গত ১২ এপ্রিল মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
Published : 18 Apr 2023, 10:15 AM
সাতক্ষীরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের দুটি মামলায় ৪৯ আসামির ভাগ্য জানা যাবে মঙ্গলবার।
সাতক্ষীরার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল এদিন এ দুই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। গত ১২ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা লড়েন পিপি আব্দুল লতিফ, অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক কিসলু অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদসহ কয়েকজন।
যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ পিপি লতিফ বলেছিলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেভাবে মামলা পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে কারাগারে থাকা ৩৭জন, জামিনে থাকা দুইজন ও পলাতক দশ আসামির সাজা হতে পারে।“
আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম; তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, অ্যাডভোকেট শাহানারা পারভিন বকুলসহ কয়েকজন।
ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা রেখে ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এটি একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা। গুলির খোসা ও বোমার কৌটা ঘটনার ১২ বছর পর ওই স্থান থেকে উদ্ধার করা সম্ভব না, এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের ১৫ জন সাক্ষীর কেউই এ কথা বলেননি। আশা করছি আদালত ন্যায়বিচার করবেন।”
আসামি কারা
মামলার আসামি হলেন- সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আশরাফ হোসেন, উপজেলার যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদের বাচ্চু, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান রনজু, উপজেলা মৎস্য দলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি রিপন, বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ তামিম আজাদ মেরিন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল রকিব মোল্যা, কলারোয়া পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মফিজুল ইসলাম, পৌর ছাত্র দলের সভাপতি আব্দুল মজিদ।
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: দুই মামলার রায় ১৮ এপ্রিল
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা: ৫০ আসামির সবার সাজা
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: আরেক মামলায় অভিযোগ গঠন
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: সাফাই সাক্ষ্য দিলেন আমানউল্লাহ আমান
বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, বিএনপি নেতা হাসান আলী, উপজেলা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আলী, বিএনপি নেতা ময়না, বিএনপি নেতা শিক্ষক আব্দুস সাত্তার, সাবেক উপজেলা ছাত্র দালের সভাপতি খালেদ মঞ্জুর রোমেল, বিএনপি নেতা কলেজ শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, যুবদল নেতা মাজাহারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক, বিএনপি নেতা আব্দুর রব, উপজেলা কেরালকাতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, যুগীখালী ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা বিএপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসুলও এ মামলার আসামি।
এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, যুবদল নেতা রিংকু, যুবদল নেতা আব্দুস সামাদ, বিএনপি নেতা আলাউদ্দীন, যুবদল নেতা আলতাফ হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তৌফিকুর রহমান সনজু, ছাত্রদলের সহ সভাপতি নাজমুল হোসেন, বিএনপি নেতা সাহাবুদ্দিন, বিএনপি নেতা সাহেব আলী, বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম, যুবনেতা টাইগার খোকন, যুব নেতা ট্রলি সহিদুল, বিএনপি নেতা কনক, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ কামরুল হোসেন, যুবদল নেতা মনিরুল ইসলাম, যুবদল নেতা ইয়াছিন আলী, পৌর বিএনপির সহ সভাপতি আখলাকুর রহমান শেলী, বিএনপি নেতা শাহিনুর রহমান, বিএনপি নেতা বিদার মোড়ল, যুবদল নেতা সোহাগ হোসেন, বিএনপি সমর্থক মাহাফুজার রহমান মোল্যা, জামায়াত কর্মী গফ্ফার গাজী, সাবেক উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি মাহাফুজুর রহমান সাবুর বিচার চলেছে এ মামলায়।
এর মধ্যে মাহাফুজুর রহমান সাবু ও লাকি কারাগারে থাকার সময় মারা গেছেন।
আর নাজমুল হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, আব্দুল কাদের বাচ্চু, রিপন, মফিজুল ইসলাম, খালেদ মঞ্জুর, রোমেল, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল মালেক ও রবিউল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
কী ঘটেছিল
ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলা হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়।
শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা সেদিন আহত হন।
ওই ঘটনায় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
তখন সাতক্ষীরার আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেয়।
ওই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
তদন্ত করে পুলিশ বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনের পৃথক ধারায় দেওয়া তিনটি অভিযোগপত্রের মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় হয় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।
তাতে তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতাকর্মীকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দেন সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবির।
আর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলায় গত বছরের ১৪ জুন অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়।এর চারদিন পর ১৭ জুন বিচারক আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
টানা দশমাসের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা হতে চলেছে।
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: বাদীকে জেরা করেনি আসামিপক্ষ
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: অস্ত্র মামলায় আরেকজনের সাক্ষ্য
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার আসামির বিরুদ্ধে পিপির জিডি
হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: সাবেক এমপি কারাগারে, রায় ৪ ফেব্রুয়ারি