তা না হলে করোনার মত অবস্থা হবে। অবশ্যই মাস্ক নিয়ে ভারতে যেতে হব এবং যারা আসবেন তাদেরও মাস্ক পরেই আসতে হবে।”

বগুড়ার বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টিএমএসএসের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে এই ভাইরাস করোনার মত অতটা ভয়ংকর নয়। তবে এই ভাইরাস অ্যাটাক করলে তাকে ভুগতে হবে।” 

তিনি বলেন, “এটা দেখার জন্য ঢাকায় একটি সেল আছে। তারাই সঠিকভাবে বলতে পারবে বাংলাদেশে আছে কি নাই। তবে অন্য দেশ থেকে কেউ বহন করে আনতে পারে। সেজন্য সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।”

এ বিষয়টি নিয়ে বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা   সামির হোসেন মিশু বলেন, “অ্যাডিনোভাইরাস বিভিন্ন ধরণের হয়, পশ্চিমবঙ্গের ছড়ানো ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা জরুরি।

“এখনো দেশে এই ভাইরাস ছড়ানোর কোনো তথ্য না পেলেও যে কোনো সময়ই ছড়ানো আশঙ্কা আছে। সেজন্য ভারতগামী ও ভারতফেরত যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”

আরও পড়ুন:

Also Read: কলকাতায় ‘নতুন আতঙ্ক’ অ্যাডিনোভাইরাস

Also Read: অ্যাডিনোভাইরাস: রোগীতে ঠাসা কলকাতা, সতর্কতা নেই ঢাকায়