অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদই দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন।
Published : 21 Apr 2013, 05:58 PM
‘বঙ্গভবনের পথে’ সাতবারের সাংসদ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: চূড়ান্ত ঘোষণা বাছাইয়ের পর
৬৯ বছর বয়সী এই আইনজীবী কিশোরগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাতবার, স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দফা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মো. জিল্লুর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে আবদুল হামিদ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন।
অন্যদিকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদকে গ্রহণের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিএনপি।তারা বলেছে, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাবে তারা।
জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে নির্বাচনের ভার সংসদ সদস্যদের ওপর। নতুন রাষ্ট্রপতি আগামী পাঁচ বছর অর্থাৎ পরবর্তী সরকার আমলেও রাষ্ট্রধানের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকবেন।
রোববার আবদুল হামিদের নামে নির্বাচন কমিশনে তিনটি মনোনয়নপত্র জমা দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসা আবদুল হামিদ সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পাশে বসেই ওই মনোনয়নপত্রে সই করেন।
সব ঠিক থাকলে সোমবার যাচাই-বাছাইয়ের পর আবদুল হামিদকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নিবাচন কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মেয়াদে ১৬ জন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সেই হিসাবে আবদুল হামিদ হচ্ছেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি।
দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান গত ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নিয়ম অনুযায়ী এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন, যাতে ২৯ এপ্রিল ভোটের দিন রাখা হয়।
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় কার্যত তখনি আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।
এর পরপরই হুইপ আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে চার সংসদ সদস্য নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আবদুল হামিদের নামে চারটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
দুপুরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদকে নিয়ে সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুশল বিনিময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্রে সই করেন আব্দুল হামিদ।
পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের হাতে আবদুল হামিদের নামে তিনটি মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এর মধ্যে একটিতে প্রস্তাবক হিসাবে সৈয়দ আশরাফ ও সমর্থনকারী হিসাবে তোফায়েল আহমেদের নাম রয়েছে।
এছাড়া আবদুস শহীদ ও আ স ম ফিরোজ প্রস্তাবক হয়ে বাকি দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেন, যাতে সমর্থনকারী হিসাবে আবদুল মতিন খসরু ও সেগুফতা ইয়াসমিন এমিলির নাম রয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আবদুল হামিদ যোগ্য ব্যক্তি এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মহল বক্তব্য-বিবৃতিতে তার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে।”
এই বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনার পর এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবো।”
জিল্লুর রহমানের প্রতি আস্থা দেখানো বিএনপি নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে মনোনীত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।
তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও স্পিকার হিসেবে আবদুল হামিদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তারা করে আসছিলেন; যদিও হামিদ বরাবরই বলে আসছিলেন, স্পিকার হিসেবে নিরপেক্ষ ভূমিকায় রয়েছেন তিনি।
বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার পর সিইসি কাজী রকিব সাংবাদিকদের জানান, তার কাছে তিনটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে এবং তার সবগুলোই আবদুল হামিদের নামে।
একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর নির্বাচনী আইনের সপ্তম ধারা অনুযায়ী আবদুল হামিদকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনী কর্মকর্তা নতুন রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা নেবে ইসি সচিবালয়। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠন করাবেন প্রধান বিচারপতি।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।
১৯৬১ সালে কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই তিনি যোগ দেন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে। এক পর্যায়ে তাকে কারাগারেও যেতে হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।
আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে গত ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ।
ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল হামিদ তিন ছেলে এবং এক মেয়ের জনক।