রিজভী বলেন, “যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাদের ভাষায় কথা বলেন, তাহলে আগামী নির্বাচন কি ভয়ঙ্কর নির্বাচন হবে!”
Published : 20 Aug 2023, 05:55 PM
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দলীয় বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা ‘একতরফা নির্বাচনের আলামত’ বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “গতকাল (শনিবার) নাকি উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে একজন কর্মকর্তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের ওই কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর মনে হয়েছে ইনি কি পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা না… শাহবাগ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আমি এটার কোনো পার্থক্য করতে পারিনি।
“যখন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা হাছান মাহমুদের (তথ্যমন্ত্রী) ভাষায় কথা বলেন, যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাদের ভাষায় কথা বলেন, তাহলে আগামী নির্বাচন কি ভয়ঙ্কর নির্বাচন হবে! প্রতিযোগিতা দূরে থাক, ওই নির্বাচন হবে একতরফা আরেকটা অভিনব নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রক্রিয়ার আলামত হচ্ছে গতকালে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দলীয় বক্তব্য প্রদান।”
রোববার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যায়লেয়ের সামসে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে কথা বলছিলেন রিজভী।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “এই পুলিশ প্রশাসন দিয়ে গ্রামে গ্রামে বলানো হবে যারা ভোট দিতে যাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, যারা কোনো প্রচারণা করবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করবে, এই হচ্ছে দলীয় প্রশাসন। এভাবেই শেখ হাসিনা আবার এক তরফা নির্বাচন, আবার একটা ম্যান্ডেটবিহীন নির্বাচন করার একটা বড় ধরনের নীল নকশা তৈরি করছেন।”
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী রেজাউল করীম রানা ও অনান্য নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
‘সবাইকে ইলিশ মাছ দিয়ে কেনা যাবে না’
বিশ্ব থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “তাদের সাথে কেউ নাই। হয়ত দুয়েকটা দেশ থাকতে পারে। সেখানে তারা (সরকার) খুব হাত-পা ধরছেন, কাকুতি-মিনতি করছেন, তারা যেমনভাবে চান সেইভাবে তাদেরকে ক্ষমতায় যেন রাখা হয়।”
সরকারের মন্ত্রীদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “এরকম শোনা যায় যে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কোনো মন্ত্রী পার্শ্ববর্তী দেশের কলকাতার সাংবাদিকদের নাকি দুই টন ইলিশ মাছ পাঠিয়েছেন। আমরা জানি না এই ঘটনা কতটুকু সত্য। তবে এইরকম জনশ্রুতি আছে যে, যাতে এই অবৈধ সরকারের পক্ষে লেখালেখি করা যায়।
“কিন্তু ভারত তো একটি গণতান্ত্রিক দেশ, ওখানে বিবেক সম্পন্ন অনেক সাংবাদিক আছেন। দুই-একটাকে হয়ত কেনা যায় কিন্তু সবাইকে তো কেনা যায় না। তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের জন্য অনেকেই সেখানেও কলম ধরেছেন, তারাও লিখছেন। সবাইকে ইলিশ মাছ দিয়ে কেনা যাবে না।”
মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য তানভীর আহমেদ রবিনকে গোয়েন্দা পুলিশের ‘তুলে নেওয়ার’ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, “প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে বিএনপির কর্সসূচিতে যুব লীগ-ছাত্রলীগ আক্রমন করে তাদেরকে তো তুলে নিয়ে যাওয়া হয় না, তাদেরকে তো রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হয় না। তারা প্রটেকশন পায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনে তাদেরকে এগিয়ে দেওয়া হয়, তোমরা বিএনপি কর্মসূচি-মিছিলে আক্রমণ করো, এই হচ্ছে শেখ হাসিনার শাসন, তার সরকারের নীতি।
“এই পরিস্থিতি চলতে দেয়া যায় না, এই পরিস্থিতি প্রতিহত করতে হবে। গণতন্ত্রের সুবাতাস বইয়ে দিতে হবে, গণতন্ত্রের মুক্তির দিশারী, গণতন্ত্রের মুক্তির বাতিঘর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তা নাহলে কারো জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না।”
মানববন্ধনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, হুমায়ুন ইসলাম খান, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, তাঁতী দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।