“কুয়েটে যারা হামলা করেছে আমরা তাদের শিবিরের নেতা হিসেবে জানি; যে আহ্বায়ক তাকে আমরা শিবির নেতা হিসেবে জানি,” বলেন ছাত্রদল সভাপতি।
Published : 19 Feb 2025, 08:15 PM
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিবির নেতাকর্মীরা ‘প্রথমে’ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে ছাত্রদল।
বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি বলছে, হামলায় ‘নেতৃত্ব দিয়েছেন’ কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে আহ্বায়ক ওমর ফারুক। বৈষম্যবিরোধীদের একটি মিছিল থেকে ‘তার উসকানিতে’ ছাত্রদল সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ফারুকসহ হামলাকারীদের ‘শিবির নেতা’ হিসেবে দাবি করেছে সংগঠনটি।
যদিও হামলা-সংঘর্ষের ঘটনার পরই প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপরই দায় চাপিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বুধবার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের যারা আত্মপ্রকাশ করতে ভয় পেয়েছে, সেই শিবিরের সন্ত্রাসীরা কাল (মঙ্গলবার) ছাত্রদলের ওপর হামলা চালিয়েছে।
“তাদের নির্যাতনের মাত্রা এতই ছিল যে আহত শিক্ষার্থীরা দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানদারকেও বৈষম্যবিরোধী কথিত শিক্ষার্থী ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা হামলা করে। পরে গ্রামবাসীর সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর ছাত্রদলের নামে এক ধরনের ‘মব’ তৈরি করা হয়েছে।”
নাছির বলেন, “প্রকাশ্যে সকলেরই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। খুলনায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে চায়।
“বাংলাদেশের বড় বড় যত অগ্নিকাণ্ড হয়েছে সেগুলো ছোট ছোট শর্ট সার্কিট থেকে তৈরি হয়েছে। গতকাল সেই কাজ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিশৃঙ্খল মব’। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী নেতা ওমর ফারুক। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।”
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবও কুয়েটের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিবির নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপান।
তিনি বলেন, “অনলাইনে ও অফলাইনে ছাত্রদলকে জড়িয়ে অপপ্রচার করা হয়েছে। কুয়েটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৭ জানুয়ারি কমিটি দিয়েছে। শিবিরেরও কমিটি রয়েছে। তারা যদি রাজনীতি করতে পারে, তাহলে কেন তাদের উপর হামলা করা হয়েছে।
“কুয়েটে যারা হামলা করেছে আমরা তাদের শিবিরের নেতা হিসেবে জানি। যে আহ্বায়ক তাকে আমরা শিবির নেতা হিসেবে জানি। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না বলে তারা প্রচার চালায়। যখন তারা ব্যর্থ হয়, তখন তারা শিবির হিসেবে অপপ্রচার চালায়।”
কুয়েটে হামলায় ‘আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতি’
জামায়াত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ‘গোপন রাজনীতির চর্চার’ অভিযোগ তোলেন ছাত্রদলের সভাপতি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় রাকিব বলেন, “বাংলাদেশে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ কোনো ছাত্র রাজনীতি চলবে না। যারা ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ বেড়ে ওঠা, যাদের রাজনীতি হল ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ ও গোপনে ষড়যন্ত্রমূলক, তারা সেখান থেকে বের হতে পারছে না।
“তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল (মঙ্গলবার) কুয়েটে একটি মিছিল থেকে আমাদের ছাত্রদলের সমর্থক ও কর্মীদের ওপরে হামলা চালায়। কুয়েটে আমাদের কোনো কমিটি নেই। এই হামলার আগের দিন সদস্য ফরম বিতরণ কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওতে দেখেছি যে গুপ্ত সংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী নামধারী একজন শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে তার অংশগ্রহণে ছাত্রদলের ভাইদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে।”
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
একপর্যায়ে সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সংঘর্ষের ঘটনার পর কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়।
‘গুপ্ত সংগঠনের নেতারা একক রাজনীতির চক্রান্ত করছে’
‘গোপন রাজনীতি করে’ অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে রাজনীতি করতে না দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ছাত্রদল সভাপতির।
ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তিনি বলেন, “কিছু কিছু ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকা চলবে না বলে কতিপয় গুপ্ত সংগঠনের নেতারা তাদের একক সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, তিতুমীর কলেজে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলন পরবর্তীতে যে ছেলেটি সবচেয়ে বেশি পলিটিক্স চলবে না বলে আন্দোলন করেছে, অনশন করেছে এবং শিক্ষক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে, পরে দেখা গেল ছাত্রশিবিরের কমিটিতে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে।
“আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছেলেটি সবচেয়ে বেশি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকা চলবে না বলে রাজু ভাস্কর্যে আন্দোলনের ডাক দেয়, বিনা কারণে রাত ১১টার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে…পরবর্তীতে দেখা গেল তাকে ছাত্রশিবিরের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এসব কৌশল বোঝার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।”
টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এবং সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত: কুয়েটে রাজনীতি বন্ধ, হামলার তদন্তে কমিটি
ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের সংঘর্ষের পর কুয়েট বন্ধ ঘোষণা
ষোলো বছরে ব্যানার ধরার ৬ জনও ছিল না: ছাত্রদলকে হাসনাত
কুয়েটে রামদা হাতে ভাইরাল যুবদল নেতাকে বহিষ্কার
কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা
কুয়েটে সংঘর্ষ: প্রতিবাদে জগন্নাথে বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ
ছাত্ররাজনীতির বিরোধিতাকারীরা সংগঠনের 'দোকান খুলে' বসেছে: ঢাবি
কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, বিজিবি