দুদিন বাদে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 24 Jun 2014, 11:51 PM
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার এই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে ভোট হতে যাচ্ছে।
ভোটে জাতীয় পার্টির নাঙল প্রতীকে নাসিমের ভাই সেলিম ওসমান প্রার্থী হয়েছেন। আর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে এসেছেন সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম।
সাত খুনের ঘটনার পর বিদ্যমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ভোটারদের ভালো উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ের মধ্যে এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় নির্বিঘ্ন ভোট নিয়েও শঙ্কা করছেন অনেকে।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ উপনির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি চিঠিও দিয়েছেন। তাতে জনভীতি দূর করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এসবের মধ্যেই ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ মঙ্গলবার ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ভোট নিয়ে কারো শঙ্কা বা আশায় আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আমরা ভোটারদের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করেছি।”
সুনির্দিষ্ট হলে যে কোনো ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিটার্নিং কর্মকর্তা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
আবু হাফিজ বলেন, “সাত খুনের ঘটনার পর ভোটারদের ‘সাইকোলজিক্যাল’ ভয় থাকতেই পারে। কিন্তু ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতীতের সব উপনির্বাচনের চেয়ে নারায়ণগঞ্জে বেশি আইন শৃঙ্খলার সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে।”
ড. কামালের উদ্বেগ
ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে কামাল হোসেন সিইসির কাছে এক চিঠিতে বলেন, “জেনেছি-২৬ জুনের আগে আপনি কেনিয়া থেকে দেশে ফিরবেন না। উপজেলা ভোটের সময় আপনার অনুপস্থিতির বিষয়ে জনমনের প্রতিক্রিয়া দেখেছেন।
“এ পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ উপ নির্বাচনে আপনার সাংবিধানিক দায়িত্বের বিবেচনায় আপনি দেশ থেকে অনুপস্থিত থাকবেন না।”
‘কূটনৈতিক পন্থা’ অবলম্বন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান কামাল।
কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানিয়ে কমিশনে দেয়া চিঠি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করেন।
ওই চিঠিতে ড. কামাল ছাড়াও এম হাফিজউদ্দিন খান, এ এস এম শাহজাহান, মাহমুদুর রহমান মান্না ও সুব্রত চৌধুরীর নাম রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আকরাম এক সময়ে আওয়ামী লীগ করলেও এখন তিনি মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত।
ইসির প্রস্তুতি
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে।
২৪ জুন দিবাগত রাত থেকে যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ হয়েছে প্রচারও। বুধবার সব কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে নির্বাচনী সামগ্রী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ ওয়ার্ড, ৪টি আংশিক ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে আসনটি গঠিত।
এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪০৫ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩১১ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ০৯৪ জন। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ধরা হয়েছে ১৪১টি এবং ভোটার কক্ষ ৬৭৪ টি।
এই উপনির্বাচনে মোট প্রার্থী চারজন। অন্য দুজন হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মামুন সিরাজুল মজিদ এবং কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, উপ-নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ষ্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব), এপিবিএন ও ব্যাটলিয়ন আনসার পর্যাপ্ত সংখ্যক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি অপরাধীদের তাৎক্ষণিক সাজা দিতে ১০ জন নির্বাহী ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠায় সিআইডির (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) পরিদর্শক মহিউদ্দীন ও স্থানীয় কুতুপুর ইউনিয়নের ভুমি সহকারী কামাল হোসেনকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, সিআইডি পরিদর্শক মহিউদ্দীনকে প্রত্যাহারে আইজির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
একইভাবে ভূমি সহকারী কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ব্যাংক বন্ধ
ভোটের দিন বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে কার্যরত ব্যাংকগুলোর সব শাখা বন্ধ রাখতে মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকে কর্মরতদের ভোট দেয়া এবং ভোটগ্রহণের সুবিধায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।