পাল্টা আক্রমণ ফখরুলের

আওয়ামী লীগের শাসনকে পাকিস্তানি শাসনের সঙ্গে তুলনা করলেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2023, 11:53 AM
Updated : 27 March 2023, 11:53 AM

বিএনপিকে পাকিস্তানের ‘দালাল পার্টি’ বলার পাল্টায় আওয়ামী লীগের শাসনকে পাকিস্তানি আমলের সঙ্গে তুলনা করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “আজকের বাংলাদেশ এখন একাত্তর সালের পাকিস্তান বাহিনীর এবং পাকিস্তানি শাসকের প্রেতাত্মার বাংলাদেশ।

“যেভাবে পাকিস্তানিরা শাসন করেছে, শোষণ করেছে, মানুষের রক্ত চুষে নিয়েছে; আজকে একইভাবে এই আওয়ামী লীগের সরকার যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করছে, মানুষকে তারা ভয়ংকরভাবে নির্যাতন করছে।”

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সোমবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ‘মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশে’ একথা বলেন তিনি।

দুদিন আগে গণহত্যা দিবসের আলোচনায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিবকে উঙ্গিত করে বলেছিলেন, “যারা বলে পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম, তারা পাকিস্তানের সেবা দাস ও দালাল।”

Also Read: সব অপশক্তির মুখপাত্র ফখরুল: কাদের

Also Read: স্বাধীনতার শত্রুরা নানা পোশাকে এখনও চ্যালেঞ্জ করে: ওবায়দুল কাদের

Also Read: পাকিস্তানের মোহ কাটেনি বিএনপির: ওবায়দুল কাদের

ফখরুল সমাবেশে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, “এই বাংলাদেশ কি আপনারা চেয়েছিলেন? আমরা চেয়েছিলাম কোন বাংলাদেশ? একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে সমস্ত মানুষ সাম্যের মধ্যে বাস করবে, ন্যায়বিচারের মধ্যে বাস করবে, মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাস করবে।

“কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তাদের বলতে হচ্ছে যে আমরা সেই বাংলাদেশ পাইনি। তার কারণটি হচ্ছে যে, দলটি দাবি করে যে তারা স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় আসার পরে তাদের আসল চেহারা সেই ১৯৭২ সালের মতো। একইভাবে লুটপাট করেছে, একইভাবে তারা দুর্নীতি করেছে।”

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগ করছে না, তাদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত অর্থাৎ ভিন্নমত পোষণকারী যারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা কি ভাতা পাচ্ছেন এখন? না। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠেছে? উঠে নাই। এই সরকার তাদের সঙ্গে যারা একমত হবে না, তাদের সকলকে সব রকমের অত্যাচার-নির্যাতন করে দমন করে রাখতে চায়।”

দেশের চলমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নওগাঁর একজন মহিলা সরকারি অফিসে সহকারী হিসেবে চাকরি করেন, তাকে র‌্যাব তুলে নিয়ে গেছে .. তারপরের দিন দেখা গেছে যে সে হাসপাতালে একেবারে অজ্ঞান এবং শেষ পর্যন্ত সে মারা গেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দেওয়া হয়েছে। আরও দুই-একটা ঘটনা হয়েছে এর মধ্যে।”

র‌্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এই সরকার সেই সমস্তের কোনো বিচার করে নাই। বরং তাদেরকে আরও পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তারা আরও বড় বড় পদ পাচ্ছেন। তাদেরকে এমপি নমিনেশন দেওয়া হচ্ছে, কাউকে কাউকে না কি হোম মিনিস্টার করা হবে ….. ইত্যাদি খবর পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই।”

ফখরুল বলেন, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে দেশে স্বাধীন করেছেন, এখন নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব হল স্বাধীন দেশে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ করা।

“আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজকে দেশকে রক্ষা করবার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের হটাতে হবে।”

এই অনুষ্ঠানে মঞ্চে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি চেয়ার ফাঁকা রাখা ছিল। সারা দেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন এই সমাবেশে।

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নতুন প্রজন্মের সাতজনের হাতে (তারেক রহমান, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, সোনিয়া সান্তা, জামাল হোসেন টু্য়েল) জাতীয় পতাকা তুলে দেন। তারেক রহমানকে দেওয়া পতাকা নেন মির্জা ফখরুল।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইনস্টিটিউশনের বাইরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীরউত্তম এবং গণসমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নাল আবেদীন, সিরাজুল হক, শাহ আবু জাফর, মুক্তিযোদ্ধা দলের আবদুল হালিম, কামাল উদ্দিন, নুরুল করিম, এবাদুল হক, আবদুল খালেক মন্ডল, আবদুল মান্নান, মোকসেদ আলী মোঙ্গলিয়া, আব্বাস উদ্দিন, জহিরুল আলম তালুকদার রুকু, ওয়াহিদুর রহমান, নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদল নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বক্তব্য রাখেন।