‘ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু’ ছাড়াও নানান উপাদান দিয়ে খুশকির সমস্যা দূর করা যায়।
Published : 24 Dec 2024, 07:11 PM
ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে অনেকেরই খুশকির সমস্যা বাড়তে দেখা যায়। তবে এই সমস্যায় ভোগার পেছনে শুষ্কতাই একমাত্র কারণ নয়।
যদিও শীতের বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে চামড়া ফাঁটে, মরা চামড়া ওঠে। আর মাথার মরা চামড়া আঁশের মতো ওঠা শুরু করলে তাকে বলে খুশকি।
এই ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়েবএমডি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চীন প্রবাসী ভারতীয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জিলপা শেইখ শীতকালে খুশকি হওয়ার নানান কারণ সম্পর্কে জানান।
শুষ্ক মাথার ত্বক সাধারণত বেশি তেল উৎপন্ন করে। যা খুশকির মাত্রা বাড়ায়।
যেসব অনুজীববের কারণে খুশকি হয় সেগুলো উচ্চ তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। শীতের সময় উলের টুপি বা স্কার্ফ দিয়ে চুল থেকে কান পর্যন্ত ঢেকে রাখার কারণে মাথায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে খুশকি বাড়তে পারে।
ঠাণ্ডার কথা চিন্তা করে চুল কম ধোয়া হলে তেল, ময়লা মাথায় জমে খুশকির সমস্যা তৈরি করতে পারে।
হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনে মাথার ত্বকে বেশি তেল নিঃসরণ ঘটে। যেমন- গরম পানি দিয়ে গোসলের পর চুলে মাথায় ঠাণ্ডা বাতাস লাগা। এর থেকেও খুশকির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে তৃষ্ণা কম লাগে। ফলে পানি পান কম হয়। যে কারণে দেহে আর্দ্রতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলাফল হতে পারে খুশকি দেখা দেওয়া।
চুল পরিচর্যার ও সাজানোর নানান তাপীয় যন্ত্র যেমন- আয়রনস, স্ট্রেইথনার, হেয়ার ড্রায়ার ইত্যাদি অতিমাত্রায় ব্যবহার করলেও খুশকি হয়।
এছাড়া ঘরের ভেতর তাপমাত্রা বৃদ্ধির যন্ত্র ব্যবহারে, ঘরের বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়। যা থেকে খুশকি হতে পারে।
খুশকি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
খুশকি দূরে রাখার অন্যতম উপায় হল মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। আর খুশকি হলে ব্যবহার করা যায় ‘ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু’। তবে সব খুশকি দূর করার সব শ্যাম্পুর উপাদান এক নয়।
কোল টার প্রিপারেশন: ‘ডেনোরেক্স থেরাপিউটক প্রোটেকশন’, ‘নিউট্রোজেনা টি/জেল’ এবং ‘সাইটেরা’- এসব খুশকি নিরাময়ের ওষুধে এই উপাদান থাকে। এটা মাথা ত্বকের চামড়া মরার পরিমাণ কমায়।
পাইরিথিয়াম জিঙ্ক: এই উপাদান ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস ধ্বংস করে। ‘সেলসান ব্লু ফর ইচি ড্রাই স্ক্যাল্প’, ‘নিউট্রোজেনা টি/জেল ডেইলি কন্ট্রোল ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু এবং ‘হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স’ এসব পণ্যে এই উপাদান থাকে।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এবং সালফার: এই উপাদান দুটি একসাথে মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াতে ও মরা চামড়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। ‘সেবেক্স’ এবং ‘সেবালেক্স’ পণ্যে এটা থাকে।
সেলেনিয়াম সালফাইড: এটা ফাঙ্গাস ধ্বংস করে। আবার চুলের রং নষ্ট করতে পারে। ‘ড্যানড্রেক্স’, ‘হেড অ্যান্ড শোল্ডারস ক্লিনিকাল স্ট্রেন্থ’ এবং ‘সেলসান’ এই পণ্যগুলোতে এই উপাদান থাকে।
কোনোটকোনাজোল: এটা খুবই শক্তিশালী ফাঙ্গাস-ধ্বংসী উপাদান। ‘এক্সটিনা’, ‘নিজোরাল এ-ডি’ এবং ‘ক্সোলেজেল’ পণ্যে এই উপাদান থাকে।
ডা. শেইখ বলেন, “সবার সব ধরনের পণ্য সহ্য নাও হতে পারে। তাই পরিবর্তন করে দেখতে হবে খুশকি দূর করতে কোনটা বেশি কার্যকর ভাবে কাজ করছে।”
‘কোল টার’ যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এতে কারও অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। চুলের রং খানিকটা পরিবর্তন হতে পারে। ত্বকে কাটাছেড়া থাকলে ব্যবহার করা যাবে না, জ্বালাপোড়া করতে পারে। পাশাপাশি চোখে গেলেও জ্বলবে।
সূর্যের আলোর প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। তাই ব্যবহারের পর ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ব্যবহার করা যাবে না।
ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম
ভালো মতো শ্যাম্পু মাথায় মেখে পাঁচ মিনিট রাখতে হবে।
তারপর ভালো মতো ধুতে হবে। না করলে, শ্যাম্পুর বাড়তি অংশ থেকে গেল ত্বকে অস্বস্তি তৈরি হবে।
চুলের ধরন অনুসারে শ্যাম্পু ব্যবহার
যদি ‘স্ট্রেইট’ চুল হয় বা মাথার ত্বক হয় তৈলাক্ত তবে প্রতিদিন চুল ধোয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে দুবার।
কোঁকড়া বা প্যাঁচানো চুল হলে যখন প্রয়োজন তখনই পরিষ্কার করতে হবে। আর ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে মাত্র একবার। আর শুধু মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। চুলের অন্যান্য অংশ অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত। না হলে কোঁকড়া চুলে জট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
খুশকি দূর করতে ঘরোয়া সমাধান
ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার ছাড়াও অন্যান্য উপাদান দিয়ে খুশকি দূর করা যেতে পারে।
নারিকেল তেল: তিন থেকে পাঁচ চা-চামচ পরিমাণ তেল মাথার ত্বকে ঘষে ভালো মতো মেখে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এই তেলে থাকা লরিক অ্যাসিড ফ্যাঙ্গাস রোধী হিসেবে কাজ করে। মাথার ত্বক আর্দ্র রাখে।
অ্যালো ভেরা: শ্যাম্পু করার আগে অ্যালো ভেরার জেল মাথায় মাখতে হবে।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার: সিকি ভাগ পানিতে সিকি ভাগ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে মাথায় ঢেলে ১৫ মিনিট রেখে ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে। এই ভিনেগারের ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল’ প্রভাব খুশকি দূর করতে পারে।
অ্যাসপিরিন: দুটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট গুঁড়া করে শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে মাথা মাখতে হবে। দুই মিনিট রেখে ধুতে হবে ভালো মতো। অ্যাসপিরিনে আছে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, যা অনেক ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পুতেও থাকে।
বেইকিং সোডা: মাথা ও চুল ভিজিয়ে বেইকিং সোডা মাথার ত্বকে ছিটিয়ে কয়েক মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে এটা ‘আল্কালাইন’ বা ক্ষারীয় বলে চুলের ক্ষতিও করতে পারে।
লেবুর রস: দুই চা-চামচ লেবুর রস মাথার ত্বকে মেখে শুষে নেওয়ার জন্য কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর এক কাপ পানিতে আরও এক চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে ঢালতে হবে।
টক ফলে থাকা অ্যাসিড মাথার ত্বকে পিএইচ বা ক্ষারীয় মাত্রায় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল: মাথার ত্বকের অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল মেখে শাওয়ার ক্যাপ পরে রাতে ঘুমিয়ে থাকতে হবে। সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে ধুতে হবে। এটা আর্দ্রতা বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ফাঙ্গাসের আক্রমণ বাড়াতে পারে। তাই ব্যবহার করতে হবে অল্প পরিমাণে।
আরও পড়ুন