বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “বিরোধীদলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশেই রায় দেওয়া হচ্ছে।
Published : 18 Apr 2023, 06:52 PM
সাতক্ষীরায় দুই দশক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলার ঘটনায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের যে রায় এসেছে, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মঙ্গলবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “বিরোধীদলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশেই রায় দেওয়া হচ্ছে।”
সাতক্ষীরা জেলা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল এদিন সকালে ওই রায় ঘোষণা করেন। অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের দুই মামলায় হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৪৪ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন তিনি।
পরে দুপুরে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রিন্স বলেন, “এসব কার নির্দেশে হচ্ছে সেটির জন্য বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না, সাধারণ জনগণ তা বুঝে গেছে। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আজকের রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি।”
সরকার আইন আদালতকেও ‘প্রতিহিংসা চরিতার্থের রাজনীতির অনুসঙ্গ করে ফেলেছে’ মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আজ (মঙ্গলবার) দলের প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফরমায়েসী রায় বিএনপি পুরোপুরি প্রত্যাখান করছে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছে।”
ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়।
শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা সেদিন আহত হন।
বিএনপি আমলে ওই ঘটনার পর কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
তখন সাতক্ষীরার আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়।
ওই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
তদন্ত করে পুলিশ বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং অস্ত্র আইনের পৃথক ধারায় দেওয়া তিনটি অভিযোগপত্রের মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় হয় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।
তাতে তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতাকর্মীকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দেন সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবির। এরপর মঙ্গলবার হল অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার রায়।
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: বিএনপির সাবেক এমপিসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন
সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স অভিযোগ করেন, “একটি মামলাকে পরবর্তীতে তিনটি মামলায় বিভক্ত করে সাতক্ষীরা জেলার নেতাকর্মীদেরকে সীমাহীন ও নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে প্রতিহিংসার কারণে সরকার এই মিথ্যা মামলার সঙ্গে জড়িত করেছে। এফআইআরে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নামটি পর্যন্ত ছিল না।
“সেদিন হাবিবুল ইসলাম ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, ঘটনাটি বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ঘটে এবং ঘটনার পরপরই দুপুর ১টায় বিবিসি থেকে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ঢাকার টিঅ্যান্ডটি ফোনে ফোন করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিব যদি ঘটনার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়ায় উপস্থিত থাকেন, তবে তার পক্ষে কীভাবে সেদিনই ঢাকায় বসে ল্যান্ডফোনে বিবিসির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব?”
প্রিন্স বলেন, “ওই ঘটনায় কেউ হতাহত ছিল না, কিন্তু পরবর্তীতে একজনকে আহত সাজিয়ে মামলা করা হলেও সেও সাক্ষ্য দিতে যায়নি। এমনকি যেসকল সাংবাদিককে সাক্ষী করা হয়েছিল, মূলধারার সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও এই সাজানো মামলায় সাক্ষ্য দেননি।
“ঘটনার এক যুগ পর পাকা রাস্তার ওপর থেকে একটি বুলেটের খোসা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে মামলাটিকে পরিচালনা করা হয়। আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, তর্কের খাতিরে যদি বলি, সে সময় যদি সেখানে গুলি করার ঘটনা ঘটেও থাকে তাহলে এক যুগ পর রাস্তায় বুলেটের খোসা পাওয়া কি হাস্যকর কিংবা অসম্ভব নয়?
“প্রকৃতপক্ষে সেদিন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর নিরাপত্তা রক্ষীরাই দুই রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছিল। এছাড়া সেখানে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। এটা স্পষ্ট যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনকে যাবজ্জীবন ও বাকিদের সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
প্রিন্স বলেন, “এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু অবান্তর ও হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদুরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। আমরা আজকের এই রায়ের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।”
সোমবার রাতে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে বিএনপির ১৫ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এবং রায় ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল থেকে ছাত্রদলের ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তিও দাবি করা হয় এই সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল জিয়া মঞ্চের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমানকে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে’ তুলে নেওয়ার পর এখনও তাকে না পাওয়া যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রিন্স; অবিলম্বে তাকে জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানান।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: সাতক্ষীরায় ২ মামলায় রায়ের অপেক্ষা
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: দুই মামলার রায় ১৮ এপ্রিল
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা: ৫০ আসামির সবার সাজা
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: আরেক মামলায় অভিযোগ গঠন
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: সাফাই সাক্ষ্য দিলেন আমানউল্লাহ আমান
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: বাদীকে জেরা করেনি আসামিপক্ষ
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: অস্ত্র মামলায় আরেকজনের সাক্ষ্য
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার আসামির বিরুদ্ধে পিপির জিডি
হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: সাবেক এমপি কারাগারে, রায় ৪ ফেব্রুয়ারি