২০ দিন পর উৎপাদনে পায়রা, লোডশেডিং কমার আশা

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে এখন দেশে লোডশেডিং দেড় হাজার মেগাওয়াটের কম। পায়রার অর্ধেকটা উৎপাদনে আসায় সেটি আরও কমে আসবে।

পটুয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2023, 11:30 AM
Updated : 25 June 2023, 11:30 AM

কয়লা সঙ্কটে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ২০ দিনের মাথায় পটুয়াখালীর পায়রায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট উৎপাদনে ফিরল। এতে জাতীয় গ্রিডে ছয় শতাধিক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে।

রোববার বিকেল ৪টায় ওই ইউনিটটি চালু হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশের আলম।

গত ২০ দিন কেন্দ্র বন্ধ থাকার সময়টাকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলো করে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এই প্রকৌশলী বলেন, “প্ল্যান্টে একটা শিডিউল মেনটেইন্যান্স থাকে। কয়লা না থাকায় প্ল্যান্টটি যে বন্ধ ছিল, সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছি আমরা। পরে শিডিউল মেনটেইন্যান্স যেটা ছিল, সেটাকে এগিয়ে এনে আমরা সেটা করে ফেলেছি।” 

এই কেন্দ্রের অপর ইউনিটটি কবে চালু হবে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

কয়লার অভাবে গত ২৫ মে বন্ধ হয় পায়রার প্রথম ইউনিট। তীব্র গরমে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুতের যাওয়া আসার মধ্যে ৫ জুন বন্ধ হয় দ্বিতীয়টি। এরপর বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে।

দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের দিন বিদ্যুৎ সংকটের অবসানে দুই সপ্তাহের সময় চান জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এর পর কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃষ্টি শুরু হলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে। এতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে পরিস্থিতি খারাপ বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসছে।

দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার দিনই পায়রা চালু হতে ২০ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। গত শুক্রবার ভোরে ‘এমভি অ্যাথেনা’ নামের জাহাজটি ৪১ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরের ইনারে ভিড়ে।

সেদিনই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহ মনি জিকো জানান, শনিবার রাত অথবা রোববার সকাল থেকে কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু করা হবে।

কেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। সে হিসাবে শুক্রবার আসা জাহাজের কয়লা দিয়ে একটি ইউনিট সাত তিন চালু রাখতে পারবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরও ১৭টি জাহাজ কয়লা নিয়ে আসবে। ফলে এবারের মতো সঙ্কটের আশঙ্কা করছে না তারা।

Also Read: কয়লার অভাবে ধুকছে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে এখন দেশে লোডশেডিং দেড় হাজার মেগাওয়াটের কম। পায়রার অর্ধেকটা উৎপাদনে আসায় সেটি আরও কমে আসবে।

রোববার দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ১০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ১৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

শনিবার দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৮৫৮ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ১৩ হাজার ৯০৬ মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়েছে।

যে কারণে সংকট

বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালিত হত। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের সমান মালিকানায় বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে আলাদা একটি কোম্পানি গঠিত হয়।

কেন্দ্রটিকে ৬ মাস বাকিতে কয়লা দিয়েছে সিএমসি। পরে আরও ৩ মাসের বকেয়াসহ ৯ মাসে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ৩৯ কোটি ডলার। এই বকেয়া ডলার সংকটের কারণে পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে চীন থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ডলার সঙ্কট মেটাতে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে পরে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক একশ কোটি ডলার দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়লার যে সংকট দেখা দিয়েছিল তা পুরোপুরি কেটে গেছে। এখন থেকে ২/৪ দিন পর পর কয়লার জাহাজ আসবে। পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ চলবে।”