রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ? ‘বিশ্বাস করতে চান না’ সিইসি

নির্বাচনকালে ইসির অধীনে মন্ত্রণালয় থাকলে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2022, 10:43 AM
Updated : 25 July 2022, 10:43 AM

অন্য কোনো দেশ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের কোনো দলকে সমর্থন কিংবা ধমক দেবে- তেমনটা ‘বিশ্বাস করতে চান না’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আর তেমন যদি সত্যি সত্যি ঘটেও, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেই তা সামাল দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

সোমবার নির্বাচন ভবনে ইসির সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারবাহিক সংলাপের সপ্তম দিনে সিইসির এমন মন্তব্য আসে।

দুপুরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। এ সময় দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করেন।

একপর্যায়ে বাদশা প্রশ্ন রাখেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে বা কোনো বিশেষ দলের ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থেকে কোনো সমর্থন যদি থাকে, সেক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন? যদি এমন কোনো কথা উঠে আসে, এটাও আলোচনার মধ্যে থাকা দরকার।

“এমনও আছে দেশের বাইরেও দলের অফিস আছে। আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় কি না দেখতে হবে।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘বড় দেশগুলো’ উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি ‘ধমকও দেয়’ অভিযোগ করে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ ধরনের হস্তক্ষেপ হলে ইসির পাশে দাঁড়াতে চান তারা।

“আমরা দেশ কীভাবে চালাই, দেশের নির্বাচনগুলো কীভাবে হয়েছে, দেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যাগুলো রয়েছে এবং মুখোমুখি হই- এ নিয়ে তো আমরা কথা বলি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার- আমাদের দেশে পলিটিকস এমন হয়ে গেছে যে, বড় দেশগুলো আমাদেরকে এমনকি উপদেশ না, ধমক পর্যন্ত দেয়।

“এ পরিস্থিতে আমরা যেন ইসির পাশে দাঁড়াতে পারি। এক্ষেত্রে এটা আমাদের সার্বভৌম, মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য আপনাদের পাশে আমরা দাঁড়াতে চাই, জাতির মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। এ বিষয়গুলো দেখা দরকার।”

দলটির সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি হাবিবুল বলেন, “কোনো দেশ, অন্য কোনো দেশ আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেবে বা ধমক দেবে এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। এটা হলেও মাঠে পলিটিক্যাল দলকে ফেইস করতে হবে।”

সিইসি বলেন, “দেশের বাইরে থেকে কোনো দলের সমর্থন, দেশের বাইরে থেকে কোনো হুমকি-ধামকি আসে কি না- বিষয়টি পলিটিক্যালি আপনারা ফেইস করবেন। কমিশনের এ ক্ষেত্রে করার কিছু নেই; সেটা হওয়ারও কথা নয়।”

ওয়ার্কাস পার্টি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত থাকবে। ভোটের আগে ও পরের তিন মাস সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি ও অবহেলার শাস্তির কর্তৃপক্ষ হিসেবে ইসি কাজ করবে। এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না বলে মত দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

এ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে সিইসি বলেন, “ইসিকে শক্তিশালী করতে আপনারা অনেক কিছু বলেছেন। সাংবিধানিকভাবে এটা গভর্মেন্ট ন্যস্ত করলেই যে আমি নিতে পারব- আমার সন্দেহ আছে। কারণ কেবিনেট ইন রিলেটেড বাই দ্য কন্সটিটিউশন।

“হ্যাঁ, সংবিধান ও আইনকানুন সংশোধন করে যদি আমাদের উপর ন্যস্ত করা হয়, তাহলে লিগ্যালি নেওয়া যাবে। আদারওয়াইজ ইলিগ্যালি দিতে চাইলে যে আমরা নিতে পারবো বা নেবো, এ বিষয়ে আশ্বাস দিতে পারি না।”

সাংবিধানিক সংস্থা ইসি যে কোনো মন্ত্রণালয় নয়, তা মনে করিয়ে দিয়ে সঙ্কটের কথাও তুলে ধরেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

“কেবিনেট কীভাবে ফর্ম হবে, কাদের নিয়ে হবে- তা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। কাজেই নির্বাচন কমিশন ইজ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন ইজ নট এ মিনিস্ট্রি। এটা আপনারা জানেন।”

“(ইসির অধীনে মন্ত্রণালয় এলে) আমি কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হোম মিনিস্টার, ডিফেন্স মিনিস্টার বা ওই ধরনের কোনো মিনিস্টার হয়ে যাব… সেটা আরেকটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে।”

আইনে ইসিকে যে বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া আছে, সে কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, তার ধারণা অতীতে সে ক্ষমতাগুলো ‘সঠিকভাবে ব্যবহার হয়নি’। বর্তমান কমিশন আইন-বিধির কঠোর প্রয়োগ করবে।

ইসি সঠিকভাবে বিধিবিধান পরিপালন করছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

‘সরকার ইসিকে সহযোগিতা না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে’

বাংলাদেশ মুসলীগ লীগের সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, নির্বাচনকালীন ক্ষমতার কমান্ড থাকবে ইসির হাতে। এ সময় সরকার ইসিকে সহযোগিতা না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

সকালে দলটির সঙ্গে সংলাপে হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের সময় একটা সরকার ক্ষমতায় থাকবে। সরকার ইসিকে সহযোগিতা করবে।

“আমরা সরকারের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারব। আমরা বলব, সহযোগিতাগুলো আমাদেরকে দিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার তখন না করতে পারবেন না, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।

“সরকারের কাছ থেকে যে সহযোগিতা-সাহায্য চাইব, সেটি কিন্তু আইনের আলোকেই চাইব এবং সে বিষয়েও আমাদের ভূমিকাটা দেখবেন।”

নির্বাচনকালীন কর্তৃত্ব ইসির হাতে থাকবে জানিয়ে সিইসি বলেন, “সত্যি সত্যি আমাদের উপরে আরোপিত ক্ষমতাটার কমান্ড আমার হাতে; মূল শক্তিটা পুলিশ, বিজিবি ও সেনা বহিনীর হাতে। শক্তিটা আমার হাতে নয়, কমান্ডটা আমার হাতে আছে।

“আমরা কমান্ড করলে যেন শক্তিটা রেসপন্স করে সেই ধরনের অবস্থা আমাদেরকে সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনের প্রয়োজনেই সেটি অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন।”

নির্বাচনের কাজ ‘খুব সহজ নয়, বরং কঠিন’ মন্তব্য করে হাবিবুল বলেন, “কঠিন হলেও এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে এবং এই কঠিন চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে হবে।

“আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সকলের মধ্যে যদি চিন্তায় ঐক্য থাকে, চেতনায় ঐক্য থাকে, আমাদের বিশ্বাসে যদি আন্তরিকতা, সততা থাকে; তাহলে আমরা যেকোনো কঠিন কাজ, যে কোনো কর্মযজ্ঞ- যতই জটিল হোক না কেনো, যতই অসাধ্য হোক না কেনো, আমরা সেটিকে আমাদের সাধ্যে আনতে পারব।”

সংবিধান সংশোধন হলে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘বিচলিত’ হওয়ারও কিছু দেখছেন না সিইসি।

তার ভাষায়, “সংবিধান যদি কালকেই সংশোধন হয়, আমরা ওর আওতায় পড়ে যাব। এতে আমাদের কোনো অসুবিধা বা বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা অবশ্যই সংবিধান মান্য করব।

“আপনারা রাজনৈতিক শক্তি বা দল বা রাজনৈতিক শরিক দলগুলো যারা আছেন, আপনারা নিজেদের তরফে চেষ্টাগুলো করে যান।”

নির্বাচনের সময় সব দল ও অংশীজনের সহযোগিতায় ভোটের যাতে অনুকূল হয় পরিবেশ তৈরি হয়, সেই প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করেন সিইসি।

বদরুদ্দোজা সুজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলীম লীগের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও এলডিপি সোমবারের সংলাপে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে।