কুষ্টিয়ায় ‘গাছে বেঁধে নির্যাতনের’ চার মাস পর যুবকের মৃত্যু

বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধে সাফিকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার চাচা ও চাচাত ভাইরা- এমনটা দাবি নিহতের পরিবারের।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2023, 11:37 AM
Updated : 27 March 2023, 11:37 AM

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ‘গাছে বেঁধে নির্যাতনের’ ঘটনার প্রায় চার মাস পর এক যুবক মারা গেছেন। পরিবারের দাবি, তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার চাচা ও চাচাত ভাইরা।

সোমবার সকালে উপজেলার হাটশ হরিপুর বোয়ালদাহ গ্রামের বাড়িতে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেন খাঁন।

২৫ বছর বয়সী মৃত সাফি আলী ওই গ্রামের নদীরকুল এলাকার মতিয়ার রহমানের ছেলে। তিনি নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন।

স্থানীয়দের বরাতে দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, গত বছরের ২০ নভেম্বর সাফিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় তার চাচা ও চাচাত ভাইরা। পরে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ব্যাপক মারধর করা হয়।

“গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নেওয়া হয়। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পারায় কয়েক দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে যান সাফি।”

তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে মস্তিস্কে আঘাতজনিত ক্ষত নিয়ে ভুগছিলেন সাফি। সোমবার সকালে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে স্বজনরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক সফিকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক হোসেন ইমাম বলেন, “প্রায় চার মাস আগে সাফিকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত হয়েছে।”

নিহতের মা বেবি খাতুন (৪৫) বলেন, “বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধে ভাসুর কামাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে তার ছেলেদের দিয়ে আমার পরিবারের লোকজনকে মারধরের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন।

“এরই জেরে কামালের ছেলে তোফাজ্জেল (৩৫), তুষার (৩০), সুজন (২৫), মোফাজ্জেল (২২) আমার ছেলে সাফিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে বোয়ালদ্হা গ্রামের মেছুয়াপাড়ায় তাদের বাড়িতে নিয়ে হাত-পা বেঁধে রড দিয়ে মারধর করে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রথমে তাকে উদ্ধার করতে না পেরে বিষয়টি পুলিশকে জানাই। পরে তাদের সহযোগিতায় অচেতন অবস্থায় সাফিকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই।

“হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসা শেষে সাফিকে বাড়িতে নিয়ে আসি। অভাবের কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়াতে পারি নাই। সাফি ছিল আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। আমি এ হত্যার বিচার চাই।”

সেই সময় মারধরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা করেন বেবি খাতুন। তবে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে নিহতের চাচা কামাল হোসেনের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

মামলা হওয়ার কথা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই জিন্নাহ আহমেদ মোবাইল ফোনে জানান, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।