সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে সিরাজগঞ্জের নাজমুল ছিলেন।
Published : 15 May 2024, 08:08 PM
“পুরো রমজান মাস প্রার্থনা করেছি, আল্লাহ যেন আমার সন্তানকে বুকে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। আমার বুকের ধন আমার কাছে ফিরে এসেছে। ছেলেকে পেয়ে আমার বুকটা শীতল হয়ে গেছে।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নাজমুল হক হানিফের মা নার্গিস বেগম।
এমভি আবদুল্লাহ বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় নোঙ্গরের দুই দিন পর বুধবার ভোরে উপজেলার চরনবীনগরে নিজ বাড়িতে পৌঁছান নাজমুল হক। ছেলেকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নার্গিস বেগম ও বাবা আবু সামা। তাদের পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে।
নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, “ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর পরিবারে কালো ছায়া নেমে এসেছিল। তাকে ফিরে পেয়ে এতটা আনন্দ পাচ্ছি যে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ঈদেও এত খুশি হই না। আমার কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।”
নাবিক নাজমুল সাংবাদিকদের বলেন, “সোমালিয়ার সময় সকাল ১০টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটি দখলে নেয়। তারা সবাইকে বন্দি করে আমাদের দিকে বড় বড় অস্ত্র তাক করে রেখেছিল। তবে জলদস্যুরা মুসলমান হওয়ায় কিছুটা সহানুভূতি দেখিয়েছে। জাহাজে ওরা (জলদস্যু) ও আমরা আলাদা রান্না করে খেয়েছি।”
তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে ভাবতাম বাড়ি ফিরতে পারব কি-না, মা-বাবার সঙ্গে আর দেখা হবে কি-না। এ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় থাকতাম। তবে যেদিন থেকে জানতে পেরেছি জলদস্যুরা মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ ছেড়ে দিয়েছে, তখন আশায় বুক বেঁধেছিলাম।
“দেশের মাটিতে পা রেখে খুব ভাল লেগেছে। আজ বাড়িতে এসে মা-বাবাসহ স্বজনদের কাছে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে।”
জিম্মিদশা থেকে ২৩ নাবিককে সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নাজমুল হক ও তার স্বজনরা।
১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করে দস্যুরা।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ৩৩ দিন পার করার পর গত ১৩ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে যায়। এরপর দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি।
এমভি আবদুল্লাহ শুরুতে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে। সেখানে জাহাজে থাকা কয়লা খালাস করা হয়। এরপর ওই বন্দরেই পণ্য লোডের পর মিনা সাকার বন্দরে যায় আবদুল্লাহ। সেখান থেকে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে থেমেছিল জ্বালানি নিতে। এরপর দুবাই থেকে ৩০ এপ্রিল রওনা হয় চট্টগ্রামের উদ্দেশে। বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে জাহাজ প্রবেশের খবর আসে বৃহস্পতিবার।
জিম্মি দশার দুই মাস পর দেশে ফিরে এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করা হয়। সোমবার রাতেই সেখানে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়। জাহাজে ৫৬ হাজার টন পাথর ছিল। সেখান থেকে লাইটার জাহাজ জাহান মনি-৩ নাবিকদের নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি-১) জেটিতে ভেড়ে নাবিকদের বহনকারী জাহাজটি।
আরও পড়ুন:
অপেক্ষার অবসান, পরিবারের কাছে ফিরলেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা