Published : 11 Dec 2023, 03:53 PM
শীতের সকালে নাস্তা ওটমিল বা ওটস খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এটা পুষ্টি যোগায় ও সুস্থ থাকতে সহায়ক।
ওটস খাওয়া শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তবে কতটা খাওয়া উপকারী সে সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।
যতটা ওটস খাওয়া উচিত
স্বাস্থ্যোপকার পেতে প্রতিদিন এক কাপ রান্না করা ওটস খাওয়া উপকারী- জানান মার্কিন পুষ্টিবিদ জুলি আপটন।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “এক কাপ পরিবেশন রান্না করা ওটসে রয়েছে চার গ্রাম আঁশ। এছাড়াও থায়ামিন, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। ওটস প্রাকৃতিকভাবেই সোডিয়াম মুক্ত এবং সার্বিকভাবেই চর্বি ও স্যাচুরেইটেড ফ্যাট কম থাকে।”
এছাড়াও রয়েছে বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
এক পরিবেশন সাধারণ ওটসে প্রায় ১৬০ ক্যালরি, প্রায় সাড়ে তিন গ্রাম মোট চর্বি, এক গ্রামেরও কম স্যাচুরেইটেড চর্বি ও ছয় গ্রাম প্রোটিন থাকে।
এক পরিবেশন ওটসে ২৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও এক গ্রাম প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। মিষ্টি ওটস খেতে চাইলে এতে সামান্য চিনি যোগ করা যেতে পারে
মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্যানুসারে এক কাপ রান্না করা ওটমিলে থাকে১৬০ ক্যালোরি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, সাড়ে তিন গ্রাম চর্বি, ০.৭ গ্রাম স্যাচুরেইটেড চর্বি, ২৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট, ৪ গ্রাম আঁশ ও এক গ্রামের কম শর্করা।
প্রতিদিন ওটমিল খাওয়ার উপকারিতা
ওটস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদ স্বাস্থ্য ভালো রাখে
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেইশন’য়ের তথ্যানুসারে, ওটমিল দিয়ে নিয়মিত নাস্তা করা হলে এতে থাকা দ্রবীভূত আঁশ, স্যাচুরেটেইড চর্বি ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। আর এই উপকার পেতে দৈনিক তিন গ্রাম আঁশ প্রয়োজন।
২০১৯ সালে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওটসে আছে বেটা গ্লুকান নামক এক ধরনের দ্রবণীয় আঁশ যা মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে।
এক পরিবেশন (রান্না করা এক কাপ অথবা কাঁচা আধা কাপ) ওটসে দুই গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ থাকে যা প্রায় এক পরিবেশন ওটসয়ের অর্ধেক পরিমাণ আঁশের সমান।
অর্থাৎ রান্না করা দেড় কাপ অথবা কাঁচা তিন থেকে চার কাপ ওটস খাওয়া ৩ গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ সরবরাহ করে যা হৃদ-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
হজম স্বাস্থ্য ও অন্ত্রের অণুজীবের জন্য উপকারী
কিছু প্রাণীর উপর করা গবেষণায় দেখা যায় যে, ওটস অন্ত্রের মাইক্রো বায়োটা ভারসাম্য উন্নত করে। এটা উপকারী ব্যাক্টেরিয়া উন্নত করতে এবং ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া দূর করার ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক বলে জানা যায়।
‘জার্নাল অব ফাংশনাল ফুডস’য়ে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, ওটস খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
বাড়তি পাওয়া হিসেবে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর সঙ্গে সাধারণ দই যোগ করা যায়। এর প্রোবায়োটিক অন্ত্র সুস্থ ও ভারসাম্য বজায় রাখে।
রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে
‘ফুডস’ জার্নালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি’র দুগ্ধজাত ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের করা গবেষণায় বলা হয়, ওটস খাওয়ার নানান উপকারিতা রয়েছে যথা- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও অন্ত্র সুস্থ রাখে, ক্যান্সার ও ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’য়ের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
অন্যান্য গবেষোণায় দেখা যায়, এটা প্রদাহ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
তবে প্রাথমিকভাবে এসব উপকারিতার কথা জানা গেলেও, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
যে ধরনের ওটস উপকারী
বাজারে নানান রকমের ওটস পাওয়া যায়। এর মাঝে আছে ‘ইন্সট্যান্ট’, ‘কুইক কুকিং’ ‘ওল্ড ফ্যাশন্ড’ এবং ‘স্টিল কাট’ যা আইরিশ ওটস নামে পরিচিত।
‘স্টিল কাট ওটস’ সবচেয়ে কম প্রক্রিয়াজাত করা থাকে। এতে কেবল খোসা ছাড়ানো থাকে। এগুলো রান্না হতে সময় বেশি লাগে এবং অনেক বেশি দানাদার।
রোল্ড ওটস (ওল্ড ফ্যাশন্ড নামে পরিচিত) স্টিল কাট ওটস থেকে তৈরি এবং তা ভাপ ও রোল করার মাধ্যমে চ্যাপ্টা আকার দেওয়া হয়। তাই এটা দেখতে সমতল, শুষ্ক যা রান্না হতে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে এবং মসৃণ হয়।
ইন্সট্যান্ট ওটস ওটসের দানা কেটে ছোট টুকরা থেকে তৈরি করা হয়। টুকরা করার পরে তা ভাপ দেওয়া ও রোল করা হয় এবং পরে পাতলা আকার লাভ করে। পুষ্টি বিবেচনায় ভাপানো ও রোল করা ওটসে পুষ্টিমান কম।
স্বাস্থ্যকর খাবারের বিবেচনায় পছন্দের তালিকায় ‘কুইক কুক ওটস’ থাকলেও ‘স্টিল কাট ওটস’ বাছাই করা উচিত।
‘কুইক কুক ওটস’ দ্রুত রান্না হয় এবং কম উপকারী। ‘ইন্সট্যান্ট রোল্ড’ ও ‘স্টিল কাট ওটস’ উপকারী বিটা গ্লুকান আঁশ সরবারহ করে যা গোটা শস্যে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের মতোই কাজ করে।
ওটস খাওয়ার সময় অবশ্যই বাড়তি চিনি এড়িয়ে চলতে হবে।
ছবি: পেক্সেল।
আরও পড়ুন