ভাইয়ের নির্বাচনী আসনটি সেলিম ওসমান ধরে রাখবেন, না কি ওই আসনে ওসমান পরিবারের বাইরে দ্বিতীয় বার নিজের জয় তুলে আনবেন এস এম আকরাম, তার মীমাংসা দিতে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা।
Published : 26 Jun 2014, 12:56 AM
সেলিম ওসমানের সঙ্গে আইভীঘনিষ্ঠ ৩ প্রার্থী
না. গঞ্জে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান
নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে শূন্য নারায়ণগঞ্জ-৫ (বন্দর-সদর) আসনে বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভোটার।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে মিত্র আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয়ার পর জাতীয় পার্টি তাদের লাঙল প্রতীক লাঙল তুলে দিয়েছে প্রয়াত সংসদ সদস্যের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সেলিমের হাতে।
নারায়ণগঞ্জে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ওসমান পরিবারের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে আসনটিকে জয়ী আকরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন।
কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অবস্থান না নেয়ার প্রতিবাদে দল ছাড়েন আকরাম।
ওই নির্বাচনে আইভীর কাছে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান এখন নারায়ণগঞ্জের আরেকটি আসনের সংসদ সদস্য।
সাত খুনের পর নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকের শঙ্কার মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে প্রধান দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগও উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আকরাম তার প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনার অভিযোগ এনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এই অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে সেলিম ওসমান বলেছেন, “যদিও তিনি মিথ্যা বলছেন তবুও এই অপপ্রচার আমলে নিয়ে প্রশাসনকে আহবান জানাবো তার অভিযোগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে। তাহলে সত্যটা বের হয়ে আসবে।”
নির্বাচন কমিশন অবশ্য বলছে, সুষ্ঠু ভোটের সব প্রস্তুতিই নেয়া হয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
বিকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন,“আতঙ্কিত হওয়ার বা বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা ইসি নিশ্চিত করেছে বলে জানান তিনি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ১৪১টি ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পাঠানো হয়েছে।
“আজ (বুধবার) রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় কোনো বহিরাগতকে ঢুকতে দেয়া হবে না। নির্বাচনী এলাকায় বাস, মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ থাকবে।”
নারায়ণগঞ্জ উপনির্বাচন নিয়ে ড. কামাল হোসেনের শঙ্কার প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ আগেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমাদের কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আমরা ভোটারদের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করেছি।”
উপ-নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তায় থাকবে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৪ হাজার সদস্য। এছাড়া মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।
উপ-নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছে র্যাবও। র্যাবের মুখপাত্র বুধবার নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার বাহিনীর ১ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন এবং এর পাশাপাশি ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল টিমও সার্বক্ষণিক সতর্কাবস্থায় থাকবে।
ভোট তথ্য: এক নজরে
# কেন্দ্র সংখ্যা- ১৪১টি, ভোটকক্ষ- ৬৭৪টি, ভোটার সংখ্যা- ৩,৪২,৪০৫ জন (পুরুষ- ১,৭৪,৩১১ জন ও নারী- ১,৬৮,০৯৪ জন)
# প্রার্থী- ১) জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী এ কে এম সেলিম ওসমান (লাঙ্গল),২) নাগরিক পরিষদ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম আকরাম (আনারস),৩) কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সমর্থিত শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (গামছা), ৪) স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুন সিরাজুল মজিদ (চিংড়ি মাছ)।
# আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী- প্রতি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৯ জন আর গুরুত্বপূর্ণ ৯৮টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে অতিরিক্ত ২০ জন। পুলিশের মোবাইল টিম-২২টি, স্ট্রাইকিং টিম-৪টি।
# র্যাবের মোবাইল টিম-১৮টি। এছাড়া স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, সেন্ট্রাল রিজার্ভ, কন্ট্রোল রুম ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য র্যাব সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
# বিজিবি’র মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মিলে ৪ প্লাটুন। কোস্টগার্ডের ১টি ডুবুরি দলসহ ৩ প্লাটুন।
# বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত নাসিম ওসমান গত ৩০ এপ্রিল মারা যান। এরপর গত ১৯ মে ইসি উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।