বন্দুকটি লাইসেন্স করা বলে জানিয়েছেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা নেতা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, এটা তার ভুল হয়েছে।
Published : 04 Dec 2023, 07:11 PM
বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসে ঝালকাঠিতে নিজ নির্বাচনি এলাকায় গিয়েই বিতর্কে জড়ালেন শাহজাহান ওমর।
মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পরদিন সোমবার কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার কোমরে ছিল পিস্তল, পাশে বন্দুক হাতে ছিলেন এক বিএনপি নেতা।
এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। আগামী বুধবারের মধ্যে জবাব দিতে হবে।
শাহজাহান ওমর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওটা আমার লাইসেন্স করা বন্দুক। আমার প্রটেকশন লাগবে না?”
কিন্তু সমাবেশে কেন বন্দুকের প্রটেকশন লাগবে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি কোনো মিটিংয়ে যাইনি, ওখানে গিয়েছি, লোকজন এসেছে, কথা বলে চলে এসেছি।
“তবে বন্দুক নেওয়াটা আমার ভুল হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে আমি দুঃখিত, এমন আর হবে না।”
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালার ১১(ঘ) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের অনুমোদন ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি অস্ত্র বহন করতে পারবেন না।
কী ঘটেছে
বেলা ১২ টার দিকে কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হন শাহজাহান। সঙ্গে ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
সেখানে পুরোটা সময় মিয়াজীকে একটি বন্দুক হাতে দেখা যায়।
সেখানে কাঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বসার বাদশা, শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপনও উপস্থিত ছিলেন।
শাহজাহান ওমর বলেন, “কাঠালিয়া আওয়ামী লীগের কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না। এখানে তরুণ লীগ, কিবরিয়া লীগ, বুড়া লীগ ও বাচ্চা লীগ থাকতে পারবে না। এখানে থাকবে শুধু শেখ হাসিনা গ্রুপ।”
এবারের জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে শাহজাহান ওমরের দলবদলই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চমক।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন এই নেতা ১৯৭৯ সালে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে একটি ছাড়া সব কটিতেই বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কেবল ২০০৮ সালে অন্য একজনকে প্রতীক দেয় দলটি।
২০১৬ সালের জাতীয় সম্মেলনে শাহজাহানকে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ দেয় বিএনপি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার কাকরাইল ও বিজয়নগরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন তিনি।
নির্বাচনে অংশ নিতে হলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার আগের দিন জামিনে মুক্তি পান তিনি। ৩০ নভেম্বর তাকে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, যদিও এর আগে সেখানে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য বজলুল হুদা হারুন।
কাঠালিয়া আওয়ামী লীগের জমায়েতে শাহজাহান ওমর বলেন, “আমি এবং বিএনপির দলবলসহ আপনাদের মেহমান। আমাদের বরণ করে নেবেন। আমরা শিক্ষিত লোক, আমাদেরকে সম্মান করলে আপনাদেরকেও সম্মান করব।”
সমাবেশ শেষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান শাহজাহান ওমর।
কারণ দর্শানোর নোটিস
পিস্তল ও বন্দুক নিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ঝালকাঠির রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুমের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তার সরকারি ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ওহিদুজ্জামান মুন্সীও ফোনে পাওয়া যায়নি।
পরে শাহজাহান ওমরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
আর কতবার নির্বাচনের বাইরে থাকব: শাহজাহান ওমর
‘নৌকায় চড়া’ শাহজাহান ওমরকে বিএনপির বহিষ্কার
বিএনপির শাহজাহান ওমর এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী
বিকালে জামিন, সন্ধ্যায় মুক্ত বিএনপির শাহজাহান ওমর
শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ, বাতিল এমপি হারুনের
আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে এতে তাকে বলা হয়, “আপনি আপনার নির্বাচনি এলাকা ঝালকাঠি-১ এর অন্তরগত কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগদান করেন এবং বক্তব্য রাখেন। এ সময় আপনার পাশে একজনকে বন্দুক হাতে বসে থাকতে দেখা যায়, যা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর অধীন ৬(ক) ও বিধি ১২ লঙ্ঘনের সামিল।
“এ জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট পাঠানো হবে না সে মর্মে আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজে অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাধ্যমে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
এর আগে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় গত ২৯ মিছিলে বন্দুক হাতে একজনকে দেখা যায়।
সেদিনের মিছিলের একটি অংশের নেতৃত্ব দেন রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি। মিছিলের অগ্রভাগে এক ব্যক্তিকে কাঁধে শটগান ঝুলিয়ে ঘুরতে দেখা যায়।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি গোলাম রসুল কলির ব্যক্তিগত দেহরক্ষী আশিকুজ্জামান। কলিও পরে বিষয়টি স্বীকার করে নেন।
পরে আগ্নেয়াস্ত্রটির লাইসেন্স বাতিলের জন্য নড়াইল জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন:
পাটমন্ত্রীর মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শন: লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ