৫ অগাস্ট নগরীর সাগরপাড়া কল্পনা হল মোড়ে গুলিবিদ্ধ রায়হান ৮ অগাস্ট সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
Published : 20 Aug 2024, 12:07 PM
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নেতাকে হত্যার মামলায় সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ এক হাজার ২৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে নিহত রায়হান আলীর ভাই রানা ইসলাম (২১) বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন থানার ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ।
নিহত রায়হান আলী (২৭) পুঠিয়া উপজেলার মঙ্গলপাড়া গ্রামের মুসলেম আলীর ছেলে। রাজশাহী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করা রায়হান রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ৫ অগাস্ট বেলা সোয়া ১টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া কল্পনা হল মোড়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন রায়হান।
পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ অগাস্ট সন্ধ্যায় মারা যান।
ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে এক হাজার ২০০ জনকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাহেববাজারের দিকে অগ্রসর হলে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে রুবেল, রাজীব, রনিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার উপর গুলি করে।
তাদের আক্রমণে মারুফ মর্তুজা, ইব্রাহীম আলী, মারুফ আল হাসান, মেহেদী হাসানসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেলে রায়হান আলী তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে যান।
তখন যুবলীগ নেতা জহিরুল হক রুবেল তার হাতে থাকা রিভলভার দিয়ে রায়হানের মাথায় গুলি করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ওসি আরও জানান, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ছাড়াও মামলায় আটজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক প্যানেল মেয়র ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শাহমুখদুম থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক সুমন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজামুল আযিম, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান হোসেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত হোসেন সাহু।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমন, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফিক, মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান, যুবলীগ নেতা জহিরুল হক রুবেল, মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাজীব, ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি বাপ্পী চৌধুরী রনি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল গালিব, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুবিন সবুজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান কালু।
মামলা দায়েরের সময় থানায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আবু মোহাম্মাদ সেলিমসহ দলটির নেতাকর্মীরা ।
মামলা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে মামলায় আসামি করা হয়েছে। কাউকে হয়রানিমূলক আসামি করা হয়নি। আশা করছি পুলিশ দ্রুত তদন্ত শেষে করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবে।”