চাপ দিয়ে শপথ: বিএনপি

বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের সরকার চাপ দিয়ে শপথ নিতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2019, 12:13 PM
Updated : 29 April 2019, 01:25 PM

সোমবার বিএনপি থেকে নির্বাচিত চারজনের শপথ নেওয়ার দিন জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই অভিযোগ করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের শপথ নেওয়ার সময়সীমা সোমবার অতিক্রান্ত হচ্ছে বলে এদিন বিএনপির চারজন শপথ নিচ্ছেন বলে সকাল থেকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল।

বিকালে ওই চারজন উকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ, মোশাররফ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম স্পিকারের কাছ থেকে শপথ নেওয়ার আগেই দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন রিজভী।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, বিএনপির কোনো এমপিকে শপথ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো চাপ নেই। তার এই বক্তব্যের একদিন পরেই গত পরশু আবার তার কথার প্রমাণ পাওয়া গেছে, অবশ্যই চাপ আছে। চাপ দেওয়া হচ্ছে, জুলুম-জবরদস্তি করা হচ্ছে।

“ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। শুধু তিনি নন, অন্যান্য নির্বাচিতদেরও চাপ দেওয়া হচ্ছে শপথ নিতে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, ভোটারবিহীন মিডনাইটের সংসদকে বৈধ করতে বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের জোর করে শপথ গ্রহণ করিয়ে বৈধতা পাওয়া যাবে না।”

চাপ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা তাদের নির্বাচনী এলাকার মানুষের চাপে শপথ নিচ্ছেন।

বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে এর আগে শপথ নেওয়া জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেছিলেন, তার এলাকার মানুষ তাকে সংসদে যেতে চাপ দিচ্ছে।

সোমবার শপথ নিতে যাওয়ার আগে একই কথা বলেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদও।

তবে রিজভী বলেন, “বর্ষীয়ান নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া গত পরশু (২৭ এপ্রিল) তার এলাকায় বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা করছিলেন। তিনি যখন ঘোষণা দেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেবেন না। তারপরে সরকারের একটি সংস্থার কয়েকজন উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া সাহেবকে সেই সভা থেকে নিরিবিলি কথা বলার জন্য নিয়ে যেতে চাইলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।

“ওই সভায় ‍উপস্থিত নেতা-কর্মীরা আমাদের জানিয়েছেন, সেখান থেকে উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়াকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তারা সফল হয়নি। কেবল আবদুস সাত্তার নন, অন্যদেরও চাপ দেওয়া হচ্ছে শপথ নিতে।”

“এমপি ভাগিয়ে নিয়ে বৈধতা নেওয়ার অপচেষ্টা করে বৈধতা পাওয়া যাবে না,” বলেন রিজভী।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় বিএনপি ও তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

তবে তারপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত গণফোরামের দুজন সুলতান মো. মনসুর আহমেদ ও মোকাব্বির খান শপথ নেন।

তারপর গত বৃহস্পতিবার বিএনপির জাহিদুর রহমান জাহিদ শপথ নেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এর তিন দিন বাদে চারজন শপথ নিলেন।

বিএনপি থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে এখন কেবল দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি।

সংসদ অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের সময়সীমা অতিক্রান্ত (২৯ এপ্রিল) হওয়ার পর কেউ শপথ না নিলে ওই আসনে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে ইসি।

দল একক সিদ্ধান্তে চলে না

বিএনপি পরিচালনা নিয়ে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, বিএনপি কোনো ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তে চলে না।  

ফাইল ছবি

“অনলাইন পোর্টালসহ কিছু কিছু গণমাধ্যমে ‘বিএনপি চলবে তারেকের একক সিদ্ধান্তে’ শীর্ষক সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

বিএনপি গণতান্ত্রিক নীতিতে পরিচালিত হয় দাবি করে রিজভী বলেন, “দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতি সপ্তাহে একবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাথে আলাপ করেন। তিনি (তারেক রহমান) দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদেরসহ প্রয়োজনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথেও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

“একক সি্দ্ধান্তে দল চলবে- এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হয়নি। কিছু গণমাধ্যমে এই সম্পর্কে যেসব সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা শুধু সত্যের অপলাপই নয়, ক্ষমতাসীনদের মদদে এটি জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির আরেকটি নতুন কৌশল।”