“আমরা জানি, নির্বাচনে কারচুপি হবে, তবুও আমরা যাই। কারণ বিকল্প নেই” বলেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
Published : 31 Jul 2022, 06:25 PM
নির্বাচনে কারচুপি ঠেকাতে আগের রাতের বদলে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গত জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেছেন, “একটা প্ল্যান করে করা যায়- ব্যালট পেপার সকালে চলে যাবে। তাহলে রাতের (ভোট চুরির) বিষয়টা আর আসে না। রাতে কিন্তু এটা হয়। হয় মানে কি (সহাস্যে), আমরাই করেছি, কি বলব- হয়ই; এরকম হয়। হয় না এটা ঠিক না।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের শেষ দিনে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকে বসেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। দুই ঘণ্টার এই সংলাপে জাতীয় পার্টির ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব চুন্নু।
আলোচনায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রার্থীদের অনুমোদিত ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচনী পদ্ধতিরও পরিবর্তন চেয়েছে দলটি।
রাজনীতির পাশাপাশি সমাজের সর্বত্র মূল্যবোধ ‘সার্বিকভাবে নষ্ট হয়েছে’ মন্তব্য করে জাপা মহসাচিব বলেন, “নির্বাচনের বিষয়টা যদি বলি, ভোট কেনার বিষয়টা সহজ…। কিনল, কেউ বললো রাতের বেলা কিছু ব্যালট ভরে গেল… হয় কি, মেইন ক্যান্ডিডেট থাকে দু-তিন জন। ইউনিয়ন কাউন্সিলে সমস্যা হয় না। দু-তিন জন ক্যান্ডিডেট হলে সরাসরি কন্ট্রোল করা সম্ভব না।”
চুন্নুর ভাষা, “যার টাকা আছে, তারা এগুলো করে। ব্যালট পেপারটা যদি ভোরে (কেন্দ্রে) পাঠানো যায়, তাহলে অন্তত করাপশনটা আংশিকভাবে এখানে কমবে।“
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ‘অংশগ্রহণমূলক’ ভোট আয়োজনে ইসির সর্বাত্মক চেষ্টার কথা পুর্নব্যক্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চান।
নির্বাচন পদ্ধতি
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বর্তমান পদ্ধতির বদলে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে ভোটের প্রস্তাব তোলেন।
বর্তমান পদ্ধতিতে ভোটারদের সরাসরি ভোটে প্রতিটি আসনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ গঠিত হয়। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রবর্তন হলে সংসদে আসন বণ্টন হবে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত মোট ভোটের আনুপাতিক হারে।
চুন্নু বলেন, “আমরা জানি- ইলেকশন সিস্টেমটাই এখানে সমস্যা। আসলে ফেরেশতা এলেও কিছু করতে পারবে না। কারণ, পলিটিক্যাল পার্টিরা যদি চেঞ্জ না হয়, নেতারা সহযোগিতা না করে তাহলে সম্ভব না। আপনাদের দোষারোপ করতে সহজ, কথা বললে পয়সা লাগে না। কথা বেশি বলে।“
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে জাপা মহাসিচব বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রয়োজন। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার বিষয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলগুলোর ঐকমত্য যদি না হয় আপনারা পারবেন না। যতই আইন করেন না কেন, এটা সাময়িকভাবে চেষ্টা করতে পারেন।”
সার্বিকভাবে ইসির ‘আন্তরিকতা’ থাকলেও সরকার ও দল যদি আন্তরিক না হয় নির্বাচন সুষ্ঠু করা ‘দুরূহ’ বলে মন্তব্য করেন চুন্নু।
তিনি বলেন, “১৯৯১ থেকে প্রত্যেকটা নির্বাচন গেছে জাপা।... আমরা জানি, নির্বাচনে কারচুপি হবে, তবুও আমরা যাই। কারণ বিকল্প নেই। আমরা অন্য কোনো দলের মতো নির্বাচন বর্জন আমরা করিনি।”
চুন্নুর অভিযোগ, নির্বাচনী পদ্ধতি পরিবর্তনে বড় দুই রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা নেই।
“রাজনৈতিক দল চাইলে বিল আনতে সময় লাগে না। সিস্টেম চেঞ্জ করতে সময় লাগে না। কিন্তু চাইবে কিনা, চাচ্ছে না। কিছু কিছু বিষয়ে ভালো পদ্ধতি বড় দুইটা দল কেউই চায় না। বড় দুটি দল চাইলে সম্ভব; তারা না চাইলে ইসি করতে পারবে ন।... বেসরকারি বিল এনে তো লাভ নেই।”
জাপা মহাসচিব নিজেদের ‘আশাবাদী’ হিসেবে তুলে ধরে বৈঠকে বলেন, “আমরা আসলে সব খারাপ লোক নই। রাজনৈতিক দল আমরাও আসলে খারাপ না, এখনও ভালো মানুষ আছে। এ ভালো মানুষের কারণে আস্তে আস্তে সমাজে চেঞ্জ আসবে। আমি হতাশাগ্রস্ত না, আমি খুব আশাবাদী।... একটা দল আরেকটা দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছি, মানসিকভাবে আমরা অনেক বদলেছি, এগিয়ে যাচ্ছি। পিছিয়ে যাচ্ছি না, সময় লাগবে।”
ইভিএম
ইভিএমের বিরোধিতা করে চুন্নু বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ওপর জনগণের এখনও ‘আস্থা আসেনি’।
“ইভিএমে আমাদের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমারও এতে আস্থা নেই। মানুষ মনে করে, ইভিএমে ভোট পাল্টে দেওয়া হলে কিছু করার নেই।... ইভিএম সম্পর্কে আপনাদের এক্সপার্টদের কথাও আমার মাথায় ঢোকেনি। জনগণের আস্থা বিশ্বাস ছাড়া ইভিএম ব্যবহার যৌক্তিক হবে না।”
নির্বাচনী ব্যয়
আনুপাতিক প্রতিনিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতির পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর নির্বাচনী খরচ ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ করার প্রস্তাব করেছে বিরোধী দল।
জাপা মহাসচিব বলেন, “ব্যয় নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে। হয় ব্যয়সীমা তুলে দেন, নতুবা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা করেন।”
তার ভাষায়, নির্বাচনে এখন একটা বড় সংকট হল মানুষের ‘আস্থার সংকট’।
সহায়তা পেলে ‘অনেক ফসল’ তুলে আনা সম্ভব
সংসদ নির্বাচনের কাজটি ‘জটিল’ মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন করার সাধ্যমত চেষ্টা তারা করবেন।
“সরকার সহযোগিতা করবে। সংসদ নির্বাচনের কাজটা জটিল। সে লক্ষ্যেই সবার আন্তরিক সহযোগিতা থাকলে জটিল, কঠিন কাজ হলেও অনেকটা ফসল তুলে আনা যাবে।“
সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ থেকে পাওয়া লিখিত ও মৌখিক পরামর্শ পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন মতামত জানাবে।
“আমি মনে করি, নির্বাচনের মাঠে যদি প্রতিপক্ষ থাকে, দলগুলো থাকে, তাহলে ভারসাম্য হয়ে যায়।”
চুন্নু ছাড়াও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল ইমাম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভূইয়া, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু সংলাপে অংশ নেন।
আরও পড়ুন:
ভোটে সুন্দর পরিবেশের জন্য আগে দরকার সহমত: সিইসি
ইসির সংলাপে ২৬ দলের ৩ শতাধিক প্রস্তাব
রাজনীতির মাধ্যমে ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’ চান সিইসি
নির্বাচন বাঁচিয়ে না রাখলে রাজনীতি উধাও হবে: সিইসি
রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ? ‘বিশ্বাস করতে চান না’ সিইসি
ভোট সুষ্ঠু করতে দোয়াও চান সিইসি