“বর্তমানে ফরিদপুরের বাজারগুলোতে পাইকারি পেঁয়াজের দর রয়েছে মণ প্রতি এক হাজার একশ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত।”
Published : 09 Apr 2025, 02:36 PM
মাঠ থেকে পেঁয়াজ উত্তোলনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফরিদপুরের চাষিরা। কিন্তু তাদের চোখে মুখে মলিন হাসি। কারণ পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই জেলায় উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় ফসলটির বাজারদর বেশ কম।
ফরিদপুরের সালথা, বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কেউ ক্ষেত থেকে মাটি খুচে পেঁয়াজ তুলছেন, কেউ পাত্রে তুলে বস্তায় ভরছেন।
কেউবা মাঠ থেকে বস্তাটা মাথায় করে নিয়ে সড়কে তুলে নিচ্ছেন। আবার কেউ ভ্যান বা নছিমন যোগে বাজারে নিচ্ছেন বিক্রির উদ্দেশ্যে।
অধিকাংশ উপজেলা বিস্তীর্ণ মাঠের দিকে তাকালেই এমন দৃশ্য চোখে মেলে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছরের পেঁয়াজের ভালো দর পাওয়ায় এবার চাষিরা সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও পাঁচ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ করেছেন।
কিন্তু উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজার দরের পার্থক্য অনেক, তাই এখন লোকসানের শঙ্কায় আছেন পেঁয়াজ চাষিরা।
বোয়ালমারী ঘোষপুর ইউনিয়নের চাষি আসুতোষ মালো বলেন, “বর্তমানে ফরিদপুরের বাজারগুলোতে পাইকারি পেঁয়াজের দর রয়েছে মণ প্রতি এক হাজার একশ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত।”
যদিও এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদনের ব্যয় হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। তাছাড়া মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফলনের দেখাও কাঙ্ক্ষিতভাবে মেলেনি বলে জানান তিনি।
সালথা উপজেলার পেঁয়াজ চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, “এ বছর প্রতি মণ পেঁয়াজ
উৎপাদনে কৃষকের হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। মণ প্রতি পেঁয়াজ ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা হলে লাভের মুখ দেখা সম্ভব। ”
একই উপজেলার সেলিম মোল্লা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বৃষ্টিপাত এবং খরার সঙ্গে মিলিয়ে পেঁয়াজের আবাদে সমস্যা হচ্ছে।”
একই কথা জানালেন মোস্তাফিজসহ জেলার পেঁয়াজ চাষিরা।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৩ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়। তখন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ছয় লাখ টনের বেশি। পরে আরো প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়।
সব মিলিয়ে জেলায় এবার পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এ থেকে প্রায় সাত লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহাদুজ্জামান বলেন, “এটা ঠিক যে এবার পেঁয়াজের দামে খুব একটা খুশি না চাষিরা।”
কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাজারে পেঁয়াজের যোগান বেড়েছে অনেক, সেই তুলনায় ক্রেতাদের চাহিদার কম থাকায় দরটি পড়ে গেছে।
“আমার পরামর্শ, এই মুহূর্তে পেঁয়াজ বিক্রি না করে কয়েক মাস পরে বিক্রয় করলে ভালো দর পাওয়া সম্ভব হবে।”