আমাদের দেশে দুয়েকজন কীর্তিমান মানুষ আছেন, যারা একুশে বা স্বাধীনতা পদকের মতো জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন রীতিমতন জবরদস্তি করে। পুরস্কার পাওয়ার অযোগ্যরা অনেকেই পুরস্কার পেয়েছেন তদবিরের জোরে। তদবির যে প্রকাশ্যে হয় না, বলাবাহুল্য।তবে পুরস্কারের জন্য কারোর নাম ঘোষণা করার পর তা বাতিল বা স্থগিত করাটা গণহেনস্তার সামিল।
Published : 28 Jan 2025, 07:03 PM
কয়েক দিনের ব্যবধানেই পুরস্কার ও তিরস্কার মিলে যাচ্ছে একই লোকের ভাগ্যে– পুরস্কারের নামে হচ্ছেন হেনস্তার শিকার। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদায় নেওয়া সরকারের সময়ও এমনটা ঘটেছিল, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও ঘটল কাণ্ডটা।
আমাদের দেশে দুয়েকজন কীর্তিমান মানুষ আছেন, যারা একুশে বা স্বাধীনতা পদকের মতো জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন রীতিমতন জবরদস্তি করে। জবরদস্তিকারীরা যে পুরস্কার পেতে পারতেন না এমন নয়। তবে পুরস্কার পাওয়ার অযোগ্যরাও অনেকে পুরস্কার পেয়েছেন তদবিরের জোরে। তদবির যে প্রকাশ্যে হয় না, বলাবাহুল্য। তবে পুরস্কারের জন্য নাম ঘোষণা করার পর বাতিল বা স্থগিত করাটা গণহেনস্তার সামিল।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারকে জাতীয় পুরস্কার বলা না হলেও এর একটা জাতীয় মর্যাদা আছে। এটা মূলত সাহিত্য পুরস্কার, কেউ কবিতায়, কেউ কথাসাহিত্য, কেউ আবার নাটক ও নাট্যসাহিত্যে অবদানের জন্য পুরস্কার পান। পুরস্কারের তালিকায় শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য নিয়ে কাজ, অনুবাদ, বিজ্ঞান, গবেষণা, প্রবন্ধ-গদ্য ইত্যাদি রয়েছে।
এবার ২০২৪ সালের পুরস্কারের জন্য ১০ জনের নাম ঘোষিত হয়েছিল। পরে ঘোষিত পুরো তালিকাটিই স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে পুরস্কার পেয়ে পুরস্কার প্রত্যাখানের কিছু আমাদের জানা আছে। এরশাদ সরকারের শাসনামলে আশির দশকের শুরুতে নাট্যকার মামুনুর রশীদ বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রত্যাখান করেছিলেন, গত বছরই এক যুগ আগে পাওয়া পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। এবারও স্থগিত হওয়া তালিকায় কথাসাহিত্যে পুরস্কারের জন্য স্থান পাওয়া সেলিম মোরশেদ পুরস্কার প্রত্যাখানের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তারও অনেক আগে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখান করেছিলেন গবেষক ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর এবং ১৯৭৪ সালে পল্লিকবি বলে খ্যাত জসীমউদ্দীন।
ধারণা করা যায়, উমর তার রাজনৈতিক চিন্তা থেকে পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কেননা, বাংলা একাডেমির পরেও বিভিন্ন পুরস্কার প্রত্যাখান করেছেন তিনি। জসীমউদ্দীনের প্রত্যাখানের কারণ যে অভিমান, সেটা অনুমান করতে অনেক তথ্য-উপাত্তের প্রয়োজন হয় না। তাকে পুরস্কার দেওয়ার কয়েক বছর আগে ১৯৬৯ সালে শামসুর রাহমানকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আল মাহমুদ পুরস্কৃত হয়েছিলেন তারও এক বছর আগে ১৯৬৮ সালে। জসীমউদ্দীনের অভিমান হওয়া স্বাভাবিক; রবীন্দ্র, নজরুল ও জীবনানন্দীয় ঘরাণার বাইরে তিনি বাংলা কবিতায় একেবারে স্বতন্ত্র ধারার স্রষ্টা। স্বয়ং আল মাহমুদ কবিতায় তার নিজের ধারা বিনির্মাণে জসীমউদ্দীনের কাছে কতটা ঋণী তা বলেছেন স্পষ্ট করে।
এর বাইরেও বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দুটি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা রয়েছে। ১৯৯৩ সালে সাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আহমদ ছফা। ছফাকে পুরস্কৃত করতে না পারা বাংলা একাডেমির এক বড় ব্যর্থতা বলে মনে করা হয়। ২০১৯ সালে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখান করেন আমেরিকা প্রবাসী কবি ওমর শামস। মূলত “প্রবাসী পরিচয়ে’ পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি।
পুরস্কার প্রত্যাখানের বেশ উদাহরণ থাকলেও পুরস্কার দিয়ে পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিরল। একটি ঘটনা আছে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে। এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ স্বাধীনতা পদকের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০২০ সালে। প্রবল সমালোচনার মুখে সেটি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে এমনটা এবারের আগে আর ঘটেনি।
এই তো এক বছর আগেও পুরস্কারটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। অভিযোগ ওঠেছিল, একজন তরুণকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য রীতিমতন পুরস্কার নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের হাতে অগাধ ক্ষমতা রয়েছে, সেটি ব্যবহার করে গত বছর অগাস্টে নাটক ক্যাটাগরির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল সাহিত্যনির্ভর আর্টফিল্ম বা নান্দনিক চলচ্চিত্রকে।
পৃথিবীর সব দেশেই পুরস্কার দেওয়ার রীতি আছে, তাই এই নিয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। যারা পুরস্কার পান তারা নিজেদের সাধনা ও অবদানের জন্য পুরষ্কৃত হন। পুরস্কৃত হলে পত্রিকায় ছবি ছাপা হবে তাদের, কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা চলবে, কারো কারো সম্বন্ধে বড় বড় প্রবন্ধও ছাপা হবে। সেটা খুবই যুক্তিসঙ্গত। তবে এই লেখা তাদের নিয়ে নয়, অন্য যারা পুরস্কার পেতে পেতেও হোঁচট খেয়ে পড়েন তাদের নিয়ে।
কেউ নাম কুড়িয়েছেন, কিন্তু পুরস্কার জিনিসটা তাদেরকে সবসময় বিবেচনার বাইরে রেখেছে– একসময় তাদের কাজ আলো ছড়িয়েছে, তারা পুরস্কারের উর্ধ্বে উঠে গেছেন। জীবদ্দশায় নিশ্চয় তাদেরকে প্রশ্ন শুনতে হয়েছিল, কোথায় তোমার পুরস্কার? তারা গলায় মালা পাননি সত্য, তবে তাদেরকে তা নিয়ে বিড়ম্বিতও হতে হয়নি।
বিড়ম্বিত হতে হয় তাদের, যারা গলায় মালা পেয়েও তা সঙ্গে সঙ্গে ছিনিয়ে নেয়া হয় নানান কারণ দেখিয়ে। একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার– আরো পুরস্কার হয়তো থাকতে পারে, যেমন শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থগার পুরস্কার। কে পাচ্ছেন পুরস্কার সেটা বড় কথা নয়, হৈ চৈ হচ্ছে– কে পেয়েও পাচ্ছেন না পুরস্কার, তা নিয়ে। তার কার্যবৃত্তান্ত ও তার পারিবারিক ইতিহাস খতিয়ে দেখা হবে। কার সঙ্গে তার ছবি আছে, কোথায় তার কি বিবৃতি ছিল, সবই ফেসবুক ও পত্রিকায় লেখা হবে। কেউ কেউ আবার পুরস্কার বাতিলের দাবি জানিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন রাস্তায়, বাংলা একাডেমি চত্বরে।তারপর ক্ষমতাবানেরা সিদ্ধান্ত নেবেন, তার নাম কেটে দেওয়া হবে কিনা। তিনি কারো চোখে নিন্দিত, আবার কারো চোখে নন্দিত।
বাংলা একাডেমির স্থগিত হওয়া পুরস্কার, আবার ঘোষিত হলে কয়েক জনের যে নাম কাটা পড়বে এটা সন্দেহাতীত।শেষ পর্যন্ত যারা তাদেরকে ‘নিন্দিত’ ভাবেন, তারাই জয়লাভ করবেন। তার বা তাদের পুরস্কার বাতিল করে নতুন নামের তালিকা ঘোষণা করা হবে। আর যার বা যাদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, তার প্রাপ্তিও নেহায়েত কম হবে না।তিনি বা তারা পেয়ে যাবেন জাতীয় ‘হেনস্তা পুরস্কার’। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে, নিজ স্ত্রীর কাছেও কিছুদিন কাঁচুমাচু থাকতে হবে, মনস্তাত্ত্বিক বিদ্যা না পড়েও তা বলে দেওয়া যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে, হেনস্তা তো আরো বেশি। হয়তো দেয়ালে পড়ে যাবে চিকা। বিভাগে ছাত্রদের ক্লাস বয়কটের হুমকি পাবেন। পুরস্কারটা তিনি হয়তো চাননি বা কোনো তদবির করেননি, তবুও কারা যেন নামটা দিয়ে দিল, পরিণতিতে এখন এত হেনস্তা।
শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও ভাষাসংগ্রামী অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিমকে একুশে পদক দেওয়া হয়নি। পদক ও পুরস্কার পাননি আরো অনেক গুণীজন। আবার নির্মেলন্দু গুণ অনেক পুরস্কারই পেয়েছেন। কিন্তু ২০১৬ সালে গুণীয় কায়দায় উচ্চকণ্ঠে দাবি করলেন কেন তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে না? তার দাবি অনুযায়ী তাকে পুরস্কার দিতে বাধ্য করেছিলেন কর্তৃপক্ষকে। গুণ অনেক ব্যাপারেই আলোচিত, একবার দাবি করলেন কৃতিজনের বাড়িতে সরকারকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস লাইন দিতে হবে। কিন্তু ওইগুলো নির্মেলন্দুর গুণের ‘পার্শ্ব-চর্চা’, কিন্তু কবিতায় তার অবদানের জন্য তাকে দুবারও যদি বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়, কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আবার তার ‘পার্শ্ব -চর্চা’ নিয়ে ক্ষমতাবানদের যদি আপত্তি থাকে, তাহলে পুরস্কারের তালিকা থেকে তার নাম বাদও পড়তে পারে।
কবি আল মাহমুদকেও তার 'পার্শ্ব -চর্চা' নিয়ে কম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। তার মৃত্যুতে আমাদের রাষ্ট্রের কর্ণধাররা একটা শোক বাণী জানবার সৌজন্যটুকুও দেখাননি। সেই রাষ্ট্রীয় কর্ণধারেরা এখন কোথায়? 'কবিতা তো মক্তবের মেয়ে, চুল খোলা আয়েশা আক্তার’-এর কবি আল মাহমুদ এখনো কবিতা ভক্ত মানুষের মন ও মানসে নিজ মহিমায় উচারিত! দিনে দিনে কবি হিসেবে তিনি আরও উজ্জ্বল হবে।
কত কবি সাহিত্যিকদেরকে যে 'পার্শ্ব-চর্চা' নিয়ে ভুগতে হয়েছে, তা হলো প্রাক্তন ক্ষমতাবানদের নৈকট্য, যা নতুন ক্ষমতাসীনদের না-পছন্দ। কিন্তু এই ক্ষমতাবানদের থেকে দূরে থাকা খুব সহজ নয়। পার্থিব দুনিয়ায় চাকরি লাগে, চাকরির স্থায়িত্ব লাগে। কবিকে কবিতা লিখতে কালি-কলম কিনতে হয়, বাড়ি করতে প্লট পেতে হয়– কবি না চাইলেও কবির স্ত্রী চাইবেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই 'পুরস্কার' কবিতাটা– কবি গিন্নি সংসারের অভাব অনটনে অসহ্য হয়ে, কবিকে জোর করে পাঠিয়ে দিলেন রাজার কাছে, যদি রাজ-কারুণ্য পাওয়া যায়।
'আমাদের রাজা গুণীর পালক,
মানুষ হয়ে গেলো কত যে লোক,
ঘরে তুমি জমা করিলে শোলক
লাগিবে কিসের কাজে।'
রাজা কবির কবিতা শুনে এত বিমোহিত হয়ে গেলেন যে, কবিকে অর্থভাণ্ডার থেকে রত্ন দিয়ে অসম্মান না করে, নিজের গলার মালাটা পরিয়ে দিলেন।
‘নানা লোকে নানা পেয়েছে রতন,
আমি আনিয়াছি করিয়া যতন
তোমার কণ্ঠে দেবার মতন
রাজকণ্ঠের মালা।'
রাজার গলার মালা কবি-গিন্নির অভাব-অনটন মেটাতে যে খুব কাজে লাগেনি, তা ধরেই নেয়া যায়। তবুও অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজার কাছে কবিকে যেতে হলো। বাড়িতে এসে নিজের গলার মালা স্ত্রীর গলায় পরিয়ে দিয়ে ভারমুক্ত হলেন। কবি আবার কবিতা লিখতে বসে গেলেন। কিন্তু সংসার করতে গিয়ে 'পার্শ্ব -চর্চা' করতেই হলো।
কারা পুরস্কারের নাম নির্বাচন করেন? হয়তো কয়েক জন বিজ্ঞ বিচারক, সাহিত্যের জন্য নামকরা লেখক বা কবি। তারা বইপত্র ঘেটে, বিভিন্ন জনের অভিমত নিয়ে ভাবলেন, সমীর আলী কেন যে এতদিন পুরস্কার পেলেন না, খুব ভালো লিখেন এবং অনেকদিন ধরে লিখছেন। সাহিত্যের বিচারকদের রাজনৈতিক এরিয়েল খুব তীক্ষ্ণ হবার কথা নয়। সমীর আলী কখন কার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন বা কখন কার সঙ্গে ছবি উঠিয়েছিলেন এইসব তাদের জানার কথা নয়। যারা জানেন তারা যদি ক্ষমতাশীল হন এবং সমীর আলীর পূর্ব 'পার্শ্ব-চর্চা' তাদের অপছন্দ হয়, তাহলে পুরস্কার অবশ্যই বাতিল হবে, সমীর আলী কি লিখেছেন এবং কত ভালো লিখেছেন এসব যাচাই-বাছাই করার সময় নেই তাদের।
আমি একজনকে জানি, যার কলেজ জীবনের বন্ধু ছিলেন ভূতপূর্ব সরকারের এক শীর্ষ লোক। তার অঙুলি হেলনে যে কেউ যে কোনো পুরস্কার পেতে পারতেন আবার যে কাউকে ইচ্ছে করলে ডুবিয়ে দিতে পারতেন। সেই শীর্ষ নেতা, তার বন্ধুর নাম ঢুকিয়ে দিলেন– বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত গবেষণার জন্য জাতীয় পুরস্কারের তালিকায়। যিনি পুরস্কার পেলেন, তিনি জানতেন, তার চেয়েও অনেক যোগ্য লোক আছেন। পুরস্কার পেয়ে তিনি দারুণ অপ্রস্তুত হলেন, বন্ধু বিব্রত হবেন তাই কোনো প্রতিবাদ করলেন না। এই ক্ষেত্রে পুরস্কার পেয়েই তিনি নিজের কাছে হেনস্তা হলেন, হয়তো কিছুটা বন্ধু-বান্ধব-চেনাজনদের কাছেও।
নোবেল পুরস্কার নির্বাচনের জন্য নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট প্রতিবছর পাঁচ সদস্যের একটা জুরি গঠন করে দেয়। তারা যে প্রতিবার সঠিক লোককে নির্বাচিত করেছেন, তা বলা যাবে না। অনেককে নির্বাচিত করার পরেই বোঝা গেছে যে সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো না। কিন্তু কোনো নোবেল বিজয়ীর পুরস্কার কখনো কেড়ে নেওয়া হয়নি।
১৯৯১ মিয়ানমারের অং সান সুচি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন গণতন্ত্রের জন্য সামরিকজান্তার বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের জন্য, নোবেল পাবার পর সেই সুচিই সামরিকজান্তার সঙ্গে হাত মিলালেন এবং রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞে জান্তাকে সমর্থন জানালেন। বারাক ওবামাও শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন ২০০৯ সালে, অথচ তার শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকগুলো দেশের স্থিতিশীলতা তিনি ভেঙে দিয়েছেন, এগুলোর মধ্যে ছিল আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়া। রাশিয়ার লেখক আলেক্সান্দর সলজেনিৎসিন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৭০ সালে।তার কর্মকাণ্ড সাহিত্যের চেয়েও বেশি বিস্তৃত ছিল, বিশেষ করে ক্রেমলিনের দমননীতির বিরুদ্ধে।তিনি আট বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের কুখ্যাত গুলাগ ক্যাম্পে কারারুদ্ধ ছিলেন। অনেকে বলেন তার নোবেল পুরস্কার ছিল রাজনৈতিক।
বড়-ছোট পুরস্কারগুলো নিয়ে এত কথার কারণ হলো, আমার মতে, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার ঘোষণার আগে সবদিক ভেবেচিন্তে ঘোষণা করা উচিত। একবার নাম ঘোষণা করার পর, আবার পরিবর্তন করা দারুণ অন্যায়, একটা খারাপ উদহারণ সৃষ্টি হলো। ভবিষ্যতে যাদেরকে পুরস্কারের জন্য শর্ট লিস্টে রাখা হবে, তাদের মেধা ও অবদান যাচাই করার আগে তাদের 'পার্শ্ব -চর্চা'গুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হোক। সেগুলো ক্ষমতাসীনদের অনুমোদনের পরেই শুধু অবদানের বিষয় বিবেচনা করা হোক। এতে হয়তো অনেক মেধাবী লোক বাদ পড়বেন, তবে তাদের জন্য 'হেনস্তা পুরস্কার' পাওয়ার চেয়েও পুরস্কার না পাওয়া অনেক গর্বের ব্যাপার।
আরও পড়ুন
সৈয়দ জামিল, সলিমুল্লাহ খানসহ ১০ জন পাচ্ছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার স্থগিত
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার: নারী লেখক না থাকাকে ‘বিস্ময়কর’ বললেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা
পুরস্কার বিতর্ক: শাস্তির দাবিতে বাংলা একাডেমি 'ঘেরাও কর্মসূচি'
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার: আস্থা কেন টলছে?