বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, “মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যকে গ্রেপ্তারে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতেই এ বৈঠক।”
Published : 09 Dec 2022, 09:48 AM
ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগ মুহূর্তে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটকের খবরের পর জরুরি বৈঠকে বসছে দলটি।
শুক্রবার বেলা ১১টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে দেশের বাইরে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।
দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যকে গ্রেপ্তারে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই বৈঠক ডেকেছেন।”
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল এবং ও শাহজাহানপুরের বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নেওয়া হয় বলে দাবি করে উভয়ের পরিবার।
ফখরুল ও আব্বাস ‘আটক’, বলছে পরিবার, ডিএমপি কমিশনার ‘অবগত নন’
১০ ডিসেম্বর: সংঘাত গড়িয়ে সমঝোতার ইঙ্গিত
১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য বিএনপি এখন চাইছে কমলাপুর স্টেডিয়াম
ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস দুজনেই বলেছেন, ‘সাদা পোশাকের পুলিশ’ এসে তাদের আটক করে নিয়ে গেছে।
তবে বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতাকে আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ভাষ্য এখনও আসেনি।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি এটা না জেনে বলতে পারব না।”
একই কথা বলেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার। অন্য পুলিশ কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।
এদিকে জরুরি বৈঠকের কারণে সকাল ১০টায় নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করার কথা জানান দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক প্রিন্স।
আগের দিনের মতই বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুলে সড়কে ব্যারিকেডও ছিল। পুরো এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়, যানবাহন চলাচলও বন্ধ।
পুলিশের সতর্ক অবস্থান রয়েছে পুরো রাজধানীজুড়েই। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন।
বিএনপি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।
বিএনপি নয়া পল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।
এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তারপরও বলে আসছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তাদের সমাবেশ ‘হবে’। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘সমঝোতা বৈঠকের’ পর অবস্থান বদলের ঘোষণা আসে।
পল্টনের ঘটনায় পুলিশের ৪ মামলায় যত অভিযোগ
বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়া পল্টনে পুলিশ সমাবেশ করতে দেবে না, আর বিএনপিও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে না। নয়া পল্টন বাদ দিলে তারা এখন কমলাপুরের ফুটবল স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে রাজি আছেন।
আর পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মিরপুরের বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে বলে জানান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুণ অর রশীদ।
বুলু ও হারুণ দুজনই জানান, তারা দুটি স্থানই পরিদর্শনে যাবেন। তারপর শুক্রবার এর যে কোনো একটি স্থান চূড়ান্ত করা হবে।
পরে রাতেই কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ পরিদর্শন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। পুলিশ কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে ছিলেন।
আব্বাস পরে সাংবাদিকদের বলেন, মাঠ দেখলেও তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা জানাবেন।
এরপর ভোর হওয়ার আগেই দুই জ্যেষ্ঠ নেতার ‘আটক হওয়ার’ খবর দেন বিএনপি নেতা ও পরিবারের সদস্যরা।
পুরনো খবর
১০ ডিসেম্বর: কথার খেলা গড়াল সহিংসতায়
স্পষ্ট কথা, রাস্তায় সমাবেশ করতে দেব না: ডিএমপি কমিশনার