সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া’ তো করেছে বিএনপি: ফখরুলকে কাদের

বাহাত্তরের সংবিধান ‘কাঁটাছেড়া করায়’ এক সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 08:20 AM
Updated : 17 March 2023, 08:20 AM

আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া করে ক্ষতবিক্ষত করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

মুক্তিযুদ্ধের পরপর রচিত বাহাত্তরের সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া করা’ নিয়ে আক্ষেপ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার এক সপ্তাহ পর এই পাল্টা অভিযোগ আনলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিলেন, এই সংবিধান ‘এই মুহূর্তে আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়’। কাজেই শাসনতন্ত্রে যেভাবে বলা আছে, ঠিক সেভাবেই ভোট হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে শুক্রবার ধানমণ্ডিতে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএনপির দাবি নাকচ করে তিনি বলেন, “সংবিধানের আলোকেই আগামী নির্বাচন হবে।… যা আছে আমরা তা নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। সংবিধানের কোনো সংশোধন কোনো পরিবর্তন কিছুতেই সম্ভব নয়।”

বিএনপি সরকার অতীতে সংবিধানকে “কাটাছেঁড়া করেছে, কলমের খোঁচায় সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে”– এমন মন্তব্যও করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “তারাই (বিএনপি) সংবিধানের ওপর আঘাত এনেছে, সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকে অক্ষত রেখে সংবিধানের আলোকে আগামী নির্বাচন করতে চাই।”

সংবিধান সংশোধন নিয়ে যা বলেছিলেন ফখরুল

বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ১০ মার্চ কথা বলেন ফখরুল। সেদিন এক আলোচনায় তিনি বলেন, “এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তাদের একটাও ভালো কাজ নেই। তারা এই দেশের সমাজকে দুই ভাগে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে।

“একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, আমাদের যে সংবিধান ১৯৭২ সালে এই দেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে তারা বারবার কাটাছেঁড়া করে একটা অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে।”

মুক্তিযুদ্ধে জয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রচনা হয় দেশের প্রথম সংবিধান। তাতে চার মূলনীতি ছিল: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা।

এর মধ্যে বিএনপি স্পষ্টতই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পক্ষে নয়। এই সংবিধানের আলোকে ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ করা হলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় সে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়।

এখন পর্যন্ত সংবিধানে মোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে হয় তিনটি সংশোধনী। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে করেন একটি, তাকে হত্যার পর বিএনপির আমলে হয় আরও একটি।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর সংশোধনী আসে চারটি। তার পদত্যাগের পর প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হয়ে নির্বাচন শেষে আবার পদে পাওয়ার বিষয়টি বৈধতা দেওয়ার জন্য আসে আরও একটি সংশোধনী।

খালেদা জিয়ার দুই বারের মেয়াদে সংবিধান সংশোধন হয় মোট তিন দফা। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হয় আরও তিনটি সংশোধনী।

এর মধ্যে ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে আসে। বিএনপি এর তীব্র বিরোধিতা করে।

দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিরোধ পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে, ২০১১ সালে যে সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

এর আগে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে বিএনপি দাবি করছে, নির্বাচনকালীন সেই সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ বলছে, উচ্চ আদালতের আয়ে এই সরকারের বিষয়টি চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে গেছে। কাজেই তা আর সম্ভব নয়। 

‘বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংগ্রামের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা’

ওবায়দুল কাদের কথা বলেন বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ‘স্বপ্ন’ নিয়েও। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দুটি। একটি হল স্বাধীনতা, আর একটি হলো মুক্তি। স্বাধীনতার আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জন করেছি। কিন্তু এখন আমাদের মুক্তির সংগ্রাম চলছে।

“এই মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক শক্তি ও জঙ্গিবাদের বিষ-বৃক্ষকে সম্পূর্ণভাবে আমরা উপড়ে দেব।”

অগ্রগতির বাধা বিএনপি

দলীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও। তিনি বলেন, “দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির পথে বাধা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। এদের প্রতিহত করতে হবে।”

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “সমস্ত অপশক্তিকে দমন করে প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে জাতির পিতার সোনার বাংলা রচনার শপথের দিন আজ।”

সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সবার আগে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার কন্যা শেখ হাসিনা। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং পরে নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

এর পর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা জানান।

১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ‘ভীষণ সাহসী’ ও দূরত্ব ছেলেটি ছাত্র জীবনেই জড়ান রাজনীতিতে। ধীরে ধীরে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের প্রধান পুরুষ হয়ে উঠে তিনি পান ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। তার নেতৃত্বেই হয় মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।