থানায় নির্যাতনের সময় বলা হয়, টাকা দিলে মারধর বন্ধ হবে, অভিযোগ মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর।
Published : 09 May 2024, 01:40 AM
প্রায় দুই মাস আগে পুলিশ হেফাজতে স্বামীর মৃত্যুর অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি ফরমান আলীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার আবেদন করেছেন এক নারী।
টাকা চেয়ে থানার মধ্যে তার স্বামীকে মারধরের ঘটনার অভিযোগ তুলে ওই নারী মামলার এ আবদনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, এক নারী চিকিৎসকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের
আদালতে ভুক্তভোগী নারী সোনিয়া বেগম এ আবেদন করেন।
এ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার আবেদনের ওপর আদেশ দেবে আদালত।
মামলার আর্জিতে সোনিয়ার অভিযোগ, তার স্বামী মো. রানাকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ওই সময়ের ওসি ফরমান আলী এখন উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি; যার দাবি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তিকে ‘যথারীতি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়’।
আবেদনে নাম থাকা অন্য আসামিরা হলেন- ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ, ডেপুটি জেলার মো. মাহবুব, পুলিশের এসআই চঞ্চল কুমার বিশ্বাস ও মো. মিজানুর রহমান, এএসআই দেলোয়ার হোসেন এবং কনস্টেবল হাবিবুর, জোনাব আলী ও মোবারক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফারহানা ইয়াসমিন, মো. সবুজ ও শাহ আলম নামে পুলিশের দুই সোর্স আসামি তালিকায় রয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৭ মার্চ নিহত রানাকে ডিবি পরিচয়ে শাহ আলম ও সবুজ বাসা থেকে তুলে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যান। সেখানে তারা রানাকে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করেন। পিটিয়ে তার দুই পা ভেঙে দেন এবং বুকের মাঝে ও মাথার বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। ভিকটিমকে নির্যাতন করার সময় সবুজ বাদী সোনিয়া বেগমকে ফোন দিয়ে মারধর ও কান্নার আওয়াজ শোনান। ৫০ হাজার টাকা দিতে পারলে মারধর বন্ধ হবে বলে জানানো হয় তাকে।
তখন সোনিয়া বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, “আমি গরিব মানুষ, যা পারি জোগাড় করে নিয়ে আসছি। আপনারা আমার স্বামীকে বাঁচান।”
এরপর ২০ হাজার টাকা এনে সবুজের হাতে দেন বলে অভিযোগের বর্ণনায় বলেছেন বাদী সোনিয়া বেগম। তখন তাকে এসআই মিজানুর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি তাকে গালিগালাজ করেন। এ সময় বাদী কান্নাকাটি করলে তাকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। বাদীকে পুলিশ পেটাতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে তার ছোট ছেলে রাতুল অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন ছেলেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হয়। পরে পুলিশ তাকে আদালতে যেতে বলে।
আবেদনে দাবি করা হয়, গত ১৮ মার্চ আদালতে যান সোনিয়া বেগম। ভিকটিম রানার সঙ্গে দেখা করার জন্য সেখানকার গারদে যান তিনি। তবে সেখানে পাওয়া যায়নি। স্বামীর খোঁজ না পেয়ে বাসায় চলে আসেন। ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে রানাকে দেখার জন্য টিকেট কাটেন। জেল কর্তৃপক্ষ বাদীকে জানায়, রানা জেলে নেই।
আরজিতে বলা হয়েছে, তখন বাদী চিন্তায় পড়ে যান। সেখান থেকে আবার যাত্রাবাড়ী থানায় আসেন। থানা থেকে কোনো তথ্য না দেওয়ায় আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়টি জানান।
পরদিন ২০ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আসতে। সেখানে গিয়ে ভিকটিম রানাকে মৃত অবস্থায় শনাক্ত করেন সোনিয়া বেগম।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ বাদীকে বলে যে, তার স্বামী কারাহাসপাতাল থেকে লাফ দিয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তখন বাদী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। যে কারণে কারাগারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসামি করার তালিকায় রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওসি ফরমান আলী দাবি করেন, এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করার পর যথারীতি রানাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তারা জানতে পারেন, জেলখানার চারতলা ভবন থেকে পালোনোর সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়ে মারা যান মো. রানা।
থানায় হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগও অস্বীকার করেন ওসি।
সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ, চিকিৎসক ফারহানা ইয়াসমিনসহ অন্যদের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।