প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, কোনো দলকে নির্বাচনে আসতে ইসি ‘বাধ্য করতে পারে না’, সেটা কমিশনের ‘দায়িত্বও নয়’।
Published : 24 Jul 2022, 04:19 PM
সুষ্ঠুভাবে ভোট আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি দোয়াও চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, “আমাদের সহকর্মীরাও বলেছেন, আল্লাহ পাকের রহমত এবং দয়া যদি না থাকে, আমাদের জন্য বিষয়টি কঠিন হবে। কাজেই আমাদের জন্য আপনারা অবশ্যই দোয়া করবেন, যেন আমরা আমাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে এবং আল্লাহর দিকে তাকিয়ে পালন করতে পারি।”
নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ষষ্ঠ দিন রোববার সিইসির এ বক্তব্য আসে। এদিন সকালে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং দুপুরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ইসি।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, “নির্বাচন একটি কঠিন ও জটিল কর্মযজ্ঞ। সকলের আন্তরিক সমবেত প্রয়াস থাকলে এমন কঠিন ও জটিল কর্মযজ্ঞ সাধন অসাধ্য নয়। নাগরিক সচেতনতা প্রয়োজন এবং সকলের আন্তরিক সহায়তা, সমবেত প্রয়াস ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে খেলাফত আন্দোলনের দাবির প্রসঙ্গ ধরে সিইসি বলেন, “কেউ বলছে নির্বাচনকালীন সরকার, কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সরকার থাকবে। নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে, সেই সরকার আমাদেরকে সহায়তা করবে। সেটি সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব হবে।”
মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন সংলাপে অংশ নেয়। চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার লিখিত বক্তব্যে বলেন, জাসদ মনে করে- কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই সেই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।
“কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়সহ কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেই ইসির জড়িত হওয়া বা মতামত, বক্তব্য, মন্তব্য প্রদান করা উচিৎ নয়। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিশি সংস্থা নয়।”
জাসদ বলছে, “কতিপয় বিদেশি কূটনৈতিক ইসির কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থি ও অযাচিতভাবে নাক গলিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ এ ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থি অযাচিত নাক গলানোকে প্রশ্রয় না দেওয়া।”
পরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সংলাপে বলেন, “আমরা সবাইকে আহ্বান করব আপনারা আসেন। সবার বক্তব্য, নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়। শাসক দলকে বলতে শুনেছি- আমরা ওদেরকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছি। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি- আমরা কাউকে বাধ্য করতে পারব না, সেটা আমাদের দায়িত্বও নয়। আমাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের জন্য সবাইকে আহ্বান করা।”
জাসদের অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের দুটি গ্রুপ কমিশনে সৌজন্য সাক্ষাত করেছে, তবে কোনো ধরনের পরামর্শ তারা দেয়নি। আগের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেই তারা ইসিতে এসে সাক্ষাত করেছেন।
সংবিধান, আইন, বিধিসহ নানা ধরনের আইনগত বিষয় তুলে ধরে আউয়াল বলেন, “আমাদের ক্ষমতার খুব একটা ঘাটতি দেখছি না। ক্ষমতার খুব একটা অভাব আছে- এটা ফিল করছি না। আইনানুগভাবে প্রয়োগ করলে (যদি) সহযোগিতা দেন, সমর্থন না দিয়ে (যদি) বিরুদ্ধাচারণ করেন, তাহলে কঠিন হবে। আমাদের উপর আরোপিত ক্ষমতাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করব।”
সিইসি বলেন, তার কমিশন নির্বাচনের সময় বিধি বিধানগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সে সময় ইসির দৃষ্টিভঙ্গি ‘কঠোর হতে পারে’।
নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সিইসি বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড-এর কথা এসেছে। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে… কেউ বাড়তি সুবিধা ভোগ করে, কেউ কেউ কমতি সুবিধা ভোগ করে। কোনো দিকে পক্ষপাতদুষ্ট, আবার কোনো দিকে নীতিবান হয়ে পড়ি, অথবা ফিল্ড লেভেলে সহায়ক হওয়ার বিষয়গুলো আসছে।
“সবাই যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, আমাদের দায়িত্ব মূলত একটাই। খুব বেশি দায়িত্ব আমাদের না। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আসবে।”
সহিংতা রোধে সবার সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, “নির্বাচনে অনেক সময় সহিংস হয়ে পড়ি অথবা অসংযত হয়ে পড়ি। আপনাদের সহায়তা চাইব- ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে; কাকে দিল কাকে দিল না- এটা মাথাব্যথার বিষয় না। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চাইব। সহযোগিতা পেলে কঠিন কাজও অসাধ্য নয়।”
বিকালে বিএনপি জোটের শরিক জেএসডির সঙ্গে সংলাপের সূচি থাকলেও দলটি অংশ নিচ্ছে না। পরে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপসূচি রয়েছে।
ভোটারদের না আসা ‘গণতন্ত্রের অসুস্থতা’
বিকালে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, যাতে তারা ভোটকেন্দ্রে আসেন। ভোটাররা কেন্দ্রে না এলে বুঝতে হবে ‘গণতন্ত্রের অসুস্থতা’ রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম আবু নাছের তালুকদারের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়।
লিখিত বক্তব্যে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসির প্রতি জনগণের আস্থার সঙ্কট তৈরি হওয়ায় ক্রমাগত ভোটকেন্দ্রে বিমুখ হয়ে পড়ছে ভোটাররা।
এ প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, “আপনারা বলেছেন- ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা ঠিক যে অনেকক্ষেত্রে আমরাও দেখেছি ভোটাররা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। (আস্থা ফেরানো) এটা খুবই প্রয়োজন।
“গণতন্ত্রকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, গণতান্ত্রিক চেতনাকে যদি যত্ন করতে চাই, তাহলে অবশ্যই যারা ভোটার তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে। আর যদি ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না আসেন, তাহলে বোঝা যাবে গণতন্ত্রের অসুস্থতা রয়েছে, গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হচ্ছে।”
আইন-বিধি প্রয়োগের বিষয়ে আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, “আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে ক্ষমতা আমাদের আছে, তার মধ্যেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো।… আইন ও বিধির আলোকেই ক্ষমতা প্রয়োগ করবো। অবাধ, উৎসমুখব নির্বাচনের চেষ্টা চালাব।”