গত বছর ১০ হাজার ১৫০টি বস্তায় আদা চাষ হলেও এ বছর তা বেড়ে ৬০ হাজারে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
Published : 18 Jan 2025, 10:01 AM
আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কৃষকরা। খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই চাষের জনপ্রিয়তা।
এ পদ্ধতির চাষে অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হয় না, তাই বাড়ির আশপাশ, পুকুরপাড়, ছায়াযুক্ত স্থান এবং পতিত জায়গায় আদা ফলাতে পারছেন কৃষকরা।
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার বলেন, খরচ কম এবং প্রাপ্তি বেশি হওয়ায় কৃষকেরা এই পদ্ধতিকে সাদরে গ্রহণ করছেন। গত বছর উপজেলায় ১০ হাজার ১৫০টি বস্তায় আদা চাষ হলেও এ বছর তা বেড়ে ৬০ হাজারে পৌঁছেছে।
সরেজমিনে পাটগ্রামের বাউরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিধান চন্দ্র রায়ের (৪৫) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুপারি বাগানের ফাঁকে, পুকুরপাড়ের দুই ধারে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে বস্তা। এ সব বস্তায় লাগানো হয়েছে আদা এবং চুই গাছ।
এসব বস্তার আদা গাছের পাতা সোনালি রঙ ধারণ করায় বোঝা যাচ্ছে, এগুলো উত্তোলনের সময় হয়ে এসেছে।
বিধান চন্দ্র রায় বলেন, “উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৩ হাজার বস্তায় আদা চাষ শুরু করি। বর্তমানে প্রতি বস্তায় এক কেজি আদা উৎপন্ন হয়েছে।”
“আমার এই চাষ দেখে এলাকার অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। আমি তাদের চাষ পদ্ধতি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “এবার যদি ভালো দাম পাওয়া যায়, তাহলে আগামীতে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরজাহান বেগম বলেন, “আমরা স্কুলের ছাদে বস্তায় আদাসহ ফুল ও অন্যান্য সবজি আবাদ করেছি। আদার ফলনও ভালো হবে আশা করছি।”
ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবীনগর গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান বলেন, “গত বছর সামান্য কিছু বস্তায় আদার চাষাবাদ করে ভালোই লাভ হয়েছিল। তাই এবার দুইশ বস্তায় আদা লাগিয়েছি।
একই এলাকার আরেক কৃষক মো. রেজাউল করিম বলেন, “বস্তায় আদা চাষ বেশ লাভজনক, কারণ পরিত্যক্ত জায়গায় চাষ করা যায়। এই চাষাবাদ নিয়ে চিন্তাও করতে হয় না।”
বাউরা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজু হোসেন বলেন, “বস্তায় আদা চাষে মাটিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বস্তা সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাই আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের এই পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার বলেন, “বস্তায় আদা চাষ একটি সহজ এবং লাভজনক পদ্ধতি। এতে বাড়তি জমির প্রয়োজন হয় না। পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এটি বাণিজ্যিকভাবে দারুণ সম্ভাবনাময়। ফলে পাটগ্রামে বস্তায় আদা চাষের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।”