রিজভী বলেন, “যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা প্রত্যাহার করুন। অন্যথায় এই অমার্জনীয় অপকর্মের জন্য জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।“
Published : 06 Dec 2023, 07:19 PM
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের মধ্যে যারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদেরকে তা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি চাইছেন, ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে না, সরকারি কর্মীরা সরকারকে ভোটের আয়োজনে কোনো সহযোগিতা করবে না।
‘আওয়ামী লীগ লোক ভাগানোর দলে’ পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী এও দাবি করেন, বিএনপির ‘সাচ্চা কাউকে’ দিতে পারেনি।
বুধবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের মতো এবারও আন্দোলনে বিএনপি। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের আগের তুলনায় এবারের আন্দোলনের মাত্রা কম। সেই নির্বাচনে কেবল ১২টি দল অংশ নিলেও এবার দলের সংখ্যা ২৯টি। প্রার্থী সংখ্যাও বেশি।
সেই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান, এবার যাচাইবাছাইয়ে সব আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বী নিশ্চিত হয়েছে।
নির্বাচনকে ‘পাতানো’ আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, ‘‘যারা এই ‘সিলমোহরের’ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বা প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতা করছেন, তাদেরকে আমি বিএনপির পক্ষ থেকে উদাত্ত্ব আহ্বান জানাচ্ছি, ‘আপনাদের যদি নূন্যতম দেশপ্রেম থাকে, যদি মনুষ্যত্ব থাকে, বিবেক বিবেচনাবোধ থাকে তবে ফিরে আসুন।
“যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা প্রত্যাহার করুন। অন্যথায় এই অমার্জনীয় অপকর্মের জন্য জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।
“ইতিহাসের পাতায় আপনাদের নাম বেইমান-মীরজাফরের পাশে উৎকীর্ণ থাকবে। আপনাদের একদিকে স্বাধীনতার পতাকা, অন্যদিকে নাৎসীবাদী স্বৈরাচার-গোলামির জিঞ্জির। আপনারা দেশপ্রেম ও ঈমানি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করুন। আপনারা মীরজাফরের উত্তরসূরী হবেন না। ১৮ কোটি মুক্তিকামী মানুষের ঘৃণা রুদ্ররোষের শিকার হবেন না।”
২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি অভিযোগ ভোটারদেরও নির্বাচন বর্জনের অনুরোধ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, “১২ কোটি ভোটারের কাছে আমাদের আহ্বান, আপনারা কারো প্রহসনের নির্বাচন করার স্বার্থসিদ্ধিতে নিশ্চয়ই অংশ নেবেন না। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করবেন না। ভোটাররা ভোটদান থেকে বিরত থাকুন।“
‘আওয়ামী লীগ এখন লোক ভাগানোর দল’
রিজভী বলেন, ‘‘গুটি কয়েক উচ্ছিষ্ট পূর্ব থেকে দল বিতাড়িত কিছু গণধিকৃতকে টাকার বিনিময়ে ভাগিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ এ্রখন লোক ভাগানোর দলে পরিণত হয়েছে।”
এটা ‘কী ধরনের ছোটলোকি?’- প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন পাড়ায়-মহল্লায় শুনি কিছু মানুষজন থাকে নীতিহীন, নীতিবিবর্জিত তারা পাশের বাড়ির কাজে লোককে ভাগিয়ে নিয়ে যায় বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন-টলোভন দিয়ে। এই সমস্ত মানুষদেরকে অন্যান্য মানুষরা, ভদ্রলোকরা যারা সুশীল, সুশিক্ষিত মানুষরা এরা খুবই অবজ্ঞার চোখে দেখে, বাজে মানুষ হিসেবে দেখে।
“কাজের লোক ভাগিয়ে নিয়ে যায় সেই সমস্ত ব্যক্তিদের সমপর্যায়ে এখন আওয়ামী লীগ।
‘বিএ্নপির সাচ্চা কাউকে হালুয়া রুটির লোভে রাজদলে ভাড়া করতে পারেনি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘তাদের (সরকার) লজ্জা হওয়া উচিত যে, দেড় যুগ ধরে এত রাষ্ট্রীয় লোক লস্কর মাঠে নামিয়ে এত নগদ অর্থ বিতরণ, ব্লাকমেইলিং, এমপি-মন্ত্রী-মন্ত্রী করার প্রলোভন দিয়ে পর্বতের মূষিক (ইঁদুর) প্রসবের মতো অবস্থা হল।
“যাদের কিনে ভোটে ভিড়িয়েছে তাদের দুই-একজন ছাড়া কারো নাম পর্যন্ত শোনেনি দেশের মানুষ।”
‘শেখ হাসিনার আর্শিবাদ পেতে ধরণা’
রিজভী বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার তার রেজিমের প্রধান বিরোধীদল বানিয়েছেন যাদের, সেই জাতীয় পার্টির মহাসচিব গতকাল বলেছেন, সরকার আশ্বাস দিয়েছে বলেই নির্বাচনে এসেছেন।
“কী ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে তা জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বক্তব্যে স্পষ্ট। শেখ হাসিনার আর্শীবাদ ছাড়া দেশে কেউ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হওয়ার যোগ্যতাও নেই।”
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপির ৩৬০ জনের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার ও ১৮ মামলায় ১ হাজার ৭৮৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করার অভিযোগও করা হয় এই ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে।
আরও পড়ুন:
ঝটিকা মিছিল নিয়ে রিজভী এবার রাজশাহীতে
আওয়ামী লীগের ‘প্রেসক্রিপশন মেনে’ প্রার্থী বাছাই করছে ইসি: রিজভী
রিজভীর ঝটিকা মিছিলে ঢাকায় অবরোধ শুরু
এসব বলে লাভ নেই কাদের সাহেব: রিজভী
পুলিশ কর্মকর্তাদের দলীয় বক্তব্য ‘একতরফা নির্বাচনের আলামত’: রিজভী