লক্ষণগুলো দেখা দিলে আর সময় মতো চিকিৎসা নিতে পারলে সার্ভিকাল ক্যান্সার থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।
Published : 08 Sep 2022, 01:34 PM
শ্রোণিদেশে ব্যথা ও অতিরিক্ত শ্রাবসহ জরায়ু সংযোগস্থলে ক্যান্সার হওয়ার আরও লক্ষণ রয়েছে।
তবে এই বিষয়ে জানা না থাকলে লক্ষণগুলো সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি বলছে, “যোনিদেশ আর জরায়ুর মধ্যবর্তী সংযোগস্থলে ‘সার্ভিক্স’ নামক অংশে যে ক্যান্সার হয় সেটাই হল ‘সার্ভিকাল ক্যান্সার’। প্রাথমিক অবস্থায় এর কোনো উপসর্গ পাওয়া যায় না। যখন আশপাশের কোষে ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় তথনই সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু করে।”
সম্ভাব্য উপসর্গ হল নারীর যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত। একে অবহেলা করলে পরে অস্ত্রোপচার, ‘কেমোথেরাপি’, ‘রেডিওথেরাপি’ ইত্যাদির মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এই সংস্থা আরও জানায়, “একসময় ক্যান্সারে মৃত্যু হওয়া সিংহভাগ আমেরিকার নারীদের মৃত্যুর কারণ ছিল এই ‘সার্ভিকাল ক্যান্সার’। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কল্যাণে এখন পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সারিভিক্স’য়ের পরিবর্তন চিহ্নিত করা যায়। ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার আগেই তার সম্ভাবনা শনাক্ত করা যায়, এই পরীক্ষার নাম ‘প্যাপ স্মিয়ার’।
‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ গাইনেকোলজিকাল ক্যান্সার’য়ে অগাস্টে প্রকাশিত গবেষণার বরাত দিয়ে জানানো হয়, প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হওয়া ‘সার্ভিকাল ক্যান্সার’য়ের মাত্রা কমে গেলেও যুক্তরাষ্টে ‘অ্যাডভান্সড স্টেজ সার্ভিকাল ক্যান্সার’য়ের মাত্রা ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বেড়েছে। বিশেষ করে কমবয়সি নারীদের মাঝে।
আর এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অবহেলিত কিছু উপসর্গ।
রক্তপাত ও ব্যথা
যুক্তরাজ্যের দ্য রয়্যাল মার্সডেন হসপিটাল’য়ের ‘কনসালটেন্ট গাইনোকোলজিকাল অনকোলজি সার্জন’ জন বাটলার বলেন, “নারীর যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক কিছু বেরিয়ে আসা, নতুন ধরনের কোনো ‘পেলভিক পেইন’ নিতম্বে ব্যথা, যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত যা স্বাভাবিক নয়- এসবই ‘সার্ভিকাল ক্যান্সার’য়ের ইঙ্গিত হতে পারে। সহবাসের সময় বা পরে, দুই ঋতুস্রাবের মাঝামাঝি সময়ে, রজোবন্ধের পর রক্তপাত হওয়া অস্বাভাবিক।”
‘রাটগাজ নিউ জার্সি মেডিকাল স্কুল’য়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ অবসটেট্রিক্স, গাইনোকোলজি অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেল্থ’ বিভাগের অধ্যাপক মার্ক এইচ. আইনস্টাইন বলেন, “পেলভিক পেইন’ যদি ‘পেলভিক’ বা নিতম্ব থেকে পায়ের দিকে নেমে যায় তবে সেটা ‘সার্ভিকাল ক্যান্সার’য়ের লক্ষণ।”
পা ফুলে যাওয়া, মূত্র ও মল ত্যাগে সমস্যা, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি হল গুরুতর মাত্রায় ‘সার্ভিকাল ক্যান্সার’য়ের পূর্বাভাস।
নিয়মিত ‘প্যাপ স্মিয়ার’ করালে রোগ হওয়া সম্ভাবনা কমে
ডা. বাটলার বলেন, “যারা নিয়মিত ‘প্যাপ স্মিয়ার’ পরীক্ষাটি করান তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের ২১ বছর বয়স থেকেই এই পরীক্ষা করানো শুরু করা হয়। প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর পরীক্ষাটি করতে হয়।”
‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)’ যা সহবাসের মাধ্যমে ছড়ায়, সেই সংক্রমণের পরীক্ষাও হয়ে যায় এই পরীক্ষা থেকেই। এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকেই প্রায় সকল ‘সার্ভিকাল ক্যান্সার’য়ের সূত্রপাত হয়।
তিনি আরও জানান, তবে এটা ঠিক যে সকল ‘এইচভিপি’র সংক্রমণ ‘সার্ভিকাল ক্যান্সারে’ গড়ায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ জানাচ্ছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টিকা পাওয়া যায়, যা ১১ থেকে ১২ বছর বয়সে নিতে হয়। তবে আগে না নেওয়া হলে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত সেই টিকা নেওয়া যায়।
ধূমপান, একাধিক মানুষের সঙ্গে অনিরাপদ যৌনসঙ্গম, চার বছরের বেশি সময় ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকেই এই ক্যান্সার শরীরে বাসা বাঁধে।
আরও পড়ুন
মলাশয়ে ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ