“প্রশ্ন থেকে যায়, সরকার অপরাধের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সৎ সাহস দেখিয়েছে কিনা। শেখ হাসিনা সরকারের সে সৎ সাহস আছে।"
Published : 24 May 2024, 12:14 PM
দোষী হলে, সাবেক আইজিপি বা সেনাপ্রধান যেই হোক, সরকার তাকে বাঁচাতে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিচার বিভাগ, দুদক স্বাধীন জানিয়ে শুক্রবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তাকে প্রটেক্ট করতে যাব না, সে সাবেক আইজিপি বা সেনা প্রধান হলেও।”
দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধে আদালতের আদেশের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সরকারের এই অবস্থানের কথা জানান।
তিনি বলেন, “বিষয়টি দেখতে হবে, কোনো ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক, অপরাধ করতে পারে। প্রশ্ন থেকে যায়, সরকার অপরাধের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সৎ সাহস দেখিয়েছে কিনা। শেখ হাসিনা সরকারের সে সৎ সাহস আছে। কেউ পারবে না।
“বিচার বিভাগ, দুদক স্বাধীন। সেখানে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তাকে প্রটেক্ট করতে যাব না। সেখানে কোনো সাবেক আইজিপি বা কোনো সাবেক সেনাপ্রধান, সরকারের কাউকে প্রটেকশন দেয়ার বিষয় নেই।”
বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডে যাদের দণ্ড হয়েছে তাদের সবাই ছাত্রলীগের উল্লেখ করে কাদের বলেন, “সরকার তাদের প্রটেকশন দিতে যায়নি। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, তাদের সরকার প্রটেকশন দিতে যায়নি। কথা হচ্ছে ব্যক্তি অপরাধ করতে পারে, কথা হচ্ছে সরকার প্রটেকশন দিচ্ছে কিনা৷ শেখ হাসিনা সরকারের এখানে জিরো টলারেন্স। অপরাধ করলে শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”
সাবেক সংসদ সদস্য, পঁচাত্তরের প্রতিরোধ যোদ্ধা ও নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মানু মজুমদারের প্রয়াণে তার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “খুবই প্রচার বিমুখ ছিলেন। কখনো তাকে ক্যামেরার সামনে মুখ দেখানো, চেহারা দেখানো এবং এর জন্য আমাদের কিছু কিছু লোকের যে প্রবণতা, সেটা মানু মজুমদারের মধ্যে কখনো দেখিনি।
“তিনি আমাদের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত সংসদে তিনি ছিলেন। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যে প্রতিরোধ যোদ্ধা নামে একটি সংগঠন জন্ম নিয়েছিল, তার সাধারণ সম্পাদক হিসবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়েছিল, যেখানে সুদীর্ঘ ১৩ বছর কারাগারে ছিলেন। আমার সাথেও জেলে দেখা হয়েছিল।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক আব্দুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এই সরকারের আমলে কোনো নিরীহ লোক হয়রানি, জেল জুলুমের শিকার হয়নি উল্লেখ করে তিনি বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “এখন আপনাদের দল প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশকে হত্যা করেছে, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছেন। এইসব অপরাধের সাথে যারা জড়িত তারা তো অপরাধী। তাদেরকে বিএনপি হিসেবে আটক করা হয়নি, আটক করা হয়েছে খুন, আগুন সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে।”
বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনা করে কাদের বলেন, “কয়দিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আটকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরে জানা গেল তিনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অথচ ফখরুল সাহেব তার পক্ষে এক বিরাট বিবৃতি দিয়ে বসলেন। খুনি, সন্ত্রাস ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সাথে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার যে প্রা্যকটিস তারা এখনো তা করে যাচ্ছে। এখানে কোনো ছাড় নেই।”
উপজেলা নির্বাচনের ভোটের হারে সন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “উপজেলা নির্বাচনে সিইসি বলেছেন ভোট পড়েছে ৩৬ শতাংশের বেশি। আর এবার দ্বিতীয় ধাপে পড়েছে ৩৭ শতাংশের বেশি। তার মানে এবার এক শতাংশ বেশি।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা অর্জন করেছে, ক্ষমতা দখল করেনি মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, “জনগণের ভোটে আমরা ক্ষমতা অর্জন করেছি, এটা আমাদের অ্যাচিভমেন্ট। এটা আমাদের অর্জন, ক্ষমতা দখল নয়। … সারা দুনিয়া জানে। যে কারণে নির্বাচনের আগে দুনিয়ার অনেকেই সমালোচনা করেছে কিন্তু নির্বাচনের পরে... বাইডেনের চিঠিটা আমরা তাদের পড়তে বলব। যে কারণেই হোক, তিনিও এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।”