পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ইউএনও।
Published : 24 May 2024, 09:32 AM
বর্ষা মৌসুমের আগেই যমুনার ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে পাবনার বেড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। বিলীন হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি-ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও মসজিদ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিলেও ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজ শুরু করেননি।
ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নদী পাড়ে বিশেষ প্রার্থনা করেছেন গ্রামবাসী। জনসাধারণের সম্পদ রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলার হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাগদাহ, হাঁটাইল, আরালিয়া, চর সাঁড়াশি, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাই পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম যমুনা নদীর তীরে।
জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই এসব গ্রামে দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর ভাঙন। গত দুই সপ্তাহে লেওলাইপাড়া গ্রামে অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি ও চর সাঁড়াশি গ্রামে ১৫-২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসবাসের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই।
বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন ভারেঙ্গার লেওলাই পাড়ায় নদীপাড়ের ফসলি জমি কিছু সময় পর পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে যমুনায় বিলীন হচ্ছে। সে দৃশ্য দেখে বাসিন্দাদের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ।
ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই এলাকায় মানুষের দিন কাটছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায়। চর সাঁড়াশি ও চর নাগদাহ গ্রামের ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষগুলো আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
চর নাগদাহ গ্রামের কৃষক হামিদুল হক বলেন, “নদী ভাঙনে আমি পাঁচবার বসতভিটাসহ প্রায় ১০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহ খানেক আগে আবারও বসতভিটা হারিয়েছি।
“আমার এ দুর্দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের গ্রামের পুরো একটি পাড়া নদীতে চলে গেছে।”
হাটাইল চরের কৃষক জয়েন উদ্দিন মোল্লা বলেন, “প্রতি বছরই বর্ষাকালে আমাগেরে চরের মানুষ নদী ভাঙনে বাড়িঘর জমি হরায়। এবার আবার এই অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হইছে। কয়দিন আগে আমার দুই বিঘা বোরো ধান ও এক বিঘা তিল ক্ষেত নদী গিলে খাইছে। সব মিলিয়ে আমি প্রায় ১০ বার এ নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি।
“আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে এই নদী। নতুন বাড়ি করেছি, এক সপ্তাহ এই ভাঙন থাকলে এটাও হয়তো চলে যাবে। সরকারের কাছে আবেদন নদীতে যেন অন্তত বালির ব্যাগ ফেলে আমাদের রক্ষা করে।”
নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, “দুই সপ্তাহ ধরে আমার ইউনিয়নের লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এই কয়দিনেই অর্ধশতাধিক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
“ঝুঁকিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে মাটি ফেলে উদ্বোধন করা ‘মুজিব বাঁধ’ নামের প্রধান বাঁধসহ সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদরাসাসহ ঘনবসতি দুই তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি।”
ভাঙন রোধে পাউবোর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে তিনি জানান।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা নেই, আমি খোঁজ-খবর নিয়ে পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
এ বিষয়ে পাউবোর পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, “এর মধ্যে বেড়ার যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। আমরাও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। অতি দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”