মুম্বাই হামলার সন্দেহভাজন রানাকে ভারতের হাতে তুলে দিল যুক্তরাষ্ট্র

ভারতে নামার পর বৃহস্পতিবারই তাকে ১৮ দিনের হেফাজতে পেয়েছে ভারতীয় জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ।

মুম্বাই হামলার সন্দেহভাজন তাহাউর রানা। ছবি: এএনআই/বিবিসি

সতেরো বছর আগে মুম্বাইয়ে হওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সন্দেহভাজন তাহাউর রানাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া শিকাগোর ব্যবসায়ী রানাকে বহন করা বিমান বৃহস্পতিবার ভারতে দিল্লিতে নামে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

পরে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ তাকে ১৮ দিনের জন্য হেফাজতে নেয়।

২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত রানাকে মুম্বাই হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বাকে সহায়তার দায়ে ২০১৩ সালে তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যগত কারণে ২০২০ সালে রানা কারাগার থেকে ছাড়া পান। ভারত প্রত্যর্পণের অনুরোধ করলে তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়।

২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ১৬৬ জনের প্রাণ গিয়েছিল। হামলার জন্য লস্কর-ই তৈয়বা ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করে আসছে ভারত।

রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার বাল্যবন্ধু ডেভিড কোলম্যান হ্যাডলি লস্কর-ই তৈয়বাকে হামলায় সহায়তা করেছিলেন।

পাকিস্তানে বেড়ে ওঠা রানা সেনাবাহিনীর মেডিকেল কর্পে যোগ দেওয়ার আগে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার চিকিৎসক স্ত্রী দুজনই ২০০১ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান।

এরপর তারা শিকাগোতে চলে আসেন। এখানে রানা অভিবাসন ও ভ্রমণ কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বাকে সহায়তায় রানা বন্ধু হ্যাডলির সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশেই লস্কর-ই তৈয়বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় আছে।

রানার বিরুদ্ধে মামলা চলাকালে মার্কিন কৌঁসুলিরা বলেছিলেন, হ্যাডলি রানার অনুমতি নিয়েই তার শিকাগোভিত্তিক অভিবাসন কোম্পানির একটি শাখা মুম্বাইয়ে খোলেন এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোথায় কোথায় হামলা করা যায় তার তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন।

হ্যাডলি পরে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী বনে যান। তিনি লস্কর-ই তৈয়বা ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশ রাখার দায়ও স্বীকার করে নেন এবং রানার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।

পাকিস্তান শুরু থেকেই হ্যাডলি ও লস্কর-ই তৈয়বার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের যোগাযোগের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

২০১১ সালে শিকাগোর ফেডারেল আদালতের জুরিরা রানাকে লস্কর-ই তৈয়বাকে সহায়তা এবং ডেনিশ সংবাদপত্র ইল্যান্স পোস্টেনে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। ইল্যান্স পোস্টেনে হামলার ওই পরিকল্পনা পরে বাতিল হয়ে যায়।

হ্যাডলিকে মুম্বাই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শিকাগোর একটি কারাগারে এখনও সাজা খাটতে হচ্ছে তাকে।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণে অনুমতি দিলেও মার্কিন সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা আটকে ছিল।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রানা ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রানা মার্কিন আদালতে আপিল করলেও দেশটির সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।

অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা ও সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট একাধিক অভিযোগে ভারতে রানার বিচার হবে।

মুম্বাই হামলা: সন্দেহভাজন রানাকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র