সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে ১৬টি লক্ষণ।
Published : 18 Jan 2024, 05:50 PM
প্রেম, ভালোবাসা বা দাম্পত্য সঙ্গীর মধ্যে ঝগড়া হওয়া স্বাভাবিক। তবে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হওয়া মোটেই স্বাভাবিক বিষয় নয়।
বহুদিন সম্পর্ক চলার পর সঙ্গীর মধ্যে নির্যাতন করার স্বভাব প্রকাশ পেলে হয়ত অবাক হতে হয় প্রথম প্রথম। তারপর অনেকেই এই ধরনের সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসেন, আবার কেউ পারেন না- বিভিন্ন কারণে।
তাই সঙ্গী ভবিষ্যতে নির্যাতনকারী হয়ে উঠবেন কি-না, সেটা বোঝার জন্য বেশ কিছু লক্ষণ পর্যবেক্ষণমূলক এক গবেষণার মাধ্যমের বের করেছেন কানাডা’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা।
‘সোশাল সাইকোলজিক্যাল অ্যান্ড পার্সোনালিটি সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় দাবি করা হয়, এসব লক্ষণ হতে পারে রোমান্টিক সঙ্গীর শারীরিক, মানসিক ও যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নির্যাতনকারী হিসেবে প্রকাশ পাওয়ার পূর্বাভাস।
সহযোগী গবেষক ডা. নিকোলিন শার্লট এই বিষয়ে সিএনএন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই ধরনের স্বভাব বোঝার জন্য এটাই প্রথম গবেষণা, যেখানে আন্দাজ করা হয়েছে নির্যাতনের লক্ষণের, নির্যাতনকারীকে নয়।”
তিনি আরও বলেন, “সংঘাত সাধারণত সম্পর্কের প্রাথমিক অবস্থায় দেখা দেয় না। খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রথম দেখার দিনে সঙ্গীর কাছ থেকে কটু বাক্য শুনতে হয়েছে কাউকে।”
“সময়ের সাথে যখন নির্যাতনের বিষয়গুলো ধরা পড়তে থাকে তখন অনেকেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না, কারণ ততদিনে হয়ত অনেক বেশি বিনিয়োগ করা হয়ে গেছে”- মন্তব্য করেন এই গবেষক।
তাই সম্পর্কের শুরুতেই যদি বিপৎসংকেতগুলো বোঝা যায়, তবে সেখানে সময় না দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া সহজ হবে।
এই পর্যবেক্ষণের জন্য গবেষকরা ২০০টি নির্যাতন ও অনির্যাতন মূলক চিন্তা, অনুভূতি ও স্বভাবের তালিকা তৈরি করে। তারপর ৩৫৫ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর সেসব নিরীক্ষা করে ১৬টি সতর্ক সংকেত আন্দাজ করতে সমর্থ হন।
লক্ষণগুলো সম্পর্কের ছয় মাসের মধ্যেই প্রকাশ পায় বলে জানানো হয় গবেষণাপত্রে। আর অনেকেই এই বিষয়গুলোকে অহঙ্কার, নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা এবং মানসিক অপরিপক্কতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
এই গবেষণায় সম্পৃক্ত না থেকেও ক্যালিফোর্নিয়া’র সান ফ্রান্সিককো বে এরিয়া’র মনোচিকিৎসক ডা. ডুয়ুগু বালান বলেন, “বেশিরভাগ সময় সম্পর্কের গতিশীলতায় থেকে আমরা মনে করি, এরকম শুধু আমার ক্ষেত্রেই হচ্ছে। হয়ত আমাদেরই ভুল।”
“তবে এটা যে সাধারণ কোনো বিষয় নয়, সেটাই গবেষণার প্রধান বিষয়”- মন্তব্য করেন বালান।
সংঘাতের প্রাথমিক পূর্বাভাস
শার্লট বলেন, “নিচের বৈশিষ্টগুলো থাকলে পরে সে নির্যাতনকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। বিশেষ করে যদি বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি চলে। অথবা প্রায়ই যদি করতে দেখা যায়।”
ইচ্ছে না হওয়ার পরও আপনি ও সঙ্গী সঙ্গমের লিপ্ত হচ্ছেন।
অপছন্দ হলেও সঙ্গীকে না বলতে পারা বা এরকম অনুভূতি কাজ করা।
সঙ্গীর ভুল স্বীকার না করা।
সঙ্গী আপনাকে অন্যের সাথে তুলনা করে।
সে কিছু চাইলে আপনি ‘না’ করলেও সঙ্গী বাজে বা নেতিবাচক ভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
তার সাথে একমত না হলে, আপনার যুক্তি বা কারণগুলো উপেক্ষা করে।
সঙ্গীর চিন্তায় মন গ্রাস করে থাকায় কাজে মনোযোগ দিতে বেগ পেতে হয়।
লোকজনের সামনে সঙ্গী অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
সঙ্গীর উদ্ধত ও অহংকারী আচরণ।
সঙ্গী আপনাকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে।
সঙ্গী আপনাকে সমর্থন দিতে চায় না।
সঙ্গী আপনাকে সবসময় সমালোচনা করে।
সঙ্গী আপনাদের সম্পর্ক থেকে অবাস্তব কিছু আশা করে।
সঙ্গী আপনাকে এড়িয়ে চলে।
কোনো কিছু মানা করার পরও সঙ্গী সেটা করে।
সঙ্গী আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়।
শার্লট বলেন, “এগুলো হল আমাদের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। তারমানে এই না অন্যান্য সতর্কতার সংকেতগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
অন্যান্য সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- সঙ্গী তার প্রাক্তনদের পাগল হিসেবে আখ্যা দেওয়া, রেস্তোরাঁর পরিবেশকারীর সাথে বাজে ব্যবহার, প্রাণীর ক্ষতি করা বা আপনার পছন্দের মানুষের সাথে সাক্ষাত করতে না চাওয়া।
এছাড়াও বালান বলেন, “পরিবার থেকে অপমান হওয়া, আপনার ভালোলাগে এমন শখ অনুৎসাহিত করা, নিজের আবেগ অনুভূতি প্রশমিত করতে না পারা বা অনলাইনে আপনি কী করছেন সেসব তীক্ষ্ণ নজর রাখা- এসবও লাল পতাকা হিসেবে দেখতে হবে।”
তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে
সম্পর্কে এরকম কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেওয়ার মানে এই নয়, আপনাকে এই সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। যদি না আপনি চান- মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞরা।
শার্লট বলেন, “তবে এর মাধ্যমে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাইতে ধীরে আগানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। হতে পারে আপনার সঙ্গী কোনো থেরাপিস্টের সাহায্য নিয়ে এসব বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন।”
বালান পরামর্শ দেন, “শুরুতেই সীমারেখা, চাহিদা ও কী ধরনের সম্পর্কের মাত্রা আপনি পছন্দ করেন সেটা বিষয়ে পরিষ্কার করা উচিত হবে।
“কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বাড়তি অনুসন্ধান করা যেতে পারে”- বলেন শার্লট, “যেমন- আমার সঙ্গী তার প্রাক্তনকে কোনো দোষ দিল, তারমানে এই না আমি তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করবো। তবে হতে পারে কোনো বন্ধুকে জিজ্ঞেস করবো- ব্যাপার কী? এই বিষয়ে কিছু জানো নাকি!”
যদি বন্ধুটি বলে তার প্রাক্তন ছিল ভয়ঙ্কর তবে আপনি জানলেন আপনার সঙ্গী সৎ। তবে সেই বন্ধু যদি কোনো ধারণাই না পায়, কেনো দোষ দেওয়া হচ্ছে, এক্ষেত্রে বিরতি নিয়ে চিন্তা করার বিষয় চলে আসে।
“যা দেখছেন সেটার সাথে ‘গাট ফিলিংস’কেও প্রাধান্য দিন সব সময়”- পরামর্শ দেন শার্লট।
ছবি সৌজন্যে: কে ক্র্যাফট।
আরও পড়ুন