চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও তেলসহ নানা ধরণের ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ২০০ টন মালামাল নিয়ে জাহাজটি সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
Published : 14 Jun 2024, 09:25 PM
মিয়ানমার উপকূল থেকে গুলিবর্ষণের কারণে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াতকারী নৌযান চলাচল ৯ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
এই সংকট কাটিয়ে দ্বীপের ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এবং একটি জাহাজ কোম্পানির সহায়তায় শুক্রবার খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে জাহাজ পাঠানো হয়েছে সেন্ট মার্টিনে।
একইসঙ্গে জাহাজটিতে করে সেন্ট মার্টিন ফিরেছেন দ্বীপটির অন্তত দেড়শো বাসিন্দা।
শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট থেকে ‘এমভি বারো আউলিয়া’ জাহাজে করে এসব খাদ্য ও নিত্যপণ্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সকাল ১০টা থেকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ‘এমভি বারো আউলিয়া’ নামের জাহাজটিতে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও তেলসহ নানা ধরণের ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তোলা হয়। পরে অন্তত ২০০ টন মালামাল নিয়ে জাহাজটি সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন বলেন, দ্বীপের জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে মালামাল নিয়ে জাহাজটি পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারে কাজে এসে আটকে পড়া সেন্ট মার্টিনের ১৫০ জনের মতো বাসিন্দা এই জাহাজে করে ফিরে গেছেন।
এর পাশাপাশি দ্বীপে কর্মরত বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের সদস্যরাও তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য নিয়ে এই জাহাজে করে কর্মস্থলে গেছেন।
তিনি বলেন, এই জাহাজে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব মালামালের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিএফ চাল, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ঈদের উপহার এবং পাঁচটি কোরবানির পশু পাঠানো হয়েছে।
পণ্যবাহী এ জাহাজটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছাতে রাত ৯টা নাগাদ সময় লাগতে পারে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
তবে রাত ৯টার দিকে জাহাজে থাকা সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাগর উত্তাল থাকায় জাহাজটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আরও ঘণ্টা খানেকের মধ্যে জাহাজটি দ্বীপে পৌঁছাবে বলে আশা করছি।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে গত এক মাস টেকনাফসহ উপকূলীয় এলাকা মোটামুটি শান্তই ছিল। কিন্তু ৫, ৮ এবং ১১ জুন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্ট মার্টিনগামী নৌযানে গুলি করা হয়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফ ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এর মধ্যে বুধবার দুপুরে নাফ নদীতে দেখা মিলে মিয়ানমারের নৌ-বাহিনীর জাহাজ। এরপর রাত থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার হতে থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে।
সেন্ট মার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এক সপ্তাহ ধরে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া জলসীমা এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এ কারণে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দ্বীপে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে ৭ দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় সেন্ট মার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক হোটেল শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ টেকনাফ পৌঁছান। এ সময় টেকনাফ থেকে বিকল্প সাগর পথে চারটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক লোক সেন্ট মার্টিনে ফিরেন।
আরও পড়ুন:
৭ দিন বন্ধের পর বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিন থেকে এল নৌযাননাফ নদীতে যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি,‘বেড়েছে'গোলাগুলি
বিকল্প পথে বৃহস্পতিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পণ্য ও যাত্রী যাবে
মিয়ানমার থেকে আবারও সেন্ট মার্টিনগামী স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি
সেন্ট মার্টিনগামী ট্রলার লক্ষ্য করে ফের মুহুর্মুহু গুলি
সেন্ট মার্টিন থেকে ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে ট্রলারে গুলি
মিয়ানমারে সংঘাত: ফের বিস্ফোরণের শব্দ,আতঙ্ক
মিয়ানমারে যুদ্ধ: রাখাইনের যে খবর পাচ্ছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারের গুলি এসে ভেদ করল টেকনাফের বাড়ির দরজা
তুমব্রু সীমান্তে রাতেও গোলাগুলি, পরিদর্শনে ডিসি-এসপি
মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক
সীমান্তে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ বিজিবি মহাপরিচালকের
বিদ্রোহী জোটের হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া, কোণঠাসা মিয়ানমার জান্তা
জান্তা আমলে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে: ভলকার তুর্ক
জরুরি অবস্থার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা মিয়ানমার জান্তা সরকারের
ভারতে পালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনারা, উদ্বিগ্ন মিজোরাম
প্রত্যাবাসন: রাখাইন ঘুরে ‘উন্নতি’ দেখেছে আরআরআরসি, রোহিঙ্গারা হতাশ
মিয়ানমারে পেরে উঠছে না জান্তা বাহিনী, সমর্থন হারাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং
বিদ্রোহী জোটের হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া, কোণঠাসা মিয়ানমার জান্তা