“আমি একদম গোড়া থেকে বলে আসছি, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অথবা কোর্টের সিদ্ধান্ত। আমরা এ দুটোর দিকে চেয়ে আছি।”
Published : 30 Dec 2024, 01:45 PM
সরকার বা আদালত কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে ‘বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মত বিনিময় সভার শুরুতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় করতে এ সভার আয়োজন করা হয়।
গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কী না– এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, “এটা মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এটাও শোনা যাচ্ছে যে, কেউ কেউ মামলা করেছে কোর্টে। এ দল যাতে নির্বাচনে না আসতে পারে সেটার আদেশ চেয়ে। কোর্ট যদি রায় দেয়, যেভাবে রায় দেয় সেভাবে ব্যবস্থা নেব। আর না হলে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
“দল করার শাসনতান্ত্রিক অধিকার সবারই আছে। কোনো দল রেজিস্ট্রেশন পাবে কি পাবে না সেটার আলাদা বিধি বিধান আছে। কোনো দল শর্ত পূরণ করলে আমরা (নিবন্ধন) দেব। শর্ত পূরণ না করলে দেব না। পুরনো যে দলের কথা বলছেন, এরা কিন্তু বহু আগে রেজিস্টার্ড।”
তিনি বলেন, “সরকার যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করে, আমরা তাদের রেজিস্ট্রেশন তো বাতিল করতে পারি না। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অথবা কোর্টের সিদ্ধান্ত। এ দুইটার একটা হতে হবে, যেটার ভিত্তিতে হয়ত আমরা ব্যবস্থা নেব। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
সিইসি বলেন, “আমি একদম গোড়া থেকে বলে আসছি, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অথবা কোর্টের সিদ্ধান্ত। আমরা এ দুটোর দিকে চেয়ে আছি।”
গত জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলে আসছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলে তা হবে গণ-অভ্যুত্থানে লড়াই করা জনগণের ‘আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধাচরণ’।
আর বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আওয়ামী লীগ তো আমাদের এখানে একটা রেজিস্টার্ড দল, বিধি বিধান অনুযায়ী। নির্বাচন করা না করার সিদ্ধান্ত মূলত তাদের। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয়- ‘আমরা নির্বাচন করবে না’, আমরা তো জোর করে করাতে পারব না।
“যদি ওরা (ভোট করার) সিদ্ধান্ত নেয় এবং যদি রাজনৈতি কোনো সিদ্ধান্ত (নিষেধাজ্ঞা) না নেয় বা কোর্ট থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে, উই আর আনডান। এটা আমরা ইনহেরিট করেছি। আমরা দিই নাই। অলরেডি ৭২ সালের পর থেকে উনারা রেজিস্টার্ড অবস্থায় আছে। আমরা তো আর বাদ দিতে পারি না।”
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে সিইসির বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “১৭ বছর করা যাবে না আমরা বলি নাই। সংবিধান আবার সংশোধন করতে হবে। সংবিধানে তো বলা আছে ১৮ বছর। যদি সংবিধান পরিবর্তন করে ১৭ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়, আমরা সেভাবে কাজ করব।
“আমরা সংবিধান অনুযায়ী চলি। অন্য কারো নির্দেশনায় চলি না। সংবিধানে যদি পরিবর্তন আসে ১৭ বছর বয়সে ভোটার হবার যোগ্যতা রেখে, তাহলে আরপিও সংশোধন করতে হবে। ভোটার তালিকা আইনে সংশোধনী আনতে হবে।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, আগের নির্বাচন কমিশনের কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা ভাবছেন না।
“আমাদের এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নেই। রিফরমস কমিশন কী সুপারিশ দেয়, দেখে সিদ্ধান্ত জানাব।”
তিনি বলেন, “গত তিনটা নির্বাচনের আগের নির্বাচন আপনারা দেখেছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর নির্বাচন আপনারা দেখেছেন। গত তিনটা নির্বাচন কেমন হয়েছে আপনারাও জানেন, আমরাও বুঝি। এখন সেই পরিস্থিতি নাই।”
নির্বাচন কমিশন ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’ দাবি করে সিইসি বলেন, “এখানে ডানে বামে উপরে নিচে কোনো চাপ নেই। আমরা শুধু এখন বিবেকের চাপে আছি। আইন কানুন, শাসনতন্ত্র, বিধি বিধানের মধ্যে কাজ করার যে চাপ সেটুকুর মধ্যে আছি।
“অন্য কোন বহিঃশক্তির চাপ আমাদের ওপর নাই। যেটা আগের তিনটা কমিশনের উপরে ছিল। ওই তিনটা নির্বাচন ওজন্যই হয়েছে। এদেশে ভালো ইলেকশন করা সম্ভব। অতীতে করেছি আমরা।”
আরেক প্রশ্নের জাবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আইনে আছে প্রত্যেক বছর জানুয়ারির ১ তারিখে যাদের ১৮ হবে, তাদের অর্ন্তভুক্ত করে ২ তারিখে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। মার্চের ২ তারিখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হয়ে যাবে। শিডিউল করার আগ পর্যন্ত এটা সংশোধন করা যায়।
“কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনেক ফেইক ভোটার আছে এখানে। অনেক বিদেশি ভোটার হয়ে গেছে এখানে। অনেক ভোটার মারা গেছে। মৃত ভোটার রয়ে গেছে। কিন্তু নাম কাটা যায়নি। ওইটা বাদ দিতে চাই।”
তিনি বলেন, “ইলেকটোরাল প্রসেসের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। অনেকে মনে করে ভোটার হয়ে কী হবে। ভোট তো কেউ না কেউ দিয়ে দিবে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। বাড়ি বাড়ি যাব। টার্গেট হচ্ছে মাস ছয়েকের মধ্যে বাড়ি বাড়ি যাবার কাজ শেষ করব।”
আওয়ামী লীগের সময়ের প্রশ্নবিদ্ধ তিন নির্বাচনের দিকে ইংগিত করে নাসির উদ্দিন বলেন, “এবার আর আগের মত ভোট হবে না। সেটার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। ৯১, ৯৬ ও ২০০১ এর মত যাতে নির্বাচন করতে পারি।
“গত ১৫-১৬ বছর রাজনৈতিক দলগুলো যে এত জেল খাটছে, জান দিয়েছে কেন? ভোটের অধিকারের কথা বলছে না? আমরা সে কাজটাই করে দেব। রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সাথে থাকার কথা। তারা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের মূল দাবি ছিল ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন। এ ব্যাপারে ৫ অগাস্টের পরে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে।”
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে সংখ্যানুপাতিক ভোটের নিয়ম চালুর প্রস্তাব দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ বিষয়ে সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে তিনি বলেন, “বিষয়টি এখনো আমাদের সংবিধানে সংযোজিত হয় নাই। সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত যে কমিশন করা হয়েছে, উনারা কী সাজেশন দেন আমরা দেখি। উনাদের সাজেশন যদি অনুমোদিত হয়, সরকার যদি সেভাবে সংবিধান সংশোধনের ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা সেভাবে নির্বাচন করব।
“আর না হলে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে যেভাবে আছে সেভাবেই করতে হবে।”